Thank you for trying Sticky AMP!!

স্মিথ সাবধান, তামিম হবেন না যেন!

যে ‘অপরাধে’ শাস্তি হয়েছে তামিমের, প্রায় একই ‘অপরাধ’ স্মিথও করেছেন। ফাইল ছবি

সংবাদমাধ্যম একটা আতঙ্কের নাম, সারা বিশ্বেই। কোনো ঘটনা পেলেই সেটা নিয়ে শুরু হয়ে যায় ‘লঙ্কাকাণ্ড’। নাড়ি-নক্ষত্র বের করে সে বস্তুকে নিংড়ে নেয়। তবে ইংলিশ মিডিয়া এ ক্ষেত্রে এক কাঠি বাড়া। পাপারাজ্জি কী জিনিস, কোনো বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি কোন মাত্রায় নেওয়া যায়, এটা ইংলিশ মিডিয়াই শিখিয়েছে সবাইকে। সেই ইংলিশ পত্রিকাগুলোর মুখে এভাবে খাবার তুলে দিলেন স্টিভ স্মিথ! এও সম্ভব?

তো কী করেছেন স্মিথ? বক্সিং ডে টেস্টের উইকেট নিয়ে সমালোচনা করেছেন! এমসিজির উইকেটে ব্যাটসম্যানরা না পারছিলেন স্বস্তিতে রান তুলতে, বোলাররা না পারছিলেন ব্যাটসম্যানদের আউট করতে। সে এক বিতিকিচ্ছি অবস্থা। এ যেন ‘এই আমি আসন গেঁড়ে বসলুম, কী করবি কর!’ এমন পরিস্থিতিকে আরও স্যাঁতসেঁতে করতে বৃষ্টিও একটু সাহায্য করেছিল।

এমন ম্যাড়মেড়ে এক ম্যাচ খেলে ত্যক্তবিরক্ত স্মিথ মেলবোর্নের উইকেটকে খুবই বাজে বলে বসলেন। মুখ খুলতে গিয়ে একটু বেশিই শুনিয়ে দিলেন, ‘আমার মনে হয় কিছু একটা করা দরকার ছিল...পাঁচ দিনেও উইকেটের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আরও কয়েক দিন খেললেও এ উইকেটের কিছু হতো না। একটু পেস ও বাউন্স অথবা স্পিন অথবা কিছু একটা তো থাকতে হবে! বল যাচ্ছিল না। আউট করা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। আমার মনে হয় না এটা কারও জন্য ভালো।’ উইকেটে যে একটু ঘাস রাখা উচিত ছিল, সেটাও বলেছেন।

ছেলের সাহস দেখুন! আরে বাবা, পিচ বানানোর দায়িত্ব কার? কিউরেটরের। উইকেটের ব্যাপার-স্যাপার তাঁর চেয়ে একজন ক্রিকেটার ভালো বুঝবে? কিউরেটর কি ব্যাটসম্যানকে গিয়ে বলেন, ‘উঁহু হচ্ছে না, ব্যাক লিফট ঠিক করো। ডান পা’টা আরেকটু কম নড়াও!’ না, মোটেও এমন কিছু করেন না। তবে স্মিথ কেন আগ বাড়িয়ে এমন উপদেশ দিতে গেলেন!

তাও আবার কোন সময়ে। বক্সিং ডে টেস্ট, চিরশত্রু ইংলিশদের বিপক্ষে ম্যাচ। মাঠের ৯০ হাজার দর্শকের কথা ভুলে যান। পুরো ক্রিকেট দুনিয়া তাকিয়ে রয়েছে। শুধু অস্ট্রেলিয়ারই ৬০ শতাংশ মানুষ খেলা দেখছেন। আচ্ছা, ক্রিকেট দুনিয়ার কথা ফেলে দেন, ইংলিশ মিডিয়া তো তাকিয়ে আছে। সেই ইংলিশ মিডিয়া যারা তিলকে শুধু তালই বানায় না, সে তালের পিঠা বানিয়েও খেয়ে ফেলে! এক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক কিনা নিজের দেশের উইকেটের সমালোচনা করছেন। ইংলিশ মিডিয়ার কাছে তো ব্যাপারটা অনেকটা অ্যাশেজ জিতে ফেরার মতোই ঘটনা।

