Thank you for trying Sticky AMP!!

সাকিব কেন পেসার নিতে চান না

পেসারদের যোগ্যই মনে করেননি সাকিব আল হাসান। ছবি: প্রথম আলো
>

বিসিবি সভাপতি বলছেন, একাদশে একজন পেসার রাখা উচিত ছিল। কিন্তু সাকিবের যুক্তি হচ্ছে, ‘অকেজো’ পেসার নিয়ে লাভ কী!

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ, ইবাদত হোসেনের পানি টানার ছবি বেশ আলোচিত হয়েছে। পেসারশূন্য একাদশ সাজানো নিয়ে নানা কথাও হয়েছে। কাল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পর্যন্ত বলেছেন, আফগান ব্যাটসম্যানরা স্পিন খেলে অভ্যস্ত, একাদশে অন্তত একজন পেসার রাখা উচিত ছিল।

সাকিব আল হাসান এখনো তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়—কোনো পেসার না খেলিয়ে চার স্পিনার খেলানোই তিনি যৌক্তিক মনে করছেন। দুর্দান্ত ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে তুলনামূলক কম স্বচ্ছন্দ আফগানিস্তান কিংবা এশিয়ার কোনো দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ অধিনায়ক কেন পেসার খেলাতে উৎসাহিত বোধ করেন না, কাল সেটির পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন সাকিব, ‘জায়গাটার জন্য পেসারদের যোগ্য (ডিজার্ভ করতে হবে) হতে হবে তো নাকি? পেসারদের পরিসংখ্যান দেখেছিলাম। আমাদের পেসারদের ইকোনমি ৪.৪১। ওরা যদি পুরো ৯০ ওভার বোলিং করে, তাহলে এক দিনেই রান দেবে ৪০০! প্রথম দিনেই তাহলে আমরা টেস্টের বাইরে। ইকোনমি রেট যদি ২.৮ কিংবা ২.৯ থাকে এবং সে রকম স্ট্রাইক রেট থাকলে তখনই না আমরা ওদের নিতে পারব। বোলার যদি আমাদের কাজেই না আসে, তাকে নিয়ে লাভটা কী?’

সাকিবের এ যুক্তিকে কী অগ্রাহ্য করার উপায় আছে। যদি আগেই জানা হয় অস্ত্র ভোঁতা, সেটি কোন সাহসে ব্যবহার করতে চাইবেন একজন অধিনায়ক? সাকিব ঠিক কোন পরিসংখ্যানের কথা বলেছেন, সেটি অবশ্য পরিষ্কার নয়। তবে টেস্টে বাংলাদেশের পেসারদের ইকোনমি বাকি ১১টা দলের চেয়ে যে বাজে এতে কোনো সন্দেহ নেই। টেস্টে পেসারদের সবচেয়ে ভালো ইকোনমি অস্ট্রেলিয়ার—২.৭০। সবচেয়ে অনুজ্জ্বল বাংলাদেশের, ওভারপ্রতি দিয়েছে ৩.৬৬ রান। বোলিং গড় সবচেয়ে ভালো আয়ারল্যান্ডের—২০.৫০। আইরিশরা অবশ্য মাত্রই শুরু করেছে টেস্ট। অভিজ্ঞ দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো গড় হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার—২৪.২২। এখানে করুণ দশা বাংলাদেশের ‘গতিময়’ বোলারদের, একটি উইকেট পেতে তাঁদের খরচ করতে হয়েছে ৫৭.৪৩ রান। স্ট্রাইকরেটেও সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশের পেসাররা। একটি উইকেট পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৯৩.৯ বল।

গত তিন বছরে নিজেদের মাঠে বাংলাদেশ দলের সাফল্য এনে দিয়েছেন স্পিনাররাই। ২০০ উইকেটের ১৮০ উইকেটই পেয়েছেন ঘূর্ণি বোলাররা। মাত্র ১৫ উইকেট পেসারদের। এই তিন বছরে প্রতিপক্ষের ৯০ শতাংশ উইকেটই এনে দিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। এ সময়ে টেস্টে যেটি আর কোনো দলের স্পিনাররা পারেননি । পছন্দের উইকেট, কন্ডিশন পেয়ে স্পিনাররা দুর্দান্ত বোলিং করবেন সেটিও ঠিক। কিন্তু গত ১৯ বছরে দেশের মাঠে কখনোই যে বাংলাদেশের পেসাররা ভালো করতে পারেননি। সবচেয়ে বাজে ইকোনমি তাঁদেরই, ৩.৫২। বাংলাদেশের মাটিতে সবচেয়ে ভালো ইকোনমি জিম্বাবুয়ের, ২.৪৮। বোলিং গড়ে সবচেয়ে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা, ২১. ২৬। বাংলাদেশে ইংলিশ পেসারদের পারফরম্যান্সও দুর্দান্ত —২১.৮০ গড়, ইকোনমি ২.৭৩। তবে স্ট্রাইকরেটে বাংলাদেশের মাঠে এগিয়ে ভারতীয় পেসাররা (৪০.০)। নিজেদের মাঠে বাংলাদেশের পেসারদের স্ট্রাইকরেটও বিবর্ণ। একটা উইকেট পেতে যদি অপেক্ষা করতে হয় ৯৫.১ বল, দিতে হয় ৫৫.৯০ রান—সাকিব কোন সাহসে একাদশে পেসার রাখবেন?

কিন্তু এভাবেই কি চলতে থাকবে? পেসারদের ওপর কখনোই বাংলাদেশ ভরসা করতে পারবে না? পারবে, কিন্তু তার আগে যে কিছু ‘শর্ত’ পূরণ করতে হবে। সাকিব আশাবাদী, এ শর্তগুলো পূরণ হলে বাংলাদেশও ভালো পেসার পাবে, ‘আমাদের যে নতুন পেস বোলিং কোচ আছে, সে প্রতিদিন পেসারদের নিয়ে কাজ করছে। যে পরিশ্রম করছে, তাতে মনে হচ্ছে, অচিরেই আমরা ভালো পেসার পেতে পারি। একটা টেস্ট ম্যাচ জিততে হলে আপনার সব ধরনের বোলার থাকতে হবে। রিস্ট স্পিনার থাকতে হবে। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো ঘণ্টায় ১৪০-১৫০ গতিতে বল করার একজন পেসার থাকতে হবে। একজন থাকবে যে সারা দিন এক জায়গায় বোলিং করবে, যেন রান না হয়। এক-দুটা এক্স ফ্যাক্টর থাকতে পারে। যত দিন এসব না হবে আমাদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে ম্যাচ জিততে হবে। যখন ওই পরিকল্পনা কাজে দেবে না হবে তত দিন এভাবেই যেতে হবে (আফগানিস্তানের বিপক্ষে যেটা হয়েছে)।’