Thank you for trying Sticky AMP!!

লিগের পারফরম্যান্স দিয়ে বিশ্বকাপ দলে?

ঘরোয়া ক্রিকেটই এখনো স্বপ্ন দেখায় ক্রিকেটারদের। ছবি: বিসিবি
>মাশরাফি গুরুত্ব না দিলেও ঢাকা লিগকে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার মঞ্চই মনে করেন এখানে পারফর্ম করে যাওয়া ক্রিকেটাররা।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে ৬০.৫৫ গড়ে ৫৪৫ রান করে সবার ওপরে মোহামেডানের রকিবুল হাসান। আবাহনীকে বেশ কটি ম্যাচ একক নৈপুণ্যে জেতানো জহুরুল ইসলাম ২ সেঞ্চুরিসহ করেছেন ৫৩১ রান। আবার প্রাইম ব্যাংক অধিনায়ক এনামুল হক ৫১১ রান নিয়ে সবচেয়ে বেশি রান করাদের তালিকায় আছেন ৩ নম্বরে। টানা দুই সেঞ্চুরি করা সাইফ হাসানও করেছেন ৫০০-এর বেশি রান। বোলারদের তালিকায় ২৭ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে আরেক অভিজ্ঞ ফরহাদ রেজা দলকে জিতিয়ে চলেছেন সেই ডিপিএল টি-টোয়েন্টি থেকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন পারফরম্যান্সের পরের ধাপ হিসেবে নিজেদের নিশ্চয়ই জাতীয় দলেই দেখতে চাইবেন এই ক্রিকেটাররা। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় আদৌ কি সেটা সম্ভব?

বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফিই যেমন ঢাকা লিগের পারফরম্যান্স নিয়ে খুব একটা উচ্ছ্বসিত হতে রাজি নন। সপ্তাহ দুয়েক আগে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানের দূরত্বটা বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘অনেকবার আমি দেখেছি যে এখানে কেউ দিনের পর দিন সেঞ্চুরি করেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গিয়ে ধুঁকেছে। এখানে উইকেট বলেন বা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মনোভাব—কোনোটাই তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কাছাকাছি নয়।’

বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের অবস্থান আবার এ ব্যাপারে ভিন্ন। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সটা তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখেন বলেই মনে হচ্ছে। গত পরশুই যেমন মিনহাজুল বলেছেন, ‘ফর্ম অবশ্যই বিবেচ্য বিষয়। খেলোয়াড় যখনই যেই মঞ্চেই খেলতে যাক না কেন, বিশেষ করে ২০১৯ বিশ্বকাপে যখন খেলতে যাবে, সব সময় কিন্তু একটা আত্মবিশ্বাসের মধ্যে থাকতে হবে। ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার, সাথে যদি রান বা উইকেট থাকে, তাহলে কিন্তু ওই খেলোয়াড় ভালো পজিশনে থাকে।’

আপাতত অধিনায়ক-নির্বাচকের এই বিপরীতমুখী চিন্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে ইয়াসির আলী, সাইফ হাসানের মতো তরুণেরা। ইয়াসির বিপিএল থেকে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন ঢাকা লিগেও। ১০০.৯৫ স্ট্রাইক রেট আর ১০৫.৭৫ স্ট্রাইক রেটে ৯ ইনিংসে ৪২৩ রান করেছেন ব্রাদার্সের এই ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপের জন্য ৩০ জনের প্রাথমিক দলে আছেন তিনি। ঢাকা লিগকে জাতীয় দলের আগের সোপান হিসেবে দেখেন কি না, এমন প্রশ্নে কাল প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘ঢাকা লিগই তো আমাদের মতো তরুণ ক্রিকেটারদের নিজেকে চেনানোর মঞ্চ। আমার নামটা আলোচনায় যে আসছে, সেটি তো এই টুর্নামেন্টে ভালো করছি বলেই। আমাদের কাজ হলো এই মঞ্চটাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো। জাতীয় দলে ডাকার সিদ্ধান্ত তো নির্বাচকদের।’

ইয়াসির না হয় তরুণ, নিজেকে চেনাতে তাঁর কাছে ঢাকা লিগের মতো ঘরোয়া টুর্নামেন্টের বিকল্পও নেই। লিগে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৭ উইকেট নেওয়া ফরহাদ রেজা, ৫৩১ রান করা জহুরুল ইসলাম বা ৫১১ রান করা এনামুলরা জাতীয় দলে একটা সময় খেলেছেনই। ঘরোয়া ক্রিকেটে সেরা পারফরম্যান্স করে আবার জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্নটা তাঁরাও নিশ্চয়ই দেখেন। কিন্তু বাস্তবতা তাঁদের কতটা সমর্থন করছে?

ঢাকা লিগে ৭ ম্যাচ খেলে একটিও ফিফটি করতে পারেননি ওপেনার সৌম্য সরকার। অথচ জাতীয় লিগ থেকে টানা রান করে চলা এনামুল টানা তিন সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন এবারের লিগে। তবু তিনি বিবেচনায় নেই! পারফর্ম করেও বিবেচনায় না আসতে পারাটা হতাশারও তো জন্ম দেয়। এনামুল অবশ্য আক্ষেপ-টাক্ষেপের কথা বেশি বলতে চাইলেন না। শুধু বললেন, ‘আজ হয়তো পারফর্ম করেও ডাক আসছে না। কিন্তু কালও যে আসবে না, তা তো নয়। আমার কাজ যেখানে সুযোগ পাচ্ছি সেখানেই পারফর্ম করা। পারফর্ম করলে হয়তো একসময় বিবেচনায়ও আসব।’

হতাশার কথা স্বীকার করে নিয়ে ফরহাদ রেজার কণ্ঠেও এনামুলের সুর, ‘ঢাকা লিগ ছাড়া আমাদের তো আর কোথাও জায়গা নেই। আমি ভালো না খেললে দোলেশ্বরও আমাকে নেবে না। আর পারফর্ম করছি বলেই তো ৩০ জনের দলে ভাবা হয়েছে আমাকে।’ জহুরুলের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে যদিও কোনো আলোচনা নেই, তবে তিনি যা বললেন তাঁরও অর্থ দাঁড়ায় একই রকম—আশা-ভরসার যা কিছু সব এখনো ওই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ঘিরেই।