Thank you for trying Sticky AMP!!

সেই মুস্তাফিজেই কাঁপল ধোনির ভারত!

ওয়ানডে অভিষেকেও বিস্ময় উপহার দিলেন মুস্তাফিজ

নিজের আগের দুই ওভারে দুই উইকেট তুলে নিয়েছেন। কিন্তু ২৫তম ওভারটি আর শেষ করা হলো না। দুই বল করেই ব্যথা নিয়ে ফিরে গেলেন সাজঘরে। একটু আগেই যে ধোনির সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছেন পলকা শরীরে। সেই ব্যথা সইতে পারেননি।
২০ বছর বয়সই এখনো হয়নি। মাত্রই নিজের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা বলতে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সেই ম্যাচে বিস্ময় উপহার দিয়েছিলেন। তার চেয়েও বড় বিস্ময় উপহার দিলেন আজ। ওয়ানডে অভিষেকেই ৫ উইকেট তুলে নিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। যে ধোনির ধাক্কা খেয়ে সাজঘরে যেতে হয়েছি​ল, ১২ ওভার পর মাঠে ফিরে পাঁচ বলের মধ্যে তুলে নিলেন তিন উইকেট!
ধোনি তো বটেই, পুরো ভারতকেই পলকা মুস্তাফিজ দিলেন বিরাট এক ধাক্কা। সেই ধাক্কায় ৭৯ রানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ। ঘরের মাটিতে এটি বাংলাদেশের টানা নবম জয়। যে জয় দিয়ে র‍্যাঙ্কিংয়ের সাত নম্বর জায়গা নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়।
২০০৫ সালের এই ১৮ জুন কার্ডিফে তখনকার মহাপরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে নতুন যুগের পথে ছোট্ট একটা কদম ফেলেছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তা​নকে বাংলাওয়াশ করে সেই নতুন যুগের উদ্বোধন হয়ে গেছে আগেই। শুধু দশ বছর পর একই দিনে ভারতকে হারিয়ে সংশয়বাদীদের শেষ সংশয়টুকুও মুছে ফেলল বাংলাদেশ। 
প্রথমে ব্যাট করে তামিম, সৌম্য ও সাকিবের ফিফটিতে ৩০৭ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম তিন শ পেরোনো স্কোর। বিনা উইকেটে ৯৫ রান তুলে নিয়ে ভারত পাল্টা জবাব দিচ্ছিল। পর পর দু ওভারে মুশফিকুর রহিম দুটো ক্যাচ ফেলে চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। পর পর দুই ওভারে ধাওয়ান আর কোহলিকে ফিরিয়ে জোড়া আঘাত হানেন তাসকিন, এক বছর আগে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকেই ৫ উইকেট পেয়েও হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল যাঁকে। কিন্তু এবারের গল্পটা যে বাংলাদেশ অন্যভাবে লিখবে বলেই ঠিক করে রেখেছিল।
নিজের পর পর দুই ওভারে মুস্তাফিজও জোড়া আঘাত হানলে হুট করে ভারতের স্কোর হয়ে যায় ৪ উইকেটে ১১৫। ২০ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন ধুঁকছে। বড় স্কোর তাড়া করতে গিয়ে ভীষণ চাপের মুখে। এমন চাপ অনায়াসে সামলে সামলে ‘ক্যাপটেন কুল’ নাম পেয়ে যাওয়া ধোনি মেজাজ হারালেন। ২৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ঘটল মুস্তাফিজের সঙ্গে তাঁর ধাক্কার ঘটনা।
ধোনির এমন আচরণ এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছে। একজন তো এমনও মন্তব্য করেছেন, ক্রিকেটের সবচেয়ে খ্যাপাটে, সবচেয়ে শৃঙ্খলাহীন ক্রিকেটারদের একজন অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস আজ মদ্যপ হয়ে ক্রিকেট খেললেও হয়তো কেউ এতটা অবাক হতো না! বিষয়টি বাংলাদেশ দলেরও ভালো লাগেনি। পরের ওভারেই সাকিব ধোনিকে ফিরিয়েই বুনো উল্লাসে মেতে উঠলেন। যেন ভেতরের রাগটার আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ হলো! ক্যাচ ফেলার প্রায়শ্চিত্ত করে দুর্দান্ত ক্যাচ নিলেন মুশফিক। পরে নিয়েছেন আরও অসাধারণ দুটো ক্যাচ। নিজের ভুলটা ভালোভাবেই মুছে দিয়ে সব মিলিয়ে পাঁচটি ক্যাচ নিয়েছেন উইকেটের পেছনে।
কিন্তু নায়ক মুস্তাফিজই। রায়না-জাদেজার ৬০ রানের জুটিটায় চেপে ভারত তখন ভালোভাবেই ফিরে আসছে ম্যাচে। ড্রেসিংরুমে শুশ্রূষা নিয়ে ৩৭তম ওভারে ফিরলেন মুস্তাফিজ। আর ওই ওভারের চতুর্থ আর পঞ্চম বলে ফেরালেন রায়না আর অশ্বিনকে। হ্যাটট্রিকটা হলো না। কিন্তু যা হয়েছে সেটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের গল্পগাথা হয়ে থাকবে। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে ফেরালেন জাদেজাকেও। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে অভিষেকে ৫ উইকেট! ১৯৫ রানে নেই ভারতের ৮ উইকেট! 

ভারতের লেজ আরও আটটি ওভার কোনো মতে চালিয়ে দিল। কিন্তু ম্যাচের ভাগ্য যে ঠিক হয়ে গিয়েছিল ৩৭তম ওভারে, মুস্তাফিজ যখন বোলিং মার্কে ফিরলেন, তখনই। নাকি আরও আগে? ২৫তম ওভারে যখন ধাক্কাটা মারলেন ধোনি!
অবধারিতভাবেই ম্যাচ সেরা তিনি। ইংরেজি ভালো বলতে পারেন না বলে মাশরাফি এলেন অনুবাদকের ভূমিকায়। পরে দেখা গেল, সদ্য ​কৈশোর পেরোনো এই বাঁ হাতি পেসারটি ভীষণ লাজুক। বাংলাতেও গুছিয়ে বলতে পারছেন না। বরং কেমন যেন অস্বস্তি।
অসুবিধা নেই মুস্তাফিজ। আজকে বল হাতে আপনি অনেক বলেছেন। যে বলটা সুখপাঠ্য কোনো গদ্য নাকি ছান্দসিক কোনো কাব্য—এ নিয়েই সবাই ধন্দে। যা বলার বল দিয়েই বলুন না!