Thank you for trying Sticky AMP!!

'হ্যাডলি ভালো টিম ম্যান ছিল না'

>
করপোরেট ট্যাক্সি চালানোই এখন জীবিকা চ্যাটফিল্ডের। ছবি: দ্য স্টাফ

কথাটা বলেছেন ইউয়েন চ্যাটফিল্ড। স্যার রিচার্ড হ্যাডলির সঙ্গে গড়া বিখ্যাত সেই পেস জুটির অংশীদার। ক্রিকেট হ্যাডলিকে অর্থ–খ্যাতি সব দিয়েছে, চ্যাটফিল্ডকে সে অর্থে কিছুই দেয়নি। সপ্তাহে ছয় দিন ট্যাক্সি চালিয়ে তাঁর জীবন চলে। এ নিয়ে অবশ্য একটুও আক্ষেপ নেই। খেলার আনন্দটাই তাঁর কাছে বড় ছিল সব সময়। যে কারণে কিছু দিন আগ পর্যন্ত ৬৮ বছর বয়সেও ক্লাব ক্রিকেট খেলে গেছেন। বোলার হিসেবে হ্যাডলির সঙ্গে কোনো তুলনাই চলে না চ্যাটফিল্ডের। তবে হ্যাডলির চেয়ে ভালো ইকোনমি রেটই তুলে ধরেছে বোলার চ্যাটফিল্ডের পরিচয়। স্যুটেড–বুটেড হয়েই করপোরেট ট্যাক্সি চালান। এমন সুবেশী হয়েই দেখতে এসেছিলেন ওয়েলিংটন টেস্ট। বেসিন রিজার্ভে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন উৎপল শুভ্র

উৎপল শুভ্র: আপনার সঙ্গে আগে কখনো দেখা হয়নি, খেলাও খুব একটা দেখা হয়নি। তবে আপনাকে নিয়ে, রিচার্ড হ্যাডলির সঙ্গে আপনার জুটি নিয়ে অনেক পড়েছি। কী করছেন এখন আপনি?
ইউয়েন চ্যাটফিল্ড: মাত্রই তো খেলা ছাড়লাম।
শুভ্র: কয়েক দিন আগেই তো!
চ্যাটফিল্ড: হ্যাঁ, তিন সপ্তাহ আগে। এখন ওয়েলিংটনে স্থানীয় ট্যাক্সি সার্ভিসে কাজ করছি। সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করি।
শুভ্র: এ যুগের খেলোয়াড়েরা কত আয় করেন! আর এত দিন ক্রিকেট খেলার পরও আপনাকে জীবিকার জন্য ট্যাক্সি চালাতে হচ্ছে। খারাপ লাগে না?
চ্যাটফিল্ড: না, টাকাই তো সবকিছু নয়। আশির দশকে ক্রিকেটে টাকা ছিল কই? বলতে গেলে ক্রিকেটে পেশাদার যুগের সেটি মাত্র শুরু। আমি তো দলে সুযোগ পেয়ে, খেলতে পেরেই খুশি ছিলাম। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে যেতে পেরেছি। প্রায় সব দেশেই খেলেছি। আপনাদের দেশে যাইনি, কারণ তখন সেটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চ ছিল না। কখনো দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলা হয়নি, যদিও গোল্ডেন ওল্ডিজের হয়ে পরে সেখানে খেলেছি। এর বেশি আর কী চাওয়ার আছে? ক্রিকেটার না হলে হয়তো ওই দেশগুলোতে যাওয়া হতো না।
শুভ্র: আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় আপনার পেশা কী ছিল?
চ্যাটফিল্ড: একটা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে কাজ করেছি, ফ্যাক্টরিতে। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য বানাতাম প্রতিদিন। কিন্তু শেষ দিকে এসে ওরা আমার ওপর চাপ দিতে শুরু করে। কারণ, খেলার কারণে আমাকে অনেক ছুটি নিতে হতো। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম যে চাকরিটা ছেড়ে দেব। ক্রিকেট খেলব, আর যখন খেলা থাকবে না, তখন পার্টটাইম চাকরি করব। আমি চাকরি ছাড়ার দুই বছর পরই ওই কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়, তাই এমনিতেও চাকরি চলে যেত।
শুভ্র: আপনার টেস্ট অভিষেকটা তো ভয়ংকর হয়েছিল (১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অকল্যান্ডে)। ব্যাটিংয়ের সময়ের ওই ঘটনাটার কথা বলছি। ওই সময়ের কিছু কি মনে করতে পারেন-মাথায় বল লাগল, জ্ঞান ছিল এরপর?
চ্যাটফিল্ড: সবই মনে আছে। ইংল্যান্ড সে সময় মাত্র অস্ট্রেলিয়ায় হতাশাজনক একটা সফর শেষ করে এসেছে। লিলি ও টমসন ওদের ধ্বংস করে দিয়েছিল। এরপর ওরা নিউজিল্যান্ডে এল। আমি আর জিওফ হাওয়ার্থ চতুর্থ দিন ঘণ্টাখানেক ব্যাটিং করেছিলাম, এরপর এক দিন বিরতি ছিল। পঞ্চম ও শেষ দিনে আবার ঘণ্টাখানেক ব্যাট করেছি। বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল, ইংল্যান্ড পরিষ্কার বুঝতে পারছিল ম্যাচটা হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তখনই পিটার (লিভার) শর্ট বলটা করল। গ্লাভস ও ব্যাটের হ্যান্ডলের ওপরের দিকে লেগে সেটা মাথায় লাগল। তখন তো আর হেলমেট ছিল না। আমি উইকেটের পাশে গিয়ে বসে পড়লাম। ভাগ্য ভালো ছিল যে একজন খেলোয়াড় ও ইংল্যান্ডের ফিজিও (বার্নার্ড টমাস) এসে আমার উল্টে যাওয়া জিবটা বের করে আনল, যাতে বাতাস ঢুকতে পারে। এরপর তো অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে।
শুভ্র: ওই ঘটনার পর ব্যাটিংয়ে যেতে কি ভয় লাগত? ওই স্মৃতিটা ফিরে আসত?
চ্যাটফিল্ড: না, চার-পাঁচ সপ্তাহ পরই মাঠে ফিরেছি। পরের মৌসুম থেকেই হেলমেট পেলাম। এরপরও মাথায় কয়েকবার বল লেগেছে।
শুভ্র: সেই সাদা হেলমেটের দিনগুলো?
চ্যাটফিল্ড: জঘন্য ছিল সেগুলো। রিচার্ড হ্যাডলি বলেছিল, এগুলো পরলে বাইকে চড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ছেলেদের মতো মনে হয়। খুব ভারীও ছিল। টনি গ্রেগ (সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক) তো মোটরবাইকের হেলমেট পরেই খেলত। তবে না, এরপর থেকে ওটা (ব্যাটিংয়ে নামার সময় মনে ভয়) কখনোই দুশ্চিন্তায় ফেলেনি।

