Thank you for trying Sticky AMP!!

বিপিএলে আজ সেঞ্চুরির পর তানজিদ

তানজিদ তামিম যখন সবার মধ্যমণি

ম্যাচসেরার পুরস্কারটা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনকক্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময়ই গ্যালারি থেকে ‘তামিম’, ‘তামিম’ চিৎকার শুরু। আরেকটু কাছে আসতেই কয়েকজন ভক্তের সেলফির আবদার। তামিম ডাকনামের তানজিদ হাসান সেদিকে হাত তুলে বললেন, ‘এসে দিচ্ছি।’ এরপর তড়িঘড়ি করে ঢুকে পড়লেন সংবাদ সম্মেলনকক্ষে। ঢুকেই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স দলের মিডিয়া ম্যানেজারকে ফিসফিস করে বললেন, ‘আজ একটু ছোট করতে বলেন।’

Also Read: হাবিবুল বাশার চালাবেন মেয়েদের ক্রিকেট

কিন্তু তানজিদ সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি করে। এবারের বিপিএলের তৃতীয় সেঞ্চুরি করে দলের প্লে–অফও নিশ্চিত করেছেন। যা এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসও। ১৭৮ স্ট্রাইক রেটে ৬৫ বলে ১১৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের পর সংবাদ সম্মেলন কি আর ছোট হয়!

শুরুটা হলো তানজিদেরই বক্তব্য দিয়ে। ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দলের প্রতিনিধি হিসেবে বললেন, ‘অনেক ভালো একটা ম্যাচ হয়েছে আমাদের। আমরা প্লে-অফ নিশ্চিত করেছি, এটা সবচেয়ে ভালো বিষয়। দলের সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। সবাই এই জয়টা ভাষাশহীদদের উৎসর্গ করেছে। আমরা সবাই অনেক খুশি। যাঁরা আমাদের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা এই জয়টা তাঁদের উৎসর্গ করছি।’

আউট হয়ে ফেরার সময় প্রতিপক্ষ দলের এনামুল হকের অভিনন্দন পেলেন তানজিদ

নিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিটা কাকে উৎসর্গ করেছেন তানজিদ? এটাও ব্যতিক্রমী, ‘আমার ছোট একটা ভাগনে আছে। সব সময় ওর সঙ্গে কথা হয়, ম্যাচের আগের দিন মাঠে আসার আগেও। ছয় বললে ছয় দেখায়, আউট বললে আউট দেখায় (হাসি)। আমার সেঞ্চুরিটা ওকে উৎসর্গ করতে চাই।’ সেঞ্চুরিটা তানজিদের মা–বাবাকেও অনেক খুশি করবে, ‘আমার মনে হয়, এই সেঞ্চুরির পর মা–বাবা সবচেয়ে খুশি হয়েছে। আমার বাবা এখন আমাকে নিয়ে অনেক গর্ব করে। এটা নিজের কাছে অনেক ভালো লাগে।’

Also Read: মারুফার সেই বোলিং ক্রিকইনফোর বর্ষসেরা

আগের ম্যাচে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ওপেনিংয়ে নেমে তানজিদ ব্যাটিং করেছেন ১৯তম ওভার পর্যন্ত। সেদিন ৫১ বল খেলে করেছেন ৭০ রান। আজ আউট হয়েছেন ১৯তম ওভারে। দুটি ইনিংসে লম্বা সময় ক্রিজে থাকতে পারার কারণেই তানজিদ পেয়ে গেছেন সেঞ্চুরির মঞ্চ, ‘আমি আগে যা করছিলাম, সেট হয়ে আউট হয়ে যাচ্ছিলাম। চেষ্টা করছিলাম ভালো শুরু করার পর সেখান থেকে ক্যারি করতে। এটাই চেষ্টা করছি আজকে।’

তানজিদের ইনিংসের সিংহভাগ রান এসেছে বাঁহাতি স্পিনের বিপক্ষে। খুলনার দুই বাঁহাতি স্পিনার আরিফ আহমেদ ও নাসুম আহমেদের বলে তানজিদ নিয়েছেন ৫৮ রান। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে বাঁহাতি স্পিনের বিপক্ষে ‘ম্যাচআপ’ তানজিদের পক্ষে ছিল। আর তানজিদকে দমিয়ে রাখার জন্য খুলনার একাদশে ছিল না কোনো অফ স্পিনার। সেই সুযোগ তিনি দুহাতে লুফে নিয়েছেন, ‘ওই দলে কোনো অফ স্পিনার ছিল না। আমি যেহেতু সেট ব্যাটসম্যান ছিলাম, আমার লক্ষ্য ছিল যদি আমার জোনে পাই, তাহলে আমি বাউন্ডারির জন্য যাব।’

সেঞ্চুরির পর তানজিদের উদ্‌যাপন

চট্টগ্রামের উইকেটও তানজিদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বিপিএলে শুরুটা ভালো না হলেও চট্টগ্রামে এসে ধারাবাহিকভাবে রান পাচ্ছেন। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা ৪ ম্যাচে তানজিদের রান ২৪০। সব মিলিয়ে ১১ ম্যাচে রান ৩৮২, এখন পর্যন্ত বিপিএলে যা কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চও।

Also Read: হাসারাঙ্গার টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেট, টেস্টে মাত্র ৪টি—দুই সংস্করণে এমন বৈষম্যে মোস্তাফিজ কোথায়

টুর্নামেন্টের শুরুতে যদি এই ছন্দে ব্যাটিং করতে পারতেন, তাহলে হয়তো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও জায়গা হতো তানজিদের। এ নিয়ে অবশ্য তানজিদের আক্ষেপ নেই। তাঁর দর্শন যে খুব সরল, ‘কখনোই আফসোস করি না। তাঁরা (নির্বাচকেরা) যেটা ভালো মনে করেছেন, সেটাই করেছেন। আমার কাজ রান করা, পারফর্ম করা, আমি সেটাই করে যাব, বাকি সব আল্লাহর ইচ্ছা।’

আফসোস থাকলেও হয়তো প্রকাশ্যে তা বলতে চান না। উল্টো সংবাদ সম্মেলনকক্ষ থেকে বের হলেন মুখে চওড়া হাসি নিয়ে। ড্রেসিংরুমের দিকে যেতে যেতে ১০-১২ জনের সেলফির আবদার মেটালেন। দিনটা যে তানজিদেরই! সবার আলোচনার মধ্যমণি বগুড়ার এই তরুণ ওপেনার। ড্রেসিংরুমে প্লে–অফে জায়গা নিশ্চিত করে নেওয়ায় চট্টগ্রামের উদ্‌যাপনটাও তানজিদ ফেরার পরই শুরু হলো। টিম হোটেলেও চলল যে উদ্‌যাপন।