Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতের বিপক্ষে আজ পুনেতে ৪৩ বলে ৫১ রান করেছেন তানজিদ হাসান তামিম

সেই বিশ্বকাপ, সেই ভারত, অন্য তামিম

তামিম ইকবালকে ক্রিকেট–বিশ্ব কিভাবে চিনেছিল? চিনেছিল বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৫১ রানের একটা ইনিংসে। ২০০৭ বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে স্মরণীয় সেই জয়। যেটির রূপকার হিসেবে একজনের নাম বলা ঠিক হবে না। বোলিংয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার ৪ উইকেট। এরপর ব্যাটিংয়ে তিন তরুণ তুর্কির অর্ধশতক। মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানও রাঙিয়ে তুলেছিলেন বিশ্বকাপে অভিষেকