Thank you for trying Sticky AMP!!

শরীরের আঘাতের পর মনেও আঘাত সাইফউদ্দিনের

সাইফউদ্দিন, বিশ্বকাপে দলের সেরা বোলার। ছবি: প্রথম আলো

কোড অব কনডাক্টের শেকল পায়ে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের সব শুনে যাওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। যতই মানসিকভাবে শক্ত থাকার চেষ্টা করুন, শক্ত থাকা আসলেই কঠিন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারার পর যখন প্রশ্ন উঠেছে তাঁর চোটের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে, শুনে বেশ ভেঙে পড়েছেন। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাছে বেধড়ক মার খাওয়ার ‘ভয়ে’ একজন বোলার খেলতে চাচ্ছেন না—এ অভিযোগ সাইফউদ্দিনের মতো একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটারের মেনে নেওয়া সত্যি কঠিন।

‘মার খাওয়ার ভয় তাঁর মধ্যে যদি এতই কাজ করবে, তাহলে তো ২০১৭ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ডেভিড মিলারের কাছে এক ওভারে ৫ ছক্কা খাওয়ার পরই ও খেলা ছেড়ে দিত! এর পর সে নিজের বোলিং নিয়ে অনেক কাজ করেছে, অনেক উন্নতি করেছে বলেই তো বিশ্বকাপ খেলছে। এখন পর্যন্ত দলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি’—নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্রিকেটার বলছিলেন কাল।

সাইফউদ্দিন পিঠের চোট বয়ে বেড়াচ্ছেন বিশ্বকাপের শুরু থেকেই। ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে খেলা নিয়ে ছিল সংশয়। ম্যাচের আগের দুদিন ঠিকমতো অনুশীলনই করতে পারেননি। সাইফউদ্দিন এ ম্যাচ খেলতে পারবেন না—এটাই ধরে নিয়েছিলেন সবাই। অথচ অবাক করে ম্যাচটা তিনি খেলেছেন। ৫৭ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন। পরে জানা গেল, ইনজেকশন নিয়ে খেলেছেন। শতভাগ ফিট না হয়েও কীভাবে খেললেন, পরদিন জানতে চাইলে সাইফউদ্দিন বলেছিলেন, ‘মানসিক জোরে খেলেছি। আর দেশের হয়ে ম্যাচ খেলার অনুভূতিটাই অন্যরকম। সেটা বলে বোঝাতে পারব না।’

যে ক্রিকেটার অর্ধেক ফিট থেকেও দেশের হয়ে ম্যাচ খেলতে নেমে যান, তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ! সাইফউদ্দিন চাইলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটাও না খেলতে পারতেন। অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার-অ্যারন ফিঞ্চদের চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলার তাঁর কাছে বেশি ‘আতঙ্ক’ হওয়ার কথা! দুই বছর আগে এ প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান তাঁর ক্যারিয়ারটাই হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন!

শতভাগ ফিট না হয়েও সাইফউদ্দিন বিশ্বকাপে নিজেদের পরের তিনটি ম্যাচ খেলেছেন। এটা ঠিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে তাঁকে আবারও ইনজেকশন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ইনজেকশন দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেছেন। সেটির রেশ না কাটতেই আবারও ইনজেকশন দিতে আপত্তি ছিল সাইফউদ্দিনের। তাঁর মনে হয়েছে ২০ দিনের মধ্যে আবারও ইনজেকশন দিলে একটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবেন ।

বিশ্বকাপে এসে সাইফউদ্দিন পিঠে চোট পেলেও আগে থেকেই তিনি টেনিস এলবোর সমস্যায় ভুগছিলেন। নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ফেরার পর ফিজিওর পরামর্শে আরও কয়েকজন ক্রিকেটারের মতো তাঁকেও দুই সপ্তাহের ছুটি দিয়েছিলেন কোচ স্টিভ রোডস। ছুটি কাটাতে সাইফউদ্দিন চলে যান ফেনীর নিজ বাড়িতে। কিন্তু দুই দিন না থাকতেই ঢাকা থেকে জরুরি তলব। আবাহনীর হয়ে প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি খেলতে ফিরে আসেন ঢাকায়। প্রায় বিরতিহীনভাবে খেলেন প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগেও।

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে রওনা দেওয়ার আগে জানা গিয়েছিল বোলিং-ব্যাটিংয়ে সমস্যা না হলেও দূর থেকে থ্রো করতে পারছেন না। সে জন্য লিগের খেলায় নিয়মিত ৩০ গজের ভেতরে ফিল্ডিং করে গেছেন। এখন সাইফউদ্দিনের চোট নিয়ে এত কথা, আবাহনীর হয়ে খেলার সময় কেন তাঁকে পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া হয়নি? যে দলের হয়ে চোট নিয়ে লিগ খেলে গেছেন, সেই দলের কোচ খালেদ মাহমুদ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ছিলেন আবাহনীতে সাইফউদ্দিনের সতীর্থ।

কাল সকালে নটিংহাম ছাড়ার আগে দলের সঙ্গে থাকা বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান আকরাম খান অবশ্য সাইফউদ্দিনের পাশে দাঁড়ালেন, ‘পরের ম্যাচে মোসাদ্দেকের খেলা যতটা নিশ্চিত, সাইফউদ্দিনের কিন্তু ততটা নিশ্চিত নয়। ওর সমস্যা আছে বলেই খেলেনি। আর যদি কোনো খেলোয়াড় বলে তার ব্যথা আছে, সেটাকে গুরুত্ব দিতেই হবে।’

আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের বাইরে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় চাইলেও সাইফউদ্দিনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশের সুযোগ নেই। তবে তাঁর বিষণ্ন চেহারা বলে দিচ্ছিল, তিনি ভালো নেই! শুধু এতটুকুই বললেন, ‘অভিযোগ নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। এটা নিয়ে আমার কিছু বলারও নেই। চোটে পড়ে খেলতে পারিনি, এটাই আমার জন্য বেশি কষ্টের।’