ইউয়েন চ্যাটফিল্ড।

শুভ্র: এই প্রশ্নটা যে আসছে, সেটা নিশ্চয়ই জানতেন। রিচার্ড হ্যাডলির সঙ্গে বোলিং। দুজন মিলে নিউজিল্যান্ড ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ওপেনিং জুটি গড়েছিলেন। হ্যাডলির সঙ্গে বোলিং করতে কেমন লাগত?
চ্যাটফিল্ড: আমি কখনোই অত গতিশীল পেসার ছিলাম না। ১৩০-এর মতো হয়তো গতি ছিল। তবে আমি লম্বা সময় ধরে একই জায়গায় বল করে যেতে পারতাম। সেটাই আমার দায়িত্ব ছিল। অন্য প্রান্তের বোলার রিচার্ড ছিল, এ-ই যা। ও অনেক উইকেট পেয়েছে, আমিও কিছু পেয়েছি। অনেকেই বলে, আমার কারণে ও এত উইকেট পেয়েছে। হয়তো, হয়তো নয়, আমি জানি না। শেষ কয়েক বছরে ও আমাকে বুঝতে পেরেছে, বুঝেছে যে আমি থাকলে ওর জন্য সুবিধা।
শুভ্র: রিচার্ড হ্যাডলি কী কারণে বিশেষ?
চ্যাটফিল্ড: ভালো খেলোয়াড় তো বটেই, ও ছিল চূড়ান্ত রকম পেশাদার। রিচার্ড জানত, ও কী চায়! টেস্টের আগে বসে লিখে রাখত, ও কী চায়, কীভাবে সেটা করতে চায়। তবে ওর প্রতি কোনো রাগ থেকে বলছি না, ও টিমম্যান হিসেবে ভালো ছিল না। তবে এটা শুধুই আমার মত। ম্যাচ জেতার দিক থেকে চিন্তা করলে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ও। এমনটা খুব বেশি হয়নি যে ওর অবদান ছাড়া আমরা জিতেছি।
শুভ্র: মাঠের বাইরে আপনাদের সম্পর্কটা কেমন ছিল?
চ্যাটফিল্ড: ততটা ভালো নয়। গত বছর ও যখন অসুস্থ ছিল, তখন কয়েকবার ফোন করে কথা বলেছি। তবে সত্যি বলতে, হয়তো যতবার করা উচিত ছিল, ততবার করিনি। সমস্যাটা এখানেই, আপনি যত দিন খেলবেন, তত দিন বন্ধুত্বটা থাকে, কিন্তু ক্যারিয়ার শেষে একেকজন একেক দিকে চলে যায়। পুনর্মিলনী জাতীয় কিছু না হলে একজনের সঙ্গে অন্যজনের দেখাই হয় না। সেটি তো আর খুব বেশি হয় না। হয়তো অনেক বছর পর একজনের সঙ্গে অন্যজনের দেখা হয়, কারও কারও সঙ্গে কখনোই দেখা হয় না। কিন্তু জীবন এমনই।
শুভ্র: নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলার সময়ে আপনার সবচেয়ে গর্বের মুহূর্ত কোনটি?
চ্যাটফিল্ড: ’ ৮৫-তে ডানেডিনে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই টেস্ট। জেরি (জেরেমি কোনি) ও আমি মিলে শেষ উইকেটে ৫০ রান করে দলকে জিতিয়েছিলাম। ব্যাটিং কখনোই আমার শক্তির জায়গা ছিল না। তারপরও দলের জন্য কিছু করার তীব্র ইচ্ছার কারণে সেটা করতে পেরেছিলাম। আমি কখনো নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে ভাবতাম না। পরিসংখ্যান আমার কাছে কখনোই বড় কিছু ছিল না। অনেক পরিসংখ্যান তো আমার মনেও নেই। আমার শুধু খেলতেই ভালো লাগত। দল কী করছে, তাতেই বেশি আগ্রহ ছিল আমার। আমরা অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো প্রথম দল, অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে সিরিজ জেতা প্রথম দল, ইংল্যান্ডে জেতা প্রথম দল...ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের চেয়ে এগুলোই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
শুভ্র: আপনি সপ্তাহে ছয় দিন ট্যাক্সি চালান। এখনো ক্রিকেটের খোঁজখবর রাখেন?
চ্যাটফিল্ড: বাড়িতে তো স্কাই টিভি নেই। তাই খেলা খুব একটা দেখা হয় না। রেডিওতে শুনি। ক্রিকইনফোতে খোঁজখবর নিই।
শুভ্র: আপনার জীবন নিয়ে আপনি খুশি? কোনো আক্ষেপ নেই?
চ্যাটফিল্ড: না। আমি খুশি। হয়তো আরও ভালো থাকতে পারতাম, কিন্তু সেটা হচ্ছে না। যা আছে, তা-ই ভালো। আমাকে এভাবে কাজ করে যেতে হবে। করে যাব। কোনো আক্ষেপ নেই।

ইউয়েন চ্যাটফিল্ড (১৯৭৫-১৯৮৯)

 

ম্যাচ

উইকেট

সেরা

গড়

টেস্ট

৪৩

১২৩

৬/২৩

৩২.১৭

ওয়ানডে

১১৪

১৪০

৫/৩৪

২৫.৮৪

নিউজিল্যান্ডের যেসব বোলার টেস্টে ১০০ উইকেট নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ওভারপ্রতি সবচেয়ে কম রান দিয়েছেন চ্যাটফিল্ড (২.২৯)