Thank you for trying Sticky AMP!!

লিটন দাস

নাম

লিটন কুমার দাস

জন্ম

অক্টোবর ১৩, ১৯৯৪, দিনাজপুর

ধরন

উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান

অভিষেক

বনাম ভারত, জুন ১৮, ২০১৫

বড় ভাই বাপ্পী দাস দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলেন। ফলে, ক্রিকেটার হওয়ার প্রেরণাটা যে পেয়েছিলেন ভাইয়ের কাছ থেকেই। কিন্তু যদি বলা হয় মূল কারিগরের কথা, সেই কৃতিত্বের মূল দাবিদার দিনাজপুর জেলা ক্রিকেট দলের কোচ আবু সামাদ। ক্রিকেটের সহজপাঠ লিটন দাস যে নিয়েছিলেন তাঁর কাছ থেকেই!

লিটন দাসের ক্রিকেট জীবন শুরু হয় প্রচেষ্টা ক্রিকেট ক্লাবের হাত ধরে। সেখান থেকেই পরে ভর্তি হন বিকেএসপিতে। বিকেএসপি যুগের শুরু থেকেই রানবন্যায় স্কুল এবং বয়সভিত্তিক সব দলে সহজেই নজর কাড়েন লিটন। একে একে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ এবং অনূর্ধ্ব-২১ দলে। বলাই বাহুল্য, দুর্দান্ত সব ইনিংসে অনায়াসেই নিজের পরিচিতি বাড়িয়ে নিয়েছেন বহুগুণে। পাশাপাশি উইকেটের পেছনে দক্ষতাও ছিল চোখে পড়ার মতো।

২০১১ সালের তাঁর অভিষেক হয়ে যায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। প্রথম মৌসুমে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে না পারলেও পরের মৌসুমে একটি শতক এবং একটি অর্ধশত রানের ইনিংস খেলে নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, সুযোগ মেলে ২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচ খেলে ১ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৬২ রান করলেন, যা এনামুল হকের পর বাংলাদেশের পক্ষে সেই টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। পরে ২০১৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও জমকালো পারফরম্যান্স দেখালেন। মাত্র ৪ ইনিংসে ২০০ রান, স্ট্রাইকরেট ৯৬.৬১। অন্তত ৩০ রান করেছেন, এমন মানদণ্ডে দলে তাঁর স্ট্রাইকরেটই ছিল সবচেয়ে বেশি। উইকেটের পেছনে পারফরম্যান্সও ছিল দারুণ, ৪ ক্যাচের পাশাপাশি স্ট্যাম্পিং ২টি।

এই টুর্নামেন্টের পরই সবার চোখে পড়লেন লিটন। ডিপিএলের ২০১৪-১৫ মৌসুমে হলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক, ১ শতক ও ৫ অর্ধশতকে করলেন ৬৮৬ রান। শুধু কি তাই? উইকেটের পেছনেও ছিলেন দারুণ উজ্জ্বল। ১৬ ম্যাচে ২২ ক্যাচ এবং ৭ স্ট্যাম্পিং করে হলেন ডিপিএলের সেরা উইকেটরক্ষক। তবে নির্বাচকদের রাডারে ধরা দিলেন বটে, সুযোগ মিলল না।

ডিপিএলের ফর্ম বয়ে নিয়ে এলেন জাতীয় ক্রিকেট লিগেও। এর আগে আর কোনো ব্যাটসম্যান জাতীয় ক্রিকেট লিগে এক মৌসুমে চারটি শতকের বেশি করতে পারেননি। কিন্তু লিটন ভেঙে দিলেন যত পুরোনো রেকর্ড, পাঁচ শতকে ৮৫.৩৩ গড়ে করলেন ১০২৪ রান। বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের (১০১২ রান) ১৩ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে দিলেন ২ ইনিংস কম খেলেই!

এমন পারফরম্যান্সের পর জাতীয় দলে সুযোগ আসাটা ছিল অবশ্যম্ভাবী। ৩০ জনের প্রাথমিক স্কোয়াডে তাঁর নামও ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ২০১৯ বিশ্বকাপের দলে তাঁর নাম আসেনি। বিশ্বকাপের পর ছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডেও, তবে সেবারও মূল একাদশে সুযোগ মিলল না।

সেই সুযোগটা এল সাদা পোশাকে, যেদিন ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হলো লিটনের। দলের ক্রান্তিলগ্নে ব্যাটিংয়ে নেমে দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ে মাত্র ৪৫ বলে করলেন ৪৪ রান, ভূয়সী প্রশংসা পেলেন প্রখ্যাত সব ক্রিকেট বিশ্লেষকদের থেকে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও করেন আরেকটি অর্ধশতক, টেল-এন্ডারদের নিয়ে ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য দেখালেন এক ঝলক। লিটনকে তখন দারুণ এক সংযোজন বলে মনে হচ্ছিল।

কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন হলো সীমিত ওভারের ক্রিকেটে। একের পর এক ব্যর্থতায় একাদশ চিন্তা থেকে যেন কিছুটা দূরেই সরে গেলেন। তবে ফিরলেন দারুণভাবে, ২০১৮ নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ১৯ বলে ৪৩ রানের ঝলমলে ইনিংসের মাধ্যমে নিজের ভয়াল রূপটাকে প্রথমবারের মতো নিয়ে এলেন চোখের সামনে। এরপর আবারও ব্যাট হাতে অধারাবাহিকতার চিরাচরিত অসুখ ঘিরে ধরল তাঁকে।

জ্বলে উঠলেন দলের সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তে, ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপ ফাইনালে ১২১ রানের দাপুটে এক শতক হাঁকিয়ে ভারতকে অপ্রস্তুত করে দিলেন। সেই ম্যাচে এতটাই অসহায় করে রেখেছিলেন ভারতের গোটা বোলিং অ্যাটাককে, বোলাররা বল ফেলার জায়গা পর্যন্ত খুঁজে পাচ্ছিল না। এই ইনিংসের মাধ্যমেই তামিমের সঙ্গী হিসেবে নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করে নিলেন লিটন।

সৌম্য সরকারের অতিমানবীয় ফর্মের বদৌলতে এই মুহূর্তে লিটন দাসের ভূমিকা মূলত ‘ব্যাকআপ’ ওপেনার। তবে সুযোগ পেলেই বারবার প্রমাণ করছেন নিজের সামর্থ্য। যেকোনো মুহূর্তে দলের প্রয়োজনের সর্বোচ্চ উজাড় করে দিতে পারার সামর্থ্য যে তাঁর মধ্যে রয়েছে ষোলো আনা, এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজই ছিল এর প্রমাণ।

[সব তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত]