Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।

সাকিব সোবার্সের চেয়েও সেরা, বলছে বিশেষ পরিসংখ্যানও

অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিব আল হাসানের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নেই। গত ১০ বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশসেরা এই অলরাউন্ডার নিজেকে বিশ্বসেরা হিসেবেও প্রমাণ করেছেন একাধিকবার।

যে সংস্করণের ক্রিকেটই হোক, সেটা আন্তর্জাতিক কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি অথবা কাউন্টি—প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই অলরাউন্ডার নিজের ছাপ রেখেছেন সগৌরবে। খেলার মাঠে মাঝেমধ্যে এমন সব কীর্তি করেন, প্রায় সময়ই গ্যারি সোবার্স, ইমরান খান, কপিল দেব, ইয়ান বোথাম, জ্যাক ক্যালিসদের সঙ্গে সাকিবের তুলনাটা চলেই আসে।

এবার সাকিবের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সবাইকে জানাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিজ্ঞানেরই একটি শাখা। পরিসংখ্যানের মাধ্যমে ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ক্রীড়া বিশ্লেষক অনন্ত নারায়ণন জানিয়েছেন, সোবার্স-ইমরান কিংবা ক্যালিস-কপিল নন, অলরাউন্ডারদের রাজা সাকিবই।

আইপিএলে আজ সাকিবসহ নামছে কলকাতা।

অনন্ত নারায়ণনের মতে, অলরাউন্ডারদের মান পর্যালোচনা করার যেসব পদ্ধতি, সেগুলোর অধিকাংশের মধ্যেই কোনো না কোনো ভুল আছে। কোনো প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই অলরাউন্ডারদের সঠিক মান বের করা যায় না। কখনো দেখা যায় ব্যাটিং গড় (যেটিকে অনন্ত নারায়ণন বলেন ভারযুক্ত ব্যাটিং গড় বা ওয়েটেড ব্যাটিং অ্যাভারেজ) থেকে বোলিং গড় বাদ দিয়ে একটা মান বের করা হয়।

আবার কখনো ব্যাটিংয়ের ভারযুক্ত গড়কে বোলিং গড় দিয়ে ভাগ করলে যে মান বের হয়, সেটা দিয়ে নির্ধারণ করা হয় একজন অলরাউন্ডার কেমন। কিন্তু কোনোভাবেই এসব প্রক্রিয়া একজন অলরাউন্ডারের আসল যোগ্যতা বা সামর্থ্য নিরূপণ করতে পারে না। কোনো না কোনো খামতি থেকেই যায়।

ধরা যাক, একজন অলরাউন্ডারের ব্যাটিং গড় ৪৫, কিন্তু বোলিং গড় ৩৫। ওদিকে আরেক অলরাউন্ডারের ব্যাটিং গড় ৩৫ ও বোলিং গড় ২৫। এখন প্রথম প্রক্রিয়া (ব্যাটিং গড় থেকে বোলিং গড় বাদ দেওয়া) অনুসরণ করে অলরাউন্ডারের মান নিরূপণ করতে গেলে দুই ক্ষেত্রেই অলরাউন্ডারের মান বের হবে ১০। কিন্তু যেকোনো অধিনায়কই অলরাউন্ডার হিসেবে এমন একজনকেই চাইবেন, যাঁর ব্যাটে গড়ে ৩৫ রান তো আসেই, পাশাপাশি বোলিং করার সময় যাঁর কাছ থেকে প্রতি ২৫ রান খরচায় একটি করে উইকেট আসে।

সাকিব আল হাসান।

দ্বিতীয় প্রক্রিয়াতেও এমনই কিছু ভুলত্রুটি আছে, যা অলরাউন্ডারদের সঠিক মান বের হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করে। দ্বিতীয় প্রক্রিয়ায় (ব্যাটিং গড়কে বোলিং গড় দিয়ে ভাগ) ব্যাটিং গড় ৩০ ও বোলিং গড় ২০-এর একজন অলরাউন্ডার আর ব্যাটিং গড় ৪৫ ও বোলিং গড় ৩০-এর আরেকজন অলরাউন্ডারকে সমানই মনে হবে!

