Thank you for trying Sticky AMP!!

স্ত্রী চায় না আমি রান্নাঘরে যাই

>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো-
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান। ছবি: প্রথম আলো

সময়টা আমার জন্য এক দিক দিয়ে বেশ ভালো, আরেক দিয়ে খুব খারাপ। ভালোটা হচ্ছে, পরিবারের সঙ্গে আছি। করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পরই চট্টগ্রামে বাদশা মিয়া রোডের ফ্ল্যাটে চলে এসেছি। জায়গাটা একটু সবুজেঘেরা, বাসা থেকে পাখির কিচিরমিচির শুনি। নগরে থেকেও এ এক কোলাহলমুক্ত জীবন!

আমার মেয়ে কানাডা থেকে এসেছে। সবাই এক জায়গায়, পরিবারকে অনেক সময় দিচ্ছি। আমাকে এভাবে পেয়ে ওরাও অনেক খুশি। পারিবারিকভাবে ভালো সময় যাচ্ছে। ঢাকায় অনেক ব্যস্ত থাকি। পরিবারকে ঠিক মতো সময় দেওয়া হয় না। ওদের স্কুলের সময়, আমার অফিসের সময়- নিজেদের মধ্যে গল্প করা অনেক কম হয়। এখন সেটা খুব ভালোভাবেই হচ্ছে।

রাতে ইফতার করার পর একসঙ্গে বসে আড্ডা, নাটক-সিনেমা দেখি। ২৫ বছর আগে পরিবারের সঙ্গে আমার সময় কাটত যেভাবে, এখন সেভাবেই সময় কাটাচ্ছি। যেন ২৫ বছর আগের জীবনটা আবার ফিরে পেয়েছি। এভাবে ভাবলে ভালোই লাগছে। অনেকে দেখছি রান্নাবান্নায়ও হাত লাগাচ্ছে। আমার স্ত্রী আবার পছন্দ করে না যে আমি রান্নাঘরে যাই।

আর খারাপ দিক হচ্ছে, আমি তো লম্বা সময় ধরে ক্রিকেটের সঙ্গেই আছি । কখনো খেলোয়াড়, কখনো নির্বাচক, ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক; যেটাই বলেন, ক্রিকেট থেকে এতটা দূরে কখনও ছিলাম না। ক্রিকেট, ক্রিকেটাঙ্গনের পরিবেশ, মিরপুরে যাওয়া, সাংবাদিকদের সঙ্গে গল্প করা, খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলা, বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ...সবই খুব মিস করছি। ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে আসলে ভালো লাগে না।

এখন যেহেতু খেলা নেই, খেয়াল করছি পত্রিকা কিংবা টিভিতে আমাদের পুরোনো দিনের অনেক স্মৃতি ফিরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফির জয় নিয়ে অনেক আয়োজন ছিল, আমাদের পুরোনো ইনিংসগুলো নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন ধরেই আছি বলে বেশিরভাগ বড় বড় ঘটনায় আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে। এসব পড়তে-দেখতে ভালোই লাগে। কত ঘটনা তো ভুলেই গিয়েছিলাম, আবার মনে পড়ে যাচ্ছে এই সুযোগে।

এখন আমার পরিচয় বোর্ড পরিচালক। খেলা নিয়ে চিন্তাটাও এখন একটু অন্যভাবে করি। আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ স্থগিত হয়ে গেছে। আয়ারল্যান্ড সফর, অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। আমরা কোনো দিনই চিন্তা করিনি যে, এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়ব। যে সিরিজগুলো স্থগিত হয়ে গেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর প্রথমে চিন্তা করব, গুরুত্বের বিচারে কোনটি আগে শুরু করা যায়। সব সূচি তো আর পুনর্বিন্যাস করা সম্ভব হবে না। ফাঁকা সময় বুঝে গুরুত্বপূর্ণগুলো আগে করব।

সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে বর্তমান পরিস্থিতিতে নি¤œ আয়ের মানুষদের কথা ভেবে। যতটুকু পারছি তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। কিন্তু পরিস্থিতি এমনই হয়ে গেছে, চাইলেও মন খুলে সহায়তা করা যায় না। করোনা সংক্রমণের ভয়ে দূর থেকেই যা করারা করতে হয়।

পরিবার নিয়ে যেমন আতঙ্কে থাকি, ক্রিকেটারদের নিয়েও দুশ্চিন্তা হয়। আমাদের মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের সংখ্যা তুলনামূলক কম। তারা সুস্থ আছে কিনা, ফিটনেস নিয়ে নিয়মিত কাজ করছে কিনা, এসব চিন্তা কাজ করে। এখন পর্যন্ত নেতিবাচক কোনো খবর শুনিনি। সবাই ভালো আছে। ফিটনেসের কাজ করে যাচ্ছে। ফিজিওর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। শুধু খেলাটা কবে মাঠে গড়াবে, সেই অপেক্ষায় আছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন দ্রæততম সময়ে ঝুঁকিহীনভাবে আমরা মাঠে ফিরতে পারি। তবে ঝুঁকি নিয়ে মাঠে ফিরতে চাই না।

করোনাপরবর্তী ক্রিকেট নিয়ে এখনই কিছু বলার উপায় নেই। কোনো কিছু পরিকল্পনাও করতে পারছি না। এখন শুধু একটাই অপেক্ষা, আল্লাহ যেন এই বিপদ থেকে দ্রুত আমাদের উদ্ধার করেন। সব কিছু ঠিক হলে অনেক পরিকল্পনা করা যাবে। পরিস্থিতি ঠিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতই আমরা মাঠে ক্রিকেট ফেরাব ইনশাআল্লাহ।