Thank you for trying Sticky AMP!!

'ক্রিকেটের অমর বুড়ো'র সঙ্গে যেখানে দেখা!

এই বাড়িতে জন্ম ডব্লিউ জি গ্রেসের। ছবি: প্রথম আলো

লেখাটা ব্রিস্টল থেকে লিখতে পারলে সবচেয়ে ভালো হতো। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ ঘিরে ব্যস্ততাই যা একটু দেরি করিয়ে দিল। অবশ্য লেখার বিষয় এমনই, ঢাকায় গিয়ে লিখলেও এটির প্রাসঙ্গিকতা হারাত না! বিষয়ের নাম উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস, ডব্লিউ জি গ্রেস—ক্রিকেটের অমর বুড়ো, আধুনিক ক্রিকেটের জনক—দ্য ডক্টর। ১৮৯৫ সালে যে সমারসেটের বিপক্ষে ২৮৮ রান করে পূর্ণ করেছিলেন শততম সেঞ্চুরি, লেখাটা অবশ্য লেখা হচ্ছে সেই সমারসেটেরই ‘ঘর’ টন্টনে বসে!

সিডনির বাউরাল ক্রিকেট ক্লাবের মাঠ ফিরিয়ে আনে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের শৈশব, আর ব্রিস্টলের ডাউনএন্ড মনে করিয়ে দেয় ডব্লিউ জির স্মৃতি। গত রোববারের সকালে একটু বৃষ্টিবিরতি দিয়েছিল ব্রিস্টলের আকাশ। এ সুযোগেই ডাউনএন্ডে ঘুরে আসা। সূর্যের নরম আলোয় ভীষণ স্নিগ্ধ হয়ে ওঠা এ সকালে ডাউনএন্ড ক্লাবের ছোট্ট সবুজ মাঠটা দেখে মনে হচ্ছিল, ১৬০-১৭০ বছর আগেও ছবিটা বুঝি এমনই ছিল, যেখানে গ্রেস ভাইদের ক্রিকেটে হাতেখড়ি।

ব্রিস্টলের শহরতলি ডাউনএন্ডে অবস্থিত ক্লাবটায় ঢুকতেই থামিয়ে দিলেন ডব্লিউ জি গ্রেস! ক্লাবের প্রবেশপথেই ক্রিকেটের অমর দাড়িওয়ালার ব্যাটিং করার ছবি। সেটির ওপরে লেখা, ‘১৯২২। বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার ডব্লিউ জি গ্রেসের স্মরণে ডাউনএন্ড ক্রিকেট ক্লাবের সমর্থকেরা এই প্যাভিলিয়নটা তৈরি করেছেন এবং মাঠটা কিনেছেন।’ সবিস্ময়ে যখন ডব্লিউ জির স্মৃতিধন্য জায়গাগুলো দেখা হচ্ছে, সুনসান নীরবতা ভেঙে সামনে এলেন গোলাপি টি-শার্ট পরা এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। নাম মাইক—ডাউনএন্ড ক্রিকেট ক্লাবের কিউরেটর। ‘ডব্লিউ জি গ্রেসের সন্ধানে এসেছেন বুঝি?’ কীভাবে বুঝলেন—শুনে এমনভাবে হাসলেন, যেন ভীষণ মজার প্রশ্ন করা হয়েছে। ‘ডব্লিউ জি গ্রেসের স্মৃতিধন্য এই মাঠ দেখতে অনেকে এখানে আসেন। নিশ্চয়ই জানেন, তিনি এই ক্লাবের হয়ে কখনো খেলেননি। ক্লাব প্রতিষ্ঠিতই হয়েছে ১৮৯৩ সালে (ডব্লিউ জির জন্ম ১৮৪৮ সালে)’—আলোচনা অসমাপ্ত রেখেই মাইক হাঁটা দেন মাঝ উইকেটের দিকে।

ডাউনএন্ড ক্লাব এভাবেই সম্মান জানিয়েছেন তাঁকে। ছবি: প্রথম আলো

ডাউনএন্ড ক্লাবের সঙ্গে তবে ডব্লিউ জি এবং তাঁর পরিবারের সম্পর্ক কী—সেটি বোঝাতে নিয়ে গেলেন মাঠের অন্য প্রান্তে। একটা প্র্যাকটিস উইকেট দেখিয়ে মাইক জানালেন, এখানেই ডব্লিউ জি ও তাঁর ভাইয়েরা অনুশীলন করতেন। মাঠ একটা সময় ছিল ফলবাগানের উদ্যান। এই মাঠের সঙ্গে তাঁদের নিবিড় সম্পর্ক। ১১ বছর ধরে ডাউনএন্ড ক্লাবের কিউরেটর হিসেবে কর্মরত মাইক এমনভাবে বলে যান, যেন দেড় শ বছর আগের দৃশ্য তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন!

‘আসুন, দেখাই গ্রেস কোথায় জন্মেছেন’ বলেই মাইক মাঠঘেঁষা রাস্তার ওপারে পুরোনো একটা বাড়ি দেখান। ‘ওখানেই ডব্লিউ জির জন্ম। তবে তিনি বড় হয়েছেন এই এলাকার আরেকটা বাড়িতে’—মাইক সেখানেও নিয়ে যেতে চান। কিন্তু যাওয়ার উপায় যে নেই! খানিক পরেই শুরু হবে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন। এ সময়ে না এলে আর আসা হবে না ভেবেই ডব্লিউ জির স্মৃতিবিজড়িত ডাউনএন্ড চট করে দেখে যাওয়া।

তাঁকে ঘিরে কত যে গল্প চালু ক্রিকেটে। টস নিয়ে তাঁর সেই বিখ্যাত বাণী তো আছেই। বোল্ড হওয়ার পর নির্বিকারে স্টাম্পে বেল বসিয়ে আম্পায়ারকে ‘আসলে ঝোড়ো বাতাসে বেল পড়ে গেছে’, ‘লোকে গাঁটের টাকা খরচ করে আমার ব্যাটিং দেখতে এসেছে, তোমার আম্পায়ারিং নয়’—ব্যাটিং কীর্তির মতো তাঁর এ কথাগুলোও ক্রিকেট আর্কাইভের অমূল্য সম্পদ। ডাউনএন্ড ক্লাব কর্তৃপক্ষ এবং এলাকাবাসী ক্রিকেটের এ অমর বুড়োকে সর্বোচ্চ সম্মানই জানিয়েছেন। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে চেষ্টার কোনো কমতি নেই। এই ডাউনএন্ড ব্রিটিশদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, স্বনামধন্য ক্রিকেট লেখিয়ে শিল্ড বেরি এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, ‘ডাউনএন্ড হোল্ডস অ্যান ইম্পরট্যান্ট প্লেস ইন ব্রিটিশ সোশ্যাল লাইফ।’

শুধু ব্রিটিশদের কেন, পুরো ক্রিকেটসমাজেই এ জায়গাটার গুরুত্ব অন্য রকম।