এই ঝামেলার কারণেই ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ক্রীড়া বিশ্লেষক অনন্ত নারায়ণন একটু ভিন্ন আরেকটা প্রক্রিয়া বের করেছেন। আর সেই প্রক্রিয়া বলছে, সাকিব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অলরাউন্ডার।

অলরাউন্ডারের আসল মান বের করার জন্য অনন্ত নারায়ণন হিসাবে এনেছেন ব্যাটিং, বোলিং, প্রতি টেস্টে পারফরম্যান্স, অলরাউন্ড প্রভাব, উচ্চ অলরাউন্ড প্রভাব—সবকিছুর সূচককে। একজন অলরাউন্ডার কেমন ব্যাটিং করেছেন, সে সূচক থেকে ২৫ একক; কেমন বোলিং করেছেন, সে সূচক থেকে ২৫ একক; রান করা ও উইকেট নেওয়ার দিক থেকে প্রতি টেস্টে তাঁর ভূমিকার সূচক থেকে ২০ একক; ভিন্ন ভিন্ন টেস্টে একজন অলরাউন্ডারের সম্মিলিত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের সূচক থেকে ২০ একক—এই হলো ৯০ এককের হিসাব।

সাকিব আল হাসান।

বাকি ১০ একক হিসাব হবে কোনো টেস্টে একজন অলরাউন্ডারের অনন্যসাধারণ পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে। যেমন একজন অলরাউন্ডার কোনো টেস্টে সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি উইকেট নিলেন ৪ বা তার বেশি। সে ক্ষেত্রে যতগুলো টেস্টে এই কীর্তি গড়েছেন, তত পয়েন্ট যোগ হবে। সাকিব জীবনে টেস্ট খেলেছেন ৫৭টি, এই কীর্তি গড়েছেন ৯ টেস্টে। তাই এই ক্ষেত্রে তাঁর পয়েন্ট ৯, এমনটাই হিসাব করেছেন অনন্ত নারায়ণন।

অনন্তের এই হিসাবে সাকিব ৭৭.১ পয়েন্ট নিয়ে সব অলরাউন্ডারের ওপরে আছেন। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যারি সোবার্স, যাঁর পয়েন্ট ৭৬.৭। তৃতীয় থেকে পঞ্চম স্থানে আছেন যথাক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকার অব্রে ফকনার (৭৩.৭ পয়েন্ট), অস্ট্রেলিয়ার কিথ মিলার (৬৭.৮ পয়েন্ট) ও জ্যাক গ্রেগরি (৬৫.৫ পয়েন্ট)।

এরপরেই আছেন কিউই অলরাউন্ডার ক্রিস কেয়ার্নস (৬৩.৩ পয়েন্ট), ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম (৬২.৪ পয়েন্ট) ও পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান (৬১.৮ পয়েন্ট)। শীর্ষ দশের বাকি দুজন ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৬১.৫ পয়েন্ট) ও দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস (৬১.২ পয়েন্ট)।

সাকিব আল হাসান।

সাকিবের পয়েন্ট কেন সবার চেয়ে বেশি? এর বিশ্লেষণে অনন্তের মত, ক্যারিয়ারের শুরুটা অত ভালো না হলেও আস্তে আস্তে জ্বলে উঠেছেন এই অলরাউন্ডার। শেষ ১৫ টেস্টের মধ্যে ১০ টেস্টেই ‘উচ্চ অলরাউন্ড প্রভাব’ বিশিষ্ট পারফরম্যান্স দিয়েছেন সাকিব। অনন্তের হিসাবে সবকিছু মিলিয়ে অন্ততপক্ষে আরও পাঁচ বছর অনায়াসে খেলে যেতে পারবেন সাকিব। অনেক ম্যাচ তুলনামূলকভাবে দুর্বল প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলেছেন বলে সাকিবের অবদানকে ছোট করে দেখার কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন এই বিশ্লেষক।

ওদিকে সোবার্সের ক্ষেত্রে অনন্ত বলেছেন, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ক্যারিবীয় এই তারকার বোলিংটা গড়পড়তা মানের ছিল। আস্তে আস্তে ওই ক্ষেত্রে উন্নতি করেছেন সোবার্স। ক্যারিয়ারের শেষ ভাগে এসে ব্যাটিং কিংবা বোলিং—কোনোটাই সে রকম ‘সোবার্সীয়’ মানের ছিল না।

সবশেষে এই বিশ্লেষক এই উপসংহারে এসেছেন, সোবার্স তো বটেই, ক্রিকেট ইতিহাসের যেকোনো অলরাউন্ডারের চেয়েই সাকিব সেরা।