Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বেচ্ছাবন্দী সাকিব মেয়ের সঙ্গেও দেখা করছেন না

স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে সাকিব। ছবি: সংগৃহীত।

দুদিন আগেই নিজের ফেসবুক পাতায় পোস্ট দিয়েছিলেন নিজ গ্রামে সবুজ ধানখেতে আনন্দের সময়ের। হাসিমুখ ছিল তাঁর। কিন্তু আজ যখন ফেসবুক ভিডিওতে এসে কথা বলছিলেন সাকিব আল হাসান, উসকোখুসকো চেহারায় যেন দুশ্চিন্তার ছাপ। বাঁহাতি অলরাউন্ডার কথা বলছিলেন বিশ্বজুড়ে প্রতিটি মানুষের দুশ্চিন্তার সর্বনাম হয়ে ওঠা করোনাভাইরাস নিয়ে।

চীন হয়ে ইউরোপ ঘুরে বিশ্বভ্রমণের পথে বাংলাদেশেও ঘাঁটি গেড়েছে করোনা। সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এরই মধ্যে বাংলাদেশে ২৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন দুজন। কিন্তু ভাইরাসটির আক্রমণ আরও বাড়বে, তা নিশ্চিত। কতটুকুতে, কত কম প্রাণসংহারে থামিয়ে রাখা যাবে করোনাকে, সে-ই এখন চেষ্টা।

করোনার প্রভাব ঠেকাতে কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া সাকিব সব নিয়মকানুনই মেনে চলছেন। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১৪ দিনের স্বেচ্ছানির্বাসনে আছেন। এমনই যে, নিজের মেয়ের সঙ্গেও দেখা করছেন না। আজ নিজের ফেসবুক পাতায় সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওতে এসেছেন সাকিব। এসেছেন করোনাভাইরাসের বিপক্ষে লড়াইয়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে। তা করতে গিয়েই নিজের যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছেন সাকিব, ‘আমি নিজের একটা অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করছি। আমি মাত্রই যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌঁছেছি। যদিও বিমানে সব সময়ই একটু হলেও ভয় কাজ করেছে, তবু চেষ্টা করেছি নিজেকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখার। এরপর যখন আমি যুক্তরাষ্ট্রে এসে নামলাম, আমি সোজা একটি হোটেলে উঠেছি। ওদের জানিয়ে দিয়েছি, আমি কিছুদিন এখানে থাকব। আর আমি যেহেতু বিমানে চড়ে এসেছি, তাই আমার একটু হলেও ঝুঁকি আছে। এ জন্য আমি নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে রেখেছি। যে কারণে নিজের বাচ্চার সঙ্গেও দেখা করিনি। এখানে এসেও নিজের বাচ্চার সঙ্গে দেখা করছি না, অবশ্যই আমার জন্য এটা কষ্টদায়ক। তারপরও আমার মনে হয়, এই সামান্য আত্মত্যাগটুকু করতে পারলে আমরা অনেকটুকু এগোতে পারব।’

বাংলাদেশে বিদেশফেরত অনেকে এই আত্মত্যাগটুকু করতে রাজি হননি বলেই খবর আসছে প্রতিদিন। তাঁদের উদ্দেশে সাকিবের অনুরোধ, ‘যদি কেউ বিদেশফেরত থাকেন, তাহলে অবশ্যই নিজেকে ঘরে রাখা এবং ঘর থেকে যাতে বাইরে না যাওয়া হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। একই সঙ্গে আরেকটি ব্যাপার মনে রাখতে হবে, যেন আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী এসে আপনার সঙ্গে দেখা করতে না পারেন। ১৪ দিন আপনাকে ঘরে থাকতে হবে, যেটা খুবই জরুরি। আমাদের দেশেও যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন-অনেকেই এসেছেন, খবরে পড়েছি। আমাদের দেশেরই মানুষ তাঁরা। যেহেতু তাঁদের ছুটির সময় কম থাকে, অনেক সময়ই তাঁরা চান আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে, ঘুরতে, খাওয়া দাওয়া করতে, আড্ডা দিতে, কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে একত্রিত হতে। যেহেতু আমাদের সময়টা অনুকূলে না, আমি সবাইকে অনুরোধ করব সবাই যেন এ ক্ষেত্রে নিয়মগুলো মেনে চলেন। কারণ আমাদের এই সামান্য আত্মত্যাগটুকুই পারে আমাদের পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে, সুস্থ রাখতে, আমাদের নিজেদেরও সুস্থ রাখতে। আশা করি আপনারা আমার এই কথাগুলো শুনবেন এবং কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো সংগঠন যেসব দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন, সেগুলোর ব্যাপারে অবগত হবেন, এবং সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবেন।’

করোনার বিপক্ষে লড়াইটা কঠিন হতে পারে, কিন্তু কিছু সহজ নিয়মই তো এখানে মানতে হয়! সেগুলোই বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে মহামারি রোগ বলে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আপনারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন, বাংলাদেশেও বেশ কিছু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। আমাদের এখনই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের সতর্কতাই পারে আমাদের দেশকে সুস্থ রাখতে, আমাদের সুস্থ রাখতে। কিছু সহজ পদক্ষেপ নিলেই আমার ধারণা আমরা এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারব, এবং আমাদের দেশকেও মুক্ত রাখতে পারব। যেমন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, একে অন্যের কাছ থেকে শারীরিকভাবে দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় সঠিক শিষ্টাচার মেনে চলা।’

শেষে তাঁর অনুরোধ, আতঙ্কিত না হতে, আতঙ্ক না ছড়াতে, ‘আরেকটা কথা বলব, কেউ আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্কিত হওয়াটা কারও জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে না। আমি খবরে দেখেছি, অনেকেই তিন-চার-পাঁচ এমনকি ছয় মাসের খাবার সংগ্রহ করে রাখছেন। আমার ধারণা খাবারের ঘাটতি কখনোই হবে না। আমরা কেউ না খেয়ে মারা যাব না। আমরা এ রকম আতঙ্কিত না হই। কিছু সঠিক সিদ্ধান্তই পারে আমাদের এই বিপদ থেকে মুক্ত করতে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা, খুব প্রয়োজন ছাড়া আশা করি কেউ এই সময়ে ভ্রমণ করবেন না, বা বাসা থেকে বের হবেন না।’