Thank you for trying Sticky AMP!!

'চাই আরও বেশি ধারাবাহিকতা'

বেশি করে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান মুশফিকুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো
>দেশের পক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তাঁর। এখন পর্যন্ত দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটসম্যানও তিনি। তবে মুশফিক মনে করেন, তাঁর বড় ইনিংস খেলা উচিত আরও নিয়মিত।

প্রশ্ন: বেশি অনুশীলনের অনুপ্রেরণা থেকেই কি আপনার এই ব্যাটিং?

মুশফিক: প্রস্তুতিটা ওভাবে নিতে পারলে মনের মধ্যে একটা বিশ্বাস আসে। মনে হয়, আমি অন্তত অনুশীলনে শতভাগ দিচ্ছি। তাহলে ম্যাচে নয় কেন? দলের অনুশীলনে নির্দিষ্টভাবে সব কাজ করার সুযোগ কম। ওখানে নেট করে প্রায় আট-দশজন ব্যাটসম্যান। দেড়-দুই ঘণ্টার অনুশীলনে একজনের জন্য বরাদ্দ আধা ঘণ্টা বা দশ-পনেরো মিনিট। সেই দশ-পনেরো-বিশ মিনিটে ভালো ফলাফল পাওয়া কঠিন। কার সঙ্গে খেলা হচ্ছে বা কোন বোলারের বিপক্ষে ব্যাট করতে হবে, তারা আমাকে কীভাবে আউট করার চেষ্টা করতে পারে, সেগুলো ভেবে ওভাবেই আমি আমার ব্যক্তিগত অনুশীলনটা সাজানোর চেষ্টা করি।

প্রশ্ন: ব্যক্তিগত অনুশীলন নিয়ে কারও পরামর্শ নেন?

মুশফিক: তামিমসহ দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে কথা বলি। যেমন, সামনে এ রকম খেলা আসছে, ওদের এই এই বোলার আছে, ও এটা করে, আরেকজন ওটা করে। বা যদি মনে হয় যে আমার এই শটটা খেললে রান করার সম্ভাবনা বেশি থাকবে, সেটা নিয়ে মতামত নিই। কম্পিউটার বিশ্লেষকের কাছ থেকে আগে থেকেই ভিডিওগুলো নিয়ে নিই। আর এখন তো অনেক খেলাই টিভিতে দেখা যায়।

প্রশ্ন: দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হয়েও সেঞ্চুরি পেতে দেড় বছরের বেশি অপেক্ষা করলেন। টেস্টে সেঞ্চুরিটা কি আরেকটু নিয়মিত হওয়া উচিত নয়?

মুশফিক: একজন সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে আমি চাই আরও বেশি ধারাবাহিকতা। আমরা এখন যে পর্যায়ে আছি, ওয়ানডেতেও প্রতি পাঁচ ইনিংসে অন্তত দুটি সেঞ্চুরি করা উচিত। আমি বলেন বা তামিম, সাকিব বা রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ), সুযোগ পেলে পাঁচ ম্যাচের দুই-তিনটিতে বড় ইনিংস খেলা উচিত আমাদের। টেস্টেও ওটাই, দুই টেস্টের চার ইনিংসে অন্তত দুটি বড় ইনিংস থাকতে হবে। তবে টেস্ট এত সহজ নয়। উইকেটগুলোও অন্য রকম থাকে।

প্রশ্ন: বড় ইনিংস আপনাদের কারও ব্যাট থেকেই নিয়মিত নয়। মাহমুদউল্লাহ প্রায় ৯ বছর পর টেস্ট সেঞ্চুরি পেলেন।

মুশফিক: একটা কারণ হতে পারে কন্ডিশন। আবার টেস্টের একটা সেশনে হয়তো আপনি ফিফটি করে নটআউট আছেন, নতুন সেশনে একটা ভালো বল হলো বা আপনার মনোযোগ একটু বিঘ্নিত হলো, তখন আউটের শঙ্কা থাকে। পানি পানের বিরতিও থাকে টেস্টে। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে এসব থাকে না। আপনি যে ছন্দে থাকবেন, সেই ছন্দেই শেষ করতে পারবেন। আমি বুঝি, মনোযোগ ঠিকঠাক থাকলে আমার পক্ষে আরও নিয়মিত বড় রান করা সম্ভব। সেটা হচ্ছে না বলেই গত বেশ কয়েকটি টেস্টে আমাদের স্কোরগুলো বড় হয়নি।

প্রশ্ন: একবার বলেছিলেন আপনার ভালো পারফরম্যান্স মানুষ মনে রাখে না...

মুশফিক: (হাসি) কী জানি ভাই, আমি জানি না। আমার তো মনে হয়, আমি সেঞ্চুরি করলে আপনারা মনে হয় অখুশি হন।

প্রশ্ন: কেন এটা মনে হয়?

মুশফিক: জানি না কেন...মনে হয় আরকি!

প্রশ্ন: তিন সংস্করণে ১০ হাজার রান করলেন। এই মাইলফলকগুলো নতুন লক্ষ্য স্থির করতে কতটা অনুপ্রেরণা দেয়?

মুশফিক: তামিম যদিও বারো হাজারে পৌঁছে গেছে মনে হয়, তারপরও বোর্ড যেভাবে স্বীকৃতি দিল, সেটা খুব ভালো লেগেছে। সবার মধ্যেই এখন এই তাড়নাটা থাকবে, অন্তত দশ হাজারি ক্লাবে ঢোকার। আমার ইচ্ছা, ফিফটিন ক্লাব বা টোয়েন্টি ক্লাবে যেন পৌঁছাতে পারি।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টেস্ট গড়ে আপনি এখন চার নম্বরে। এখানেও নিশ্চয়ই উন্নতি চাইবেন...

মুশফিক: আগেও বলেছি, যখন খেলা শেষ করব, তখন যেন পঞ্চাশের কাছাকাছি গড়ে শেষ করতে পারি। চার-পাঁচ বছর ধরে যে রকম খেলছি, আশা করছি অসম্ভব হবে না এটা। পনেরো ইনিংসেও যদি এক হাজার করতে পারি, তাহলেও সেটা বড় ব্যাপার হবে। যেকোনো ফরম্যাটেই হোক।

প্রশ্ন: মোট রান বা গড় নিয়ে দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেমন?

মুশফিক: আজ থেকে ছয়-সাত বছর আগেও দেখেছি যখন তামিম-সাকিব সেঞ্চুরি করত, ওদের মধ্যে কথা হতো, আমার এই কয়টা সেঞ্চুরি, তোর এই কয়টা। আমার ওয়ানডেতে এত, তোর টেস্টে এত। এটা খুবই ভালো। এখন তো মুমিনুলেরও বেশ কয়েকটি এক শ হয়ে গেছে। এটা অবশ্যই মাথায় থাকে। ও এতটা সেঞ্চুরি করল, আমিও যেন দু-একটা সিরিজের মধ্যে সেটা করতে পারি।

প্রশ্ন: আবারও প্রমাণ করলেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মুশফিকই বেশি সফল। এখন থেকে কিপিংটা নিয়মিতই করবেন তাহলে...

মুশফিক: কিপিং করলেই যে আমি এক শ করব সেটাও না, না করে করতে পারব তা–ও না। তবে একটি মানুষের তো স্বস্তির একটা জায়গা থাকে। আমারও আছে। কিপিংয়ে থাকলে আমি দেখতে পারি উইকেটে কী হচ্ছে। ব্যাটিংয়ে অনেক কাজে লাগে সেটা।

প্রশ্ন: কোচ স্টিভ রোডসও মনে হয় এটাই চান...

মুশফিক: আমি নিজের ইচ্ছায় কিপিং ছাড়িনি, নিজের ইচ্ছায় আবার কিপিংয়ে ফিরিওনি। আগে ম্যানেজমেন্ট-কোচ আমাকে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে চেয়েছেন। এই কোচ চেয়েছেন আমি কিপিং করি, সেভাবেই করছি। এগুলো তাদের চাওয়া অনুযায়ী হয়েছে।

প্রশ্ন: টেস্টে পাঁচ–ছয়ে ব্যাট করছেন। আপনার কি মনে হয় না আপনার চারে ব্যাট করাটাই দলের জন্য বেশি ভালো?

মুশফিক: কিপিং করে চারে খেলাটা একটু কঠিন। নব্বই-এক শ ওভার কিপিং করার পর যদি শুরুতেই দুই-তিনটি উইকেট পড়ে যায়, তখন আবার দ্রুত ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। আমার পছন্দের জায়গা সব সময় পাঁচ। যেহেতু সাকিব ওই জায়গায় খেলে, আমাকে ছয় বা সাতে খেলতে হয়। দলের জন্য আমার কোনো জায়গায় খেলতেই অসুবিধা নেই।

প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে কী প্রত্যাশা?

মুশফিক: আমি মনে করি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে এই সিরিজটাতে আমাদের ওদের কিছু ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। ওখানে গিয়ে আমরা যে রকম বাজেভাবে দুটি টেস্ট হেরেছি, সেটা কাম্য ছিল না। আমার বিশ্বাস, এই পুরো সিরিজটাই আমরা জিতব।

প্রশ্ন: ভবিষ্যতে নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে?

মুশফিক: (হাসি) না, ভাই। আমার অত যোগ্যতা নেই।