Thank you for trying Sticky AMP!!

শ্রীরাম নিজের ঢোল নিজেই পেটাচ্ছেন

আরও একটা বাংলাদেশের ম্যাচ। আরও একটি বিতর্ক। পাঠকের বুঝে যাওয়ার কথা কী প্রসঙ্গে বলতে চাইছি। হ্যাঁ, পাকিস্তানের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের আউটের কথাই বলছি। সাকিবের সেই বিতর্কিত আউটটির সঙ্গে তাসকিনের প্রথম ওভারের সেই সুযোগ হাতছাড়া করাটা জুড়ে দেওয়া যাক। ওই দুটি ঘটনা আমাদের পক্ষে গেলে ম্যাচের ফলাফলটা অন্য রকম হতে পারত কি না, সেটা আমরা কোনো দিনই জানতে পারব না।

তবে আমরা যা জানি, দারুণ উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। কে জানত, আজ এমন কিছু হয়ে যাবে! পাকিস্তান-বাংলাদেশের তো কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। নেদারল্যান্ডসের অবিশ্বাস্য জয়ে সেই সম্ভাবনার জন্ম হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদেরই দোষে দুর্দান্ত দল নিয়েও সেমিফাইনাল খেলতে পারল না।

Also Read: বিমানে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করে ফেলেছিল ডাচরা

নেদারল্যান্ডসকে কৃতিত্ব দিতেই হয়, তাদের ক্রিকেট কতটা এগিয়েছে বড় মঞ্চে, সেই ছাপ রেখে গেল তারা। শুধু নেদারল্যান্ডস নয়, সহযোগী সদস্যদেশগুলো যেভাবে এগিয়েছে, মনে হচ্ছিল, খুব দ্রুতই তারা বাংলাদেশের মতো দলগুলোকে ধরে ফেলবে।

আমাদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যদি ঠিক না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন হবে। এমন একটা কথা আমরা কিছুদিন ধরেই বলছিলাম। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ দেখিয়ে দিল, যেটা ভবিষ্যতে হতে পারে বলে ধরে নিয়েছিলাম, সেটা এর মধ্যে ঘটে গেছে। আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের জয় যেটির প্রমাণ।

নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ডের মতো দলগুলো এর মধ্যেই আমাদের চেয়ে ভালো খেলতে শুরু করেছে, যা আমাদের জন্য আশঙ্কাজনক। আমরা এবারের বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ জিতেছি ঠিকই, কিন্তু এ সংস্করণে আমাদের ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল বা অনুজ্জ্বল, সেই প্রশ্নও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

লিটন দ্রুত আউট হয়ে গেলেও নাজমুল গত ম্যাচের মন্থরভাব কাটিয়ে বেশ ভালো খেলছিল।

আজকের ম্যাচের প্রসঙ্গে যদি ফিরি, আমাদের বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুটা ভালো হয়েছিল। লিটন দ্রুত আউট হয়ে গেলেও নাজমুল গত ম্যাচের মন্থরভাব কাটিয়ে বেশ ভালো খেলছিল। সৌম্যও দলে ফিরে ভালো একটা মঞ্চ গড়ে দিতে সক্ষম হয়। ১০ ওভারে ৭০ রান কিন্তু খারাপ নয়। এবারের বিশ্বকাপে শুরুর ১০ ওভারে সফল দলগুলো এমন রানই করেছে। সেখান থেকে দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ।

Also Read: সাকিবের আউট নিয়ে যা বললেন মুশফিক

এর মধ্যে সাকিবের আউটটা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বলে নিই, ম্যাচের ওই অবস্থায় আমাদের ব্যাটিংটা অসম্ভব রক্ষণাত্মক মনে হয়েছে। আমরা আগ্রাসী মানসিকতাটা ধরে রাখতে পারতাম। পাকিস্তান ভালো বোলিং দল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের মানসিকতাটা তাদের কাজটা সহজ করে দিয়েছে। একমাত্র আফিফকে ইতিবাচক মনে হয়েছে, শেষে যা রান এসেছে, সেটা তার ব্যাট থেকেই এসেছে।

ব্যাটিং কোচের বিষয়টি আলোচনায় আসা উচিত।

এ প্রসঙ্গে ব্যাটিং কোচের বিষয়টি আলোচনায় আসা উচিত। তিনি দীর্ঘ সময় দলের সঙ্গে কাজ করছেন। কিন্তু তাঁর সময়ে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার যে চিত্র দেখেছি, সেটা খুব ব্যথিত করেছে। প্রতিটা ম্যাচেই বাংলাদেশ ব্যাটিং এক অর্থে ব্যর্থই ছিল। আমরা দুটি ম্যাচ জিতেছি বোলিং শক্তির কারণে। আজও যা একটু আশা ছিল, সেটা ওই বোলিংয়ের কারণেই। লিটনের ওই একটা ইনিংস, নাজমুলের দুটি—এই হলো আমাদের ব্যাটিংয়ের প্রাপ্তি। এর বাইরে তেমন কিছু নেই।

এখন না বলে পারছি না, মোসাদ্দেক ও মিরাজের টি–টোয়েন্টিতে অন্তর্ভুক্তি আমাকে অবাক করেছে। মোসাদ্দেক ব্যাটসম্যান না বোলার হিসেবে খেলছে, আমি ঠিক জানি না। মিরাজকে ওয়ানডে ও টেস্টেই আমার বেশি মানানসই মনে হয়।

এ ক্ষেত্রে শেখ মেহেদী হাসানের নামটা মনে পড়ে। আমার মনে হয় শেখ মেহেদী খুবই সাহসী একজন ক্রিকেটার। নতুন বলে বল করতে পারে। ব্যাটিংও চলনসই। সে কন্ডিশননির্ভর বোলার নয়। তাকে ম্যাচের যেকোনো অবস্থায় ব্যবহার করা যায়।

আর মাহমুদউল্লাহর মতো একজন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের অভাবও টের পেয়েছি। লেট মিডল অর্ডারে তার মতো একজনের উপস্থিতি এমন বড় ম্যাচগুলোয় কাজে দিত। নতুন কোচরা এসে একটা-দুটি নেট সেশন ও ম্যাচ দেখে অনেককেই খুব ভালো খেলোয়াড়ের ছাড়পত্র দিয়ে দেন। এটা বেশির ভাগ সময় কাজ করে না।

Also Read: ‘এটাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা টুর্নামেন্ট’

শ্রীধরন শ্রীরাম এবারের বিশ্বকাপকে বাংলাদেশের সেরা বিশ্বকাপ ঘোষণা দিয়েছেন। আমার মনে হয়, এই মূল্যায়ন আমাদের হাতে ছেড়ে দেওয়াই ভালো।

আমরা দুটি ম্যাচ জিতেছি ঠিকই, তবে বিশ্বকাপজুড়ে ব্যাটিং নিয়ে ভীষণ অনিশ্চয়তার মধ্যেও ছিলাম। পাশাপাশি র‍্যাঙ্কিংয়ের নিচু সারির দলগুলোর সঙ্গে আমাদের জিততে কষ্ট হয়েছে। আমরা যখন মূল্যায়ন করব, তখন এ বিষয়গুলোও আসা দরকার। ব্যবচ্ছেদ করলে আমরা এমন কিছু জায়গা পাব, যেখানে আমরা খুব ভালো করিনি। আমরা দলের পাশে ছিলাম, সব সময় থাকবও। কিন্তু মূল্যায়নটা সঠিক হওয়া জরুরি।

আমি কিছুটা হতাশ, কোচ দুটি জয় নিয়েই স্বস্তিতে আছেন। তিনি কিছুটা নিজের ঢোল নিজেই বাজাচ্ছেন। এই পারফরম্যান্স যাকে স্বস্তি দেয়, যিনি একে ভালো পারফরম্যান্স বলেন, তার হাতে দলের দায়িত্ব দেওয়ার আগে একটু ভেবে দেখা দরকার। যদি এমন পারফরম্যান্সের পরও কোচের মধ্যে অতৃপ্তি দেখতাম, তাহলে ভালো লাগত।

শ্রীরামের পরিকল্পনায় বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অনেকটা সময় মিরাজ ও সাব্বিরকে নিয়ে নষ্ট করেছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত যারা খেলেছে, তাদের অনেক চাপ নিতে হয়েছে।

আমরা যদি নাজমুল-সৌম্যদের আরও সময় দিতাম, তাদের ওপর শুরু থেকে আস্থা রাখতাম, তাহলে হয়তো আরও ভালো খেলত ওপেনাররা। এসব দ্বিধা নিয়ে সাধারণত ভালো খেলা আশা করা যায় না। এই ধারাবাহিক ব্যাটিং ব্যর্থতার দায় ব্যাটিং কোচেরও নেওয়া উচিত। ভাগ্য ভালো, এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলিং ছিল অসাধারণ। বোলিংয়ের সৌজন্যেই আমরা দুটি ম্যাচ জিততে পেরেছি।

যে সাকিবকে বিশ্বকাপে প্রত্যাশা করেছিলাম, তাকে আমরা পাইনি।

শেষ করব সাকিবের কথা দিয়ে। আজ সাকিবের আউট নিয়ে টম মুডিকে দেখলাম প্রশ্ন তুলতে। সে যে আউট ছিল না, এটা প্রায় নিশ্চিতই। তবে এটাও সত্যি, যে সাকিবকে বিশ্বকাপে প্রত্যাশা করেছিলাম, তাকে আমরা পাইনি। অধিনায়ক হিসেবে সে অসাধারণ। কিন্তু তার কাছে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্সটা পাইনি। বিশেষ করে তার ব্যাটিং ব্যর্থতাটা দলকে বেশ ভুগিয়েছে। বোলিংয়েও সে ধার দেখিনি।

আমি নিশ্চিত, সাকিবের পারফরম্যান্সে হতাশ হয়েছে অনেকেই। হয়তোবা সে নিজেও।