Thank you for trying Sticky AMP!!

খালেদ মাসুদ

২ বলে ১০ রান করার মতো ব্যাটসম্যান নেই আমাদের

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বাংলাদেশের হেরে যাওয়া ম্যাচের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমি প্রথমেই বলব—শারজার পিচের দিকে তাকান। পিচের দিকে তাকালে বোঝা যাবে বাংলাদেশ আসলে কী কারণে ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত হেরেছে। ৩ রানের হারে ঘাটতি কোথায় ছিল।

শারজার উইকেট খুবই মন্থর ছিল, বল একেবারেই ওঠেনি। এমন উইকেটে ১৪২ রান তাড়া করে জেতা বেশ কঠিন। বাংলাদেশ কঠিন এ কাজটা প্রায় করে ফেলেছিল। মাহমুদউল্লাহদের এমন একটি পারফরম্যান্সের পর অনেকেই হয়তো প্রশংসা আশা করবে। কিন্তু দিন শেষে ব্যাটিংয়ে কিছু কৌশলগত ভুলের কারণেই তীরে গিয়ে তরি ডুবেছে বাংলাদেশের। পিচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধীরলয়ে হলেও ছন্দময় ব্যাটই করছিল লিটন দাস–মাহমুদউল্লাহরা।

আবারও হারের হতাশা বাংলাদেশের

কিন্তু একটা বিষয় ভেবে দেখুন, শেষ ৩ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৩০ রান। শেষ ২ বলে ৬ রান। এমন মন্থর উইকেটে ১৮ বলে ৩০ রান বা ২ বলে ১০ রান লাগলে সেটা করার ব্যাটসম্যান নেই আমাদের। সে ক্ষেত্রে শেষ ৩ ওভার, বিশেষ করে শেষ ওভারে রানের চাপটা আরও কমিয়ে আনার হিসাবটা আগে থেকেই করা উচিত ছিল। মাথায় থাকা উচিত ছিল, শেষ ৩ ওভারের ২টি করবে ডোয়াইন ব্রাভো ও আন্দ্রে রাসেল।

ক্রিস গেইল, কাইরন পোলার্ডের মতো ব্রাভো আর রাসেলও বছরজুড়ে বিভিন্ন দেশের টি–টোয়েন্টি লিগগুলোতে খেলে বেড়ায়। এরা জানে শেষ দিকে কোন বলটা কোন ব্যাটসম্যানকে কোথায় দিতে হবে। ভালো করে লক্ষ করলে দেখবেন, ব্রাভো আর রাসেল শেষ দিকে পায়ের ওপর বল করেছে, ইয়র্কার দিয়েছে, আবার অফসাইডে স্টাম্পের অনেক বাইরেও বল দিয়েছে। তা আমাদের যেহেতু পাওয়ার হিট করার মতো ব্যাটসম্যান নেই, তাই ১৫, ১৬ ও ১৭; এই তিনটি ওভারে রান করে হিসাবটা আগেই আরও সহজ করে তোলা উচিত ছিল।

স্কুপ করার অভ্যাস থেকে বের হতে পারছেন না মুশফিক

জেসন হোল্ডারের করা ১৬তম ওভারে ১১ রান নিতে পারলেও ১৫তম ওভারে মাত্র ৬ আর ১৭তম ওভারে মাত্র ৩ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এবার আসা যাক লিটনের ইনিংসটিতে। ৪৩ বলে ৪৪ রান করেছে সে। মন্থর পিচের কথা টেনে অনেকেই এ ইনিংসকে ভালো বলবেন। আমিও এটাকে খারাপ বলব না। কিন্তু ৪৩ বলে সে যদি ৫০ রান করতে পারত, তাহলে সেটা দলের জন্য ভালো হতো। হয়তো বাংলাদেশ ম্যাচও জিতে পারত।

লিটন যখন আউট হয়েছে, ওই সময় নতুন কোনো ব্যাটসম্যান এসে এমন উইকেটে রান করা কঠিন। মাহমুদউল্লাহর চেষ্টা ভালো লেগেছে। শেষ বলটি সে ব্যাটে লাগাতে পারেনি। ওই সময় এমনটা হতেই পারে। আর রাসেল বলটাও বুদ্ধিদীপ্ত করেছে। কিন্তু মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং নিয়ে কিছু না বলে পারছি না। ইনিংসের ওই সময়ে অমন শট খেলার চেষ্টা করা মোটেই উচিত হয়নি তার। এটাকে আমি আত্মহত্যার শামিল বলব। তার ওই আউটটা দলকে বড় বিপদে ফেলেছে।

শেষ দিকে ঝড় তুলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ভুল রেখে ম্যাচের অন্য অংশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং বা বাংলাদেশের বোলিংয়ের দিকে তাকালেও একটা বিষয় চোখে পড়বে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের মারমুখী ব্যাটসম্যানদের কিন্তু আমাদের বোলাররা লম্বা সময় বশে রাখতে পেরেছে। কিন্তু শেষ তিন ওভারে ওরা ৩৯ রান তুলেছে। এটাই আসলে বাংলাদেশকে হারিয়েছে। দুই দলের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে এই তিন ওভার। তবে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা যদি তিনটি ক্যাচ মিস না করত, লিটন যদি নিকোলাস পুরানকে সহজ স্টাম্পিংটা করতে পারত, তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই রান হতো না। লিটন যখন পুরানের স্টাম্পিং মিস করে, পুরানের রান ছিল ৩। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষে সর্বোচ্চ ৪০ রান তারই। সেই রানও সে করেছে মাত্র ২২ বলে। একটি চারের পাশাপাশি চারটি ছয় মেরেছে সে।

টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে আসলে চাপ সামলানো আর খেলাটা উপভোগেরও ব্যাপার আছে। অন্য দলগুলোর খেলোয়াড়দের দিকে তাকিয়ে দেখুন, ওরা খেলে মনের আনন্দে। হারবে কি জিতবে, মুখে হাসি লেগে থাকে। কিন্তু সমালোচনার চাপেই হোক বা পারিপার্শ্বিকতার কারণেই হোক, আমাদের খেলোয়াড়েরা হয়তো সেভাবে খেলাটা উপভোগই করতে পারে না। এটা মাঠে তাদের চেহারাতেই ফুটে ওঠে!