Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতকে জেতানোর পর কোহলির উদ্‌যাপন

মেলবোর্নের রোমাঞ্চে কোহলির কাছে হারল পাকিস্তান

৮ বলে দরকার ২৮ রান– বিরাট কোহলি নিজেও কি তখন বিশ্বাস করতে পেরেছিলেন?

বোলিংয়ে হারিস রউফ। বিগ ব্যাশে মেলবোর্ন স্টার্সে খেলার সুবাদে এমসিজি যার ঘরের মাঠ। ২০২০ সালের পর থেকে টি–টোয়েন্টি ডেথ বোলিংয়ে সবচেয়ে বেশি ৩৭ উইকেটও যার। কিন্তু আজ যে কোহলিরই দিন। এমসিজির ৯০ হাজার ২৯৩ জন দর্শকের সামনে নিজের বীরত্ব দেখানোর দিন।

রউফের স্লোয়ারে তাই সোজা ব্যাটে মাথার ওপর দিয়ে বাউন্ডারি পার– ছয়। পরের বলে ফ্লিক করে ফাইন লেগে দিয়ে আবারও ছয়। নিমিষেই লক্ষ্য নেমে এলো ৬ বলে ১৬ রানে।

Also Read: রোহিতের চোখের জল বৃথা যেতে দেননি কোহলি

শেষ ৬ বলেও হলো আরও নাটকীয়তা। ম্যাচ কিছুটা পাকিস্তানের দিকে হেলেও যায়। কিন্তু কোহলির অমন বীরত্বের পর ভারত না জিতলে যে অবিচারই হয়!

শেষ বলে তাই রবীচন্দ্রন অশ্বিনের সিঙ্গেলে ভারত পেয়ে যায় ৪ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয়।

এমসিজির ভরা গ্যালারির সামনে উৎসব শুরু হয়ে যায় কোহলিকে নিয়ে। পাকিস্তানের ১৫৯ রানতাড়ায় ৩১ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরও যে দুর্দান্ত এই জয়, তার কৃতিত্ব যে কোহলির ৫৩ বলে ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংসটিরই।

এ নিয়ে চতুর্থবার টি–টোয়েন্টিতে ম্যাচের শেষ বলে জিতল ভারত।

রানতাড়ায় শেষ ওভারে ১৬ দরকার ছিল ভারতের। নেওয়াজের প্রথম বলেই বল আকাশে তুলে বাবর আজমের সহজ ক্যাচ হন হার্দিক পান্ডিয়া। পরের বলে দিনেশ কার্তিক সিঙ্গেল নিলে লক্ষ্যটা হয়ে যায় আরও বড়। ৪ বলে ১৫ রান।

তৃতীয় বলটি লং অনে পাঠিয়ে ২ রান নেন কোহলি। পরের বলটিতে নেওয়াজ দেন কোমর–উচ্চতার ‘নো’। সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোহলি উড়িয়ে পাঠান বাউন্ডারির বাইরে। লক্ষ্য নেমে আসে ৩ বলে ৭ রানে। নেওয়াজ ওয়াইড আর অতিরিক্ত ‘বাই’ থেকে আরও তিন রান এলে জয় চলে আসে ভারতের মুঠোয়।

তবে নাটকীয়তার বাকি ছিল তখনো।

Also Read: ‘নো’ বল আর ফ্রি হিট বোল্ডে আইসিসির নিয়ম কী বলে

পঞ্চম বলে কার্তিক স্টাম্পিং হয়ে গেলে ম্যাচ গড়ায় শেষ বলে। স্ট্রাইকে নতুন ব্যাটসম্যান অশ্বিন। চাপে পড়ে আবারও ওয়াইড দিয়ে বসেন নেওয়াজ। সমীকরণ নেমে আসে ১ বলে ১ রানে।

ঠাণ্ডা মাথায় মিড অফ পার করে যা সহজেই তুলে নেন অশ্বিন। ভারত পেয়ে যায় টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম জয়।

পাকিস্তানের পেস আক্রমণের মুখে পাওয়ার প্লেতেই ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত। নাসিম শাহর বলে লোকেশ রাহুল বোল্ড হওয়ার পর রোহিত আর সূর্যকুমার যাদবকে তুলে নেন রউফ। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে রানআউট হন অক্ষর প্যাটেল। ভারত তখন ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে। সেখান থেকে পরের ১৩ ওভারে ১১৩ রানের জুটি গড়েন কোহলি–পান্ডিয়া।

৩৭ বলে ৪০ রান করা পান্ডিয়া আউট হন শেষ ওভারের প্রথম বলে। যা বাধা মাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত জয় ভারতেরই।

বিরাট কোহলি

এর আগে ম্যাচের শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানেরও। বাবরের টস হার দিয়ে শুরু। মাঠে নামার পর ভুবনেশ্বর কুমারের দ্বিতীয় বলেই হাতে আঘাত পান মোহাম্মদ রিজওয়ান। এরপর দ্বিতীয় ওভারে অর্শদীপের প্রথম বলেই আউট অধিনায়ক বাবর।

তিন বল পর রানআউট হতে হতে কোনোমতে বেঁচে ফেরেন শান মাসুদ। প্রথম দুই ওভারেই রীতিমতো জেরবার অবস্থা পাকিস্তানের। বিপত্তির অবশ্য সেখানেই শেষ নয়। শুরুতেই হাতে আঘাত পাওয়া রিজওয়ানের ব্যাট যেন আর কথাই শুনছিল না।

একের পর এক বল মিস করতে করতে একপর্যায়ে ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দেন ভুবনেশ্বরের হাতে। ১২ বলে ৪ রান করে শেষ হয় রিজওয়ানের ইনিংস।

Also Read: ওয়ার্নের চোখে ভিভ সেরা, তবে কোহলি...

রিজওয়ানের আউটে অবশ্য মুল কৃতিত্ব অর্শদীপের। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পাকিস্তানের কাছে ভারতের হারে অনেকেই দোষারোপ করেছিলেন বাঁহাতি এ পেসারকে। সেদিন আসিফ আলীর ক্যাচ ছেড়ে যে পরিমাণ ট্রলের শিকার হয়েছিলেন, আরেকবার পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার মুহূর্তে চরম চাপে থাকার কথা তাঁর।

কিন্তু ২৩ বছর বয়সী অর্শদীপ যেন সমালোচনার জবাব দিতেই নেমেছেন এদিন। দারুণ এক ইনসুইংয়ে প্রথম বলেই এলবির ফাঁদে ফেলেছেন বাবরকে। বলে–ব্যাট লাগাতে সংগ্রাম করা রিজওয়ানকে বিভ্রান্ত করেন গতিতে, হুক শট খেলতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দেন টি–টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান।

অর্শদীপের প্রথম বলেই এলবির ফাঁদে পড়েন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম

রিজওয়ান নেই, বাবরও নেই। ১৫ রানে ২ উইকেট হারানো পাকিস্তান তখন মিডল অর্ডারে তাকিয়ে। যে মিডল অর্ডার গত কয়েকটি সিরিজ ধরে রান না পাওয়ায় তুমুলভাবে সমালোচিত।

মিডল অর্ডারের সব ব্যাটসম্যানের মধ্যে আবার ইফতিখার আহমেদ ছিলেন মহাচাপে। গত দুই মাস ধরে টানা ১৮ ম্যাচ খেলেছেন। একবারও চল্লিশের ঘরে যেতে পারেননি। ৩৬ টি–টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে তাঁর শেষ এবং একমাত্র পঞ্চাশই সেই ২০১৯ সালের। সিরিজের পর সিরিজ দল যে তাঁকে বহন করে চলেছে, তার মোক্ষম প্রতিদান দেওয়ার সুযোগই ছিল আজ।

সেই সুযোগটাই কাজে লাগালেন ইফতিখার। প্রথম মাসুদের সঙ্গে মিলে মনোযোগ দেন বিপর্যয়ে সামালে। ইনিংসের প্রথম ৮ ওভারের ডটই চলে যায় ৩১ বল। পাকিস্তানের রান ১০ ওভারশেষে দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৬০–এ।

ততক্ষণ পর্যন্ত বেশ স্বস্তিতেই ছিল ভারত। কিন্তু পানিপানের সংক্ষিপ্ত বিরতির পরই যেন আড়মোড়া ভাঙেন ইফতিখার–মাসুদ। বিশেষ করে ইফতিখার। ১২তম ওভারে বোলিং করতে আসা অক্ষর প্যাটেলের প্রথম চার বলের তিনটিকেই ছয় বানিয়ে মাঠছাড়া করেন। ওভারের শেষ বলে ৩ রান নিয়ে পূর্ণ করেন ফিফটিও।

৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন অর্শদীপ সিং

পরের ওভারে দ্বিতীয় বলেই অবশ্য মোহাম্মদ শামির বলে এলবিতে কাটা পড়েন ইফতিখার। ৩৪ বলে ৫১ রান করা ইফতিখারের পরপর শাদাব আর হায়দার আলীর উইকেটও পেয়ে যায় ভারত। দুটিই নেন পান্ডিয়া। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি নেওয়াজ আর আসিফ আলীও।

১৭ ওভারের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের রান তখন ১২৫। তবে চোট কাটিয়ে ফেরা শাহিন আর হারিসের ছোট্ট দুটি ক্যামিওতে ভর করে দেড় শ পেরিয়ে যায় পাকিস্তান। মাসুদ অপরাজিত থাকেন ৪২ বলে ৫২ রানে।

যদিও শেষপর্যন্ত তাঁর এই ইনিংস বিফলেই গেছে। কোহলির অমন বীরত্বের পর যাবে না–ই–বা কেন?