Thank you for trying Sticky AMP!!

আগামী দিনে ‘সাকিব-আফ্রিদি’ হতে চান রশিদ খান

রশিদ খান পূর্নাঙ্গ এক অলরাউন্ডার হতে চান।

সময়ের সেরা লেগ স্পিনারদের তালিকা করলে তাঁর নাম ওপরের দিকেই আসবে। এ সময়ে রশিদ খানের চেয়ে ভালো লেগ স্পিনার আর কজনই-বা আছে? কিন্তু শুধু এই পরিচয়েই আর মন ভরছে না আফগানিস্তানের ২২ বছর বয়সীর। তাঁর ইচ্ছা, শুধুই স্পিনার পরিচয় ছাপিয়ে তিনি হবেন অলরাউন্ডার। তা-ও যেমন-তেমন নয়, পূর্ণাঙ্গ অলরাউন্ডার, দলের ব্যাটিং কিংবা বোলিং—দুদিকেই যিনি হয়ে উঠতে পারবেন বড় ভরসা।

এ সময়ের ক্রিকেটে একটা দলে ব্যাট হাতে কিংবা স্পিনার হিসেবে—দুই ভূমিকায়ই উজ্জ্বল, এমন অলরাউন্ডারদের হিসাব করলে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের নামই সবার আগে আসবে। আসতে পারে ভারতের রবীন্দ্র জাদেজার নামও। সময়ের ভেলায় চড়ে একটু পিছিয়ে গেছে পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির নামও আসতে পারে। যদিও ধুমধাড়াক্কা আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য ক্রিকেটে অন্য রকম মর্যাদা পেলেও পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের ভরসা কখনো হতে পারেননি আফ্রিদি। রশিদ খানেরও ইচ্ছা, আফ্রিদি-সাকিবদের মতোই একজন হবেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে গতকাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরই ইচ্ছেটার কথা জানিয়েছেন রশিদ। শুধু তৃতীয় ম্যাচেই নয়, সিরিজে দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে দুটিতেই দারুণ করেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছিলেন ৫৫ রান। সেদিন রহমানউল্লাহ গুরবাজের সেঞ্চুরি সব আলো কেড়ে নিলেও রশিদের ফিফটির সুবাদেই শেষ পর্যন্ত ২৮৭ রান করতে পেরেছিল আফগানিস্তান। ম্যাচ জিতেছিল ১৬ রানে।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে কদর বাড়ছে রশিদ খানের।

আর কাল তৃতীয় ওয়ানডেতে নয় নম্বরে নেমে রশিদ করেছেন ৪০ বলে ৪৮ রান। ১৬৩ রানে ৭ উইকেট হারানো আফগানরা রশিদের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সৌজন্যেই শেষ পর্যন্ত ২৬৬ রান করতে পেরেছে। এরপর বোলিংয়েও দারুণ উজ্জ্বল রশিদ। ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে আয়ারল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ২৩০ রানে। ২০২৩ বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে বিবেচিত ওয়ানডে সুপার লিগে তাতে ৩ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট হলো আফগানিস্তানের। সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে থাকা বাংলাদেশ (৩ ম্যাচে) ও তিনে থাকা ইংল্যান্ডেরও (৬ ম্যাচে) পয়েন্ট ৩০-ই। রানরেটে পিছিয়ে আফগানরা আছে পাঁচ নম্বরে।

ম্যাচের পরই ভবিষ্যতে নিজেকে পূর্ণাঙ্গ অলরাউন্ডার হিসেবে দেখতে চান কি না, প্রশ্নে ইচ্ছেটার কথা জানালেন রশিদ, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। নিজেকে আগামী দিনে অলরাউন্ডার হিসেবেই দেখি। আগেও বলেছি, আমি ক্যারিয়ার শুরু করেছি একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে, কিন্তু পরে বোলিং নিয়ে বেশি কাজ করেছি। এখন আবার ব্যাটিং নিয়ে কাজ করছি। অনেক দিক আছে উন্নতি আনার মতো। আগামী দিনে আমি যথাযথ একজন অলরাউন্ডার হতে চাই।’

ব্যাটিংয়ে নিচের দিকে নেমে এভাবে যদি ৩০-৪০ কিংবা ৫০ রানের ইনিংস খেলতে পারেন রশিদ, পাশাপাশি বল হাতে সব সময়ের মতো আলো ছড়াতে পারেন, আফগানিস্তানের ক্রিকেট দলের খোলনলচেই বদলে দেবে সেটি। রশিদ অবশ্য শুধু দলের প্রয়োজনে সাড়া দিতে পারলেই খুশি, ‘দলের যখনই আমাকে দরকার হবে, আমাকে তখনই ভালো খেলতে হবে। শেষের দিকে যখন আমাদের ৪০-৫০ রান দরকার হবে, তখন ক্রিজে থাকলে আমাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। হ্যাঁ, আমি নিজেকে একজন যথাযথ অলরাউন্ডার হিসেবে তৈরি করার কথা ভাবছি। আর যখনই সুযোগ পাব, সেটা ব্যাটিংয়ে আট নম্বরে হোক বা নয় নম্বরে, আমার এই মানসিকতা থাকতে হবে যে আমার দরকারি সব দক্ষতা আছে, প্রতিভা আছে, আমাকে শুধু মাঠে নেমে সেটা দেখাতে হবে।’

অলরাউন্ড ক্রিকেটার হয়ে উঠছেন আফগান ক্রিকেটার।

বোলিংয়ের ক্ষেত্রে ২০ ওভার কিংবা ৫০ ওভার—সাদা বলের ক্রিকেটে সংস্করণ যা-ই হোক, এই মনোভাব নিয়েই খেলে যেতে চান রশিদ, ‘আমার মনে হয় না কোন সংস্করণে খেলছি, সেটা হিসাব করে আমার মনোভাব বদলানোর দরকার আছে। কারণ, আমি বেশির ভাগ সময়ই ইনিংসের শেষ দিকে বোলিং করি। ওই সময়টাতে দলগুলো, খেলোয়াড়েরা বোলারদের আক্রমণ করে, রান করতে চায়।’ সেটার পেছনে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘দেখবেন আমি সব সময় (ওয়ানডেতে) আমার ১০ ওভারের শেষ চারটি করি ইনিংসের শেষ ১০ ওভারের সময়ে। এর আগে দুই-তিন ওভারের ছোট ছোট স্পেলে বোলিং করি। এটা টি-টোয়েন্টি নাকি ওয়ানডে ম্যাচ সেটা ভাবি না, শুধু সহজভাবে বোলিং করে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমার পরিকল্পনা জানা থাকে। সংস্করণ যা-ই হোক, সেখানে কোন লেংথে বোলিং করছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমি যদি নিজের সেরা বলটা করি, সেটা যে সংস্করণের ক্রিকেটই হোক, বলটা সেরাই থাকবে।’

আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের মধ্যে রশিদ আর মোহাম্মদ নবীরই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগে কদর আছে। তবে রশিদই একমাত্র আফগান ক্রিকেটার, যিনি বিশ্বজুড়ে সব ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগে সমানভাবে সমাদৃত। যেমনটা বলা যায় বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের ক্ষেত্রেও। ভিন্ন কন্ডিশন, ভিন্ন উইকেট, ভিন্ন সংস্কৃতিতে এভাবে ক্রিকেট খেলে বেড়ানোও তাঁর ব্যাটিং-বোলিংয়ে সাহায্য করেছে বলে জানালেন।

তবে কাল তৃতীয় ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করা আয়ারল্যান্ড ব্যাটসম্যান পল স্টার্লিংয়ের প্রশংসা করতে গিয়ে রশিদ খান নিজেকেই ‘সেরা’ দাবি করেছেন কি না, সে প্রশ্ন উঠে যেতে পারে। ক্রিকবাজে রশিদকে উদ্ধৃত করে লেখা কথায় তো সে রকমই ইঙ্গিত, ‘ও (স্টার্লিং) সিরিজজুড়েই দারুণ খেলেছে। স্পিনটা খুব ভালো খেলে ও। আর এই পিচে বিশ্বের সেরার বিপক্ষে খেলে আপনি যখন সেঞ্চুরি করবেন, সেটা দারুণের চেয়েও বেশি কিছু।’

সেরা বলতে কি নিজেকেই বুঝিয়েছেন রশিদ?