Thank you for trying Sticky AMP!!

জয়ের পর উদ্‌যাপন বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়দের

পিছিয়ে পড়েও মোহনবাগানকে হারিয়ে কিংসের আনন্দময় রাত

এএফসি কাপে নিজেদের ইতিহাসে সেরা ম্যাচটাই কি আজ খেলল বসুন্ধরা কিংস? হয়তো তা-ই। সাম্প্রতিক অতীতে আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চারবারের শিরোপাধারীদের এত ক্ষুরধার আর দেখা যায়নি। নিজেদের মাঠে কিংস কখনো হারেনি। সেই রেকর্ডটা আজও ধরে রাখল কলকাতার ঐতিহ্যবাহী এই দলটির বিপক্ষে।

মোহনবাগান সুপার জায়ান্টসকে কিংস আজ পিছিয়ে পড়েও হারিয়েছে ২-১ গোলে। এই জয়ে গ্রুপ ‘ডি’তে শীর্ষে উঠে এল তারা। কিংসের পয়েন্ট ৪ ম্যাচে ৭। মোহনবাগানের পয়েন্টও ৭। তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে জেতায় মোহনবাগানকে টপকে গ্রুপ শীর্ষে কিংসই।

Also Read: পিছিয়ে পড়েও ম্যাচে ফিরেছে বসুন্ধরা কিংস

কিংসের খেলা রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে মাঠে আসা দর্শকদের মধ্যেও। রবসন দা সিলভা, মিগেল—এই দুজন ছিলেন বসুন্ধরা কিংসের সেরা দুই খেলোয়াড়। মধ্যমাঠে দিদিয়ের ছিলেন আক্রমণের সমন্বয়কারী। আক্রমণে রাকিব হোসেনও খেলেছেন ভালো। তবে এ ম্যাচের পর আলাদা করে কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন নিশ্চয়ই কথা বলবেন আরেক ব্রাজিলিয়ান দরিয়েলতন গোমেজের সঙ্গে। দুটি গোল যে তিনি পেতেই পারতেন। কিন্তু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে গোলের পর গোল করা এই দরিয়েলতনের মিস দুটি ছিল চোখের জন্য পীড়াদায়ক।

গোলের পর উল্লাস বসুন্ধরার খেলোয়াড়ের

শুরু থেকেই মোহনবাগানের ওপর প্রাধান্য নিয়ে খেলেছে কিংস। তবে মোহনবাগানও আক্রমণে উঠেছে ভালোভাবেই। গোলের সুযোগও তৈরি করেছে। যদিও মনে হয়েছে ম্যাচটা ড্র করতেই নেমেছিল তারা। এর মধ্যেও দুই দলের লড়াই উত্তাপ ছড়িয়েছে প্রায়ই। দুই দলের খেলোয়াড়েরাও বারবারই একে অন্যের চোখে চোখ রাখছিলেন। তবে রেফারি শক্ত হাতে সেই মুহূর্তগুলো সামলেছেন।

ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই কিংস অ্যারেনার দর্শকেরা গোলের উল্লাসটা প্রায় করেই ফেলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হতাশই হতে হয় তাদের। রবসন দা সিলভার কাছ থেকে বল পেয়ে মোহনবাগানের গোলমুখে দারুণ এক থ্রু বাড়িয়েছিলেন মিগুয়েল ফেরেইরা। কিন্তু দরিয়েলতন মোহনবাগান গোলকিপার বিশাল কাইতকে ফাঁকা পেয়েও গোল করতে পারেননি। রবসন-মিগুয়েল-দরিয়েলতন-দিদিয়েররা শুরু থেকেই মোহনবাগান রক্ষণকে চাপে রেখেছিলেন।

Also Read: ঢাকায় দুই বাংলার ফুটবল মহারণ

তবে ৬ মিনিটে মোহনবাগান গোল পেতে পারত। তরুণ গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবণ ভুল করে বল তুলে দিয়েছিলেন মোহনবাগান ফরোয়ার্ডের পায়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বিপদ সামাল দিয়েছেন বসুন্ধরার রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা। ১৩ মিনিটে রবসনের একটি দারুণ বাঁকানো শট অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। তবে বসুন্ধরার রক্ষণ সেনাদের ভুলেই মোহনবাগান মোটামুটি খেলার ধারার বিপরীতে গোল করে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। রাইটব্যাককে বোকা বানিয়ে মোহনবাগানের অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড জেসন কামিন্স গোলমুখে যে শটটি করেন, সেটি কিংসের তরুণ গোলকিপার মেহেদী হাসান ঠিকমতো ফিস্ট করতে পারেননি। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বসুন্ধরার ডিফেন্ডাররা বল ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন কোলাসো।

২১ মিনিটে দরিয়েলতন যে সুযোগটি মিস করেছেন, সেটি আরও দৃষ্টিকটু। দিদিয়েরের থ্রু থেকে বল পেয়ে মোহনবাগানের গোলপোস্টের ওপর দিয়ে মেরে দেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার। তবে ৪৩ মিনিটে দারুণ এক শটে গোল করে কিংসকে সমতায় ফেরান ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগুয়েল ফেরেইরা। বক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির শটে বল পাঠান জালে। গোলকিপার বিশাল কাইতকে কোনো সুযোগই দেননি তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় পুরোটা সময়ই মোহনবাগানকে চেপে ধরে খেলেছে কিংস। খেলা বেশির ভাগ সময়ই হয়েছে মোহনবাগানের অর্ধেই। রাকিব, অন্যদিকে মিগুয়েল, রবসন, দিদিয়েররা ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিলেন মোহনবাগান রক্ষণকে। তবে এই অর্ধে কিংস নিজেদের কিছুটা দুর্ভাগা ভাবতেই পারে। ৫১ মিনিটে মিগেলের পাস থেকে রবসনের শট যে কীভাবে পোস্টে লেগে ফেরত এল, সেটি এক রহস্য। রবসনের শটে মোহনবাগানের গোলকিপার কাইত ছিলেন একেবারেই পরাস্ত।

Also Read: মাজিয়ার কাছে বড় হার কিংসের

এই অর্ধে দর্শকদের হতাশার জায়গাটা ছিল কিংসের সুযোগ নষ্ট। একের পর এক আক্রমণ, একের পর এক সুযোগ তৈরি, কিন্তু গোলটাই শুধু হচ্ছিল না। এর মাঝে মোহনবাগানও সুযোগ তৈরি করেছে। তবে বসুন্ধরার রক্ষণ দ্বিতীয়ার্ধে ছিল বেশ গোছালো। একের পর এক আক্রমণে যখন গোল আসছিল না। ঠিক তখনই বসুন্ধরার সমর্থকদের সেরা মুহূর্তটি এনে দেন রবসন।

মোহনবাগানের গোলে ম্যাচে পিছিয়ে পড়েছিল বসুন্ধরা

দিদিয়েরের কাছ থেকে থ্রু পেয়েছিলেন দরিয়েলতন। কিন্তু তিনি গোলে শট নিতে দেরি করছিলেন। কিন্তু বল হারাননি। সেটিই বাড়িয়ে দেন পেছন থেকে এগিয়ে আসা রবসনের দিকে। এবার রবসন আর দেরি করেননি। কিংস অ্যারেনাকে উল্লাসে মাতিয়ে দলকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেন তিনি। ম্যাচজুড়ে দারুণ খেলেছেন রবসন। গোলটা যেন ছিল তাঁর প্রাপ্যই। জয়টাও ছিল বসুন্ধরা কিংসের প্রাপ্যই।