এতেও থামলে চলত, কিন্তু স্মিথ থামলেন না। আইসিসিও এমসিজির উইকেটকে বাজে বলেছে। এবার অন্তত ‘লাইনে’ আসতে পারতেন অধিনায়ক। দেশের মান বাঁচাতে এর পক্ষে কিছু বলতে পারতেন। কিন্তু দেশের প্রতি কোনো ‘মমত্ব’ থাকলে তো! ফট করে বলে বসলেন, ‘আমার মনে হয় উইকেটের সঙ্গে এটাই (আইসিসির রেটিং) মানানসই। ম্যাচের পরই বলেছিলাম, এটা খুব বাজে উইকেট। আমার মনে এটা তাদের জন্য একটা সতর্ক সংকেত। দেখা যাক আগামী বছর ওরা কী নিয়ে হাজির হয়।’

স্মিথ যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কোনো খবর রাখেন না তা তো বোঝাই যায়। না হলে এর মাঝেই তামিম ইকবালের শাস্তির ঘটনা ঘটেছে। বিপিএলে ঢাকা পর্বে ক্রিকেটাররা কী খেলবেন, খেলা দেখাল মিরপুরের উইকেট। এমনই সে উইকেট, চার-ছক্কার চেয়ে বোলারের উইকেটসংখ্যা বেশি। আউটফিল্ডে বল যেতে চায় না। টি-টোয়েন্টির জোয়ারে মাতা দর্শক রান দেখতে এসে দেখেন উইকেটবৃষ্টি। তাই তামিম ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, উইকেট ও আউটফিল্ড ‘হরিবল, হরিবল, হরিবল!’ বিসিবি তাই তামিম ইকবালকে জরিমানা করেছে ৫ লাখ টাকা। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের চোখে, আউটফিল্ড ও কিউরেটর নিয়ে কথা বলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ক্ষতি করেছেন তামিম; তাই এ শাস্তি।

তামিম আসলেই এভাবে মানহানি করতে পারেন না। উইকেট নিয়ে কথা বললে বাংলাদেশের মানহানি হবেই। ভাবমূর্তির ব্যাপারে বাংলাদেশের সবারই ‘কচুপাতার জলে’র মতো অবস্থা। একটু এদিক-ওদিক হলেই টুপ করে পড়ে যায়! বিপিএলেরই দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মাঠে মালিক কর্মকর্তাদের নেমে আসা, বাইলজের থোড়াই পরোয়া করা কিংবা টিভি পর্দায় এমন দৃশ্য বাইরের দর্শকদের দেখানোতে অবশ্য আমাদের মানে কোনো হেরফের হয় না।

বিপিএলের দর্শক আর প্রচারের সঙ্গে অ্যাশেজের তুলনা টানলে স্মিথ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকেই ডুবিয়ে দিয়েছেন। তার তো প্রচার আরও বেশি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া কি বিসিবি থেকে শিক্ষা নিয়ে কোনো শাস্তির ব্যবস্থা করবে না? দেশের মানহানি বলে কথা! ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি (কী যেন তাঁর নাম, তিনিও কেন জানি খুব বেশি সংবাদমাধ্যমে হাজির হন না; নামটাই মনে করা যাচ্ছে না) বলতেই পারেন, এমনিতেই ডিমেরিট পয়েন্ট পেয়ে বসে আছি...।

সাবধান স্মিথ, এভাবে দেশের ক্রিকেটের মান নিয়ে টানাটানি করবেন না। তামিমের মতো শাস্তি জুটে যেতে পারে। বাংলাদেশের ওপেনার তবু ৫ লাখ টাকায় পার পেয়েছেন, আপনার ক্ষেত্রে জরিমানা কিন্তু ডলারেই হবে!