২৯১৪ রান, ১৯৫ উইকেট। ৩০০০ রান ও ২০০ উইকেটের ডাবল ছোঁয়া ১৫তম ক্রিকেটার হওয়ার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলেন। ব্যাটিং গড় ২৮-এর একটু ওপরে, বোলিং গড় ৩৭-এর কাছাকাছি। ৫টা সেঞ্চুরি, ৫ বার পাঁচ উইকেট, ৬ বার ম্যাচসেরা। সবকিছু মিলিয়ে মঈন আলীর টেস্ট ক্যারিয়ারটা হয়তো হয়ে থাকল আক্ষেপেরই। ৬৪ টেস্ট খেলার পরও যে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারলেন না, এবার তো বিদায়ই বলে দিলেন!
নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে অবশ্য মঈন তৃপ্তই। বোলিংয়ে ১৯৫ উইকেটের অর্জনটা তাঁর কাছে অসাধারণ, ৫০ উইকেট পাওয়ার পরই ভাইকে ফোন করে নিজের অনুভূতিটা জানিয়েছিলেন। ইংল্যান্ড স্পিনারদের মধ্যে উইকেটের সংখ্যায় তাঁর ওপরে আছেন শুধু ডেরেক আন্ডারউড ও গ্রায়েম সোয়ান। তবে ব্যাটিংয়ে একটু আক্ষেপ আছে মঈনের নিজেরও। বিদায়বেলায় বলছেন, সুযোগ পেলে তিনিও হতে পারতেন বেন স্টোকসের মতো একজন ব্যাটসম্যান!
ক্যারিয়ারজুড়েই মঈনের ব্যাটিং অর্ডারের পজিশনটা হয়ে থেকেছে একটা ‘রহস্য’। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই হেডিংলিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রায় ৭ ঘণ্টা ব্যাটিং করে পেয়েছিলেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। তবে বরাবরই ব্যাটিং অর্ডার অদল-বদল হয়েছে তাঁর। ক্যারিয়ারে এক থেকে নয় নম্বর—সব জায়গায় খেলেছেন তিনি। চার নম্বরে তাঁর গড় ৫১.২০, তবে সেখানে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ৫ ইনিংস।
২০১৬ সালে ভারতের বিপক্ষে চার নম্বরেই খেলেছিলেন ১৪৬ রানের ইনিংস। তবে পরের গ্রীষ্মেই তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাত নম্বরে। মূলত স্টোকসকে ওপরের দিকে জায়গা করে দিতেই নিচে নেমে যেতে হয়েছিল মঈনকে। ৩৪ বছর বয়সী ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার বলছেন, ব্যাটিংয়ে আরও কিছু দেওয়ার ছিল তাঁর, ‘ফিরে তাকালে মনে হয়, ব্যাটিংয়ে হয়তো আরেকটু কাজ করতে পারতাম। তবে দলের ভারসাম্য রাখতে হচ্ছিল বলে এটা সহজ ছিল না। আমার মনে হয়, অন্য যে কারও চেয়ে ব্যাটিং অর্ডারে বেশি ওঠানামা করতে হয়েছে আমার। এমন হলে যে কেউই নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে।’
স্টোকস যে ছয় নম্বরে খেলেছেন স্মরণীয় সব ইনিংস, সুযোগ পেলে তিনিও এমন করতে পারতেন বলেই মনে করেন মঈন, ‘অবশ্যই স্টোকসি (স্টোকস) অসাধারণ একজন খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। তবে মাঝে মাঝে মনে হয়, হয়তো ছয় নম্বরে আরেকটু সুযোগ পেলে আমিও অমন হতে পারতাম। তবে ব্যাপার না। আমার টেম্পারমেন্ট বা টেকনিক সব সময় খুব ভালো ছিল না, তবে সুযোগ পেলে হয়তো ভালোই করতাম আমি।’
ক্যারিয়ার শুরুর আগে যা ভেবেছিলেন, এরপর এর চেয়ে বেশি অর্জন করেছেন বলেই মনে করেন তিনি। তবে ফিরে তাকালে এখন আরেকটু ভালো করার আক্ষেপ আছে তাঁর। আবার বিভিন্ন পজিশনে খেলেছেন বলেই একসময় নিয়মিত দলে সুযোগ পেয়েছেন বলেও মনে হয় মঈনের। তবে ব্যাটিং নিয়ে একটু আক্ষেপ থাকলেও বোলিংয়ে অর্জন তাঁর কাছে অসাধারণই, ‘এটা নিয়ে আসলে আমি গর্বিত অনেক। স্বপ্নেও কখনো ভাবিনি, ২০০ উইকেটের কাছাকাছি যাব। শুধু উইকেট না, আমি যেমন বোলারে পরিণত হয়েছি। আমার মনে হতো, নিজের সেরা বলে যে কাউকেই আউট করতে পারব আমি। এটা আসলে অসাধারণ একটা অনুভূতি।’
২০১৯ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে সাময়িক বিরতি নিয়েছিলেন মঈন। এরপর টেস্টের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) সে সিদ্ধান্ত তাঁর টেস্ট খেলার ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি, ‘বিরতি চেয়েছিলাম বলে চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হলো। কারণ, তারা নাকি জানত না, আমি আর কত দিন খেলব। সে সময়টা হতাশার ছিল অনেক। এরপর আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেললাম। হয়তো দলে ফিরতে এবার বেশি সময় নিয়ে ফেলেছি এবার।’
ক্যারিয়ার যেমনই হোক, টেস্ট ক্রিকেটকে নিশ্চিতভাবেই মিস করবেন মঈন, ‘সময় কত দ্রুত চলে যায়, ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার স্মৃতি সব সময়ই লালন করে যাব আমি। লর্ডসের আবহ, এজবাস্টনের আওয়াজ মিস করব আমি। আর টেস্ট ক্রিকেটে একটা ভালো দিন কাটানোর মতো অনুভূতি অন্য কোনো সংস্করণেই পাওয়া যায় না।’
বিদায়ের সময় তাই বলে গেলেন টেস্ট নিয়ে বলা চিরায়ত কথাগুলোই, ‘টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্য পেলে মনে হবে এটা যেন আপনার প্রাপ্য। বাজে বল করে ৫ উইকেট পাওয়া, বা বাজে ব্যাটিং করে সেঞ্চুরি—টেস্টে এমন হয় না বললেই চলে। এর মানে আপনি আদতেই ভালো কিছু করেছেন। এসব অনুভূতি আসলে অসাধারণ, টেস্ট ক্রিকেট অসাধারণ।’