Thank you for trying Sticky AMP!!

শুধু জয়ই প্রাপ্তি নয়

ওয়ানডেতে এর আগেও তিনবার সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছেন, তার পরও তিন অঙ্ক ছোঁয়া বলে কথা! মুশফিকুর রহিম তাই ফেটে পড়লেন আনন্দে। কাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে l ছবি: শামসুল হক

জয়ই শেষ কথা। তবে শেষ কথায় যাওয়ার আগে কথা তো আরও থাকে। বিশেষ করে জিম্বাবুয়েকে হারানোটা যখন আর উৎসব করার মতো ঘটনা নয়, তখন তো সে রকম ‘কথা’ আরও বেশি প্রয়োজন। জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে উৎসব হবে তখনই যখন জয়ের মধ্যে মিশে থাকবে বাড়তি কিছু। অথবা সাকিব আল হাসানের ভাষায় জয়টা হতে হবে ‘দাপুটে’।
১৪৫ রানের জয় দাপুটে তো অবশ্যই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রানের ব্যবধানে এটাই সবচেয়ে বড় জয়! কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পাওয়া সেই জয়ে বাড়তি কিছুও থাকল। ওয়ানডেতে মুশফিকুর রহিমের চতুর্থ সেঞ্চুরি আর সাকিবের প্রথম ৫ উইকেট নেওয়ার সাফল্য তালিকার ওপরের দিকেই থাকবে। ১২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়েও মুশফিক-সাব্বিরের ১১৯ রানের পঞ্চম উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই, তিন শ রানের উইকেটে ২৭৩ রানের পুঁজিকেও বোলারদের ‘অনেক নিরাপদ’ প্রমাণ করে মাঠ ছাড়া—সবই বলছে, এটা জয়ের চেয়ে বেশি কিছু! জিম্বাবুয়েকে দাপটে হারানোর লক্ষ্য অন্তত প্রথম ওয়ানডেতে ভালোভাবেই পূরণ হলো।
সৌম্যের চোটের সুযোগে ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী লিটনের দুর্ভাগ্য, এই লক্ষ্য পূরণে ব্যাট হাতে তাঁর কোনো অবদান থাকল না। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই দ্বিধান্বিত শট খেলে পয়েন্টে ক্যাচ। তবে তামিমের ব্যাট শুরুতেই ভয় ঢুকিয়ে দিল জিম্বাবুয়ের বোলারদের মনে। ৪০ রান করে আউট হয়ে গেলেও সাহসের ব্যাটনটা দিয়ে গেলেন মুশফিকের হাতে। কিন্তু মুশফিককে সংগত দেবেন কে? সিকান্দার রাজাকে অদ্ভুত সুন্দর এক ফ্লিকে বাউন্ডারি মারার পরের বলেই যে অযথা ডাউন দ্য উইকেটে যাওয়ার পাগুলে সিদ্ধান্তে স্টাম্পড হয়ে গেলেন সাকিব!
কে জানে, এটা হয়তো ক্রিকেট-বিধাতারই একটা খেলা ছিল! বল হাতে তো সাকিবের নায়ক হওয়ার সুযোগ থাকছেই, ব্যাট হাতে মুশফিকের পার্শ্বচরিত্র হোক অন্য কেউ। সাব্বির রহমানের আবির্ভাব এখানেই। যেকোনো পরিস্থিতিতে চাতুর্যপূর্ণ শট খেলার চেষ্টা তাঁর স্বভাবজাত। বোলারের দিকে থাকবে ইগলের দৃষ্টি, শরীরী ভাষায় চিতার ক্ষিপ্রতা। মুশফিকের সঙ্গে জুটিতে করে ফেললেন ওয়ানডেতে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি। দুই ছক্কা ও চার বাউন্ডারিতে সাব্বিরের ৫৮ বলে ৫৭ রানের ইনিংসটা শেষ হতেই ছোটখাটো একটা বিপর্যয়। ৪ উইকেটে ২৪২ থেকে মাত্র ৯ বলের ব্যবধানে ৭ উইকেটে ২৪৩! মাশরাফি-আরাফাত সানির ছোট ছোট দুটি ঝড় তারপরও রানটাকে ২৭০-এর ওপরে নিয়ে গেল। দুজন মিলে মুজারাবানির শেষ ওভারেই নিয়েছেন ১৮।
ব্যাট হাতে তবু আসল নায়ক মুশফিকই। ৫২ বলে ফিফটির পর ১০৪ বলে সেঞ্চুরি—রান বলের হিসাবই বলে দিচ্ছে ব্যাটিংয়ের আদ্যোপান্ত কতটা আক্রমণাত্মক ছিল তাঁর ব্যাট। ওয়ানডেতে আগেও তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন। সেই তিন সেঞ্চুরি দিয়েছিল তিন রকম অনুভূতি। অভিষেকের পাঁচ বছর পর ২০১১-তে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়ে ম্যাচ শেষে কেঁদেছিলেন। জিততে জিততেও যে হেরে গিয়েছিল দল! সেই হারে মুশফিকের আক্ষেপটাই বেশি ছিল, কারণ ইনিংসের চার বল বাকি থাকতে যখন তিনি শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন, দল তখন জয় থেকে মাত্র ৫ রান দূরে। গত বছর ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির ম্যাচেও দল হেরেছে। তবে তীরে এসে তরি ডোবার আক্ষেপ ছিল না। কালকের আগে সর্বশেষ সেঞ্চুরিটা করেছেন এ বছরই পাকিস্তানের বিপক্ষে। ৭৯ রানে জেতা সে ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন তামিমও। তবে মাত্র ৭৭ বলে ১০৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন মুশফিক। কাল রাতেও ১০৭ রানের ইনিংসের সৌজন্যে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার উঠেছে তাঁর হাতেই।
ম্যাচসেরা হওয়ার দাবি অবশ্য সাকিবও জানাতে পারতেন। জিম্বাবুয়েকে ১২৮ রানে গুঁড়িয়ে দেওয়ায় যে সবচেয়ে বড় অবদান এই বাঁহাতি স্পিনারেরই! টেস্টে ১৪ বার পাঁচ বা তার বেশি উইকেট পাওয়ার সাফল্য থাকলেও ওয়ানডেতে সেটা অধরা ছিল এত দিন। ছয়বার ৪ উইকেট পেয়ে থেমে গেছেন, ৫ উইকেট পাওয়ার চেষ্টা সফল হলো কাল। এই ৫ উইকেটসহ ওয়ানডেতে সাকিবের উইকেট এখন ২০৬টি। আর ১ উইকেট পেলেই ধরে ফেলবেন বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বোচ্চ ওয়ানডে উইকেট পাওয়া আরেক বাঁহাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাককে (২০৭)।
সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডটা দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নতুন করে লেখা হয় কি না, সেটা দেখতে কাল তাকিয়ে থাকতে হবে সাকিবের দিকে। তবে প্রথম ওয়ানডেতে সবার দৃষ্টিজুড়ে ছিলেন আগের দুই সিরিজের বিস্ময়বালক মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু সাকিব-মুশফিকের দিনে নিষ্প্রভ এই বাঁহাতি পেসার। ৪ ওভারের প্রথম স্পেলে মাত্র ১৪ রান দিলেও দুই ওভারের পরের স্পেলে দিয়ে দিলেন ১৩। নতুন বলেই স্পিনারকে আনার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল হাথুরুসিংহের। সে দায়িত্ব পাওয়া আরাফাত সানি রান দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃপণতা দেখালেও উইকেট পাননি। সাকিবের পর এদিক দিয়ে মাশরাফির ভূমিকাই বেশি। ডেঙ্গু থেকে উঠে এখনো কিছু শারীরিক সমস্যা বোধ করছেন। ২১ ওভার পর্যন্তও বল হাতে না হওয়ায় তো মনে হচ্ছিল কাল বলই করবেন না। চিন্তাটাকে ভুল প্রমাণ করে ২২তম ওভারেই বোলিংয়ে মাশরাফি। টানা ৬ ওভারের স্পেলে ১৩ রানে ২ উইকেট—নিজের কাছে কখনো না-হারা মাশরাফি জিতলেন কালও।
জিতল তাঁর দলও, যে জয়ে ‘জয়’ ছাড়াও প্রাপ্তি আছে অনেক।

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৩/৯
জিম্বাবুয়ে: ৩৬.১ ওভারে ১২৮
ফল: বাংলাদেশ ১৪৫ রানে জয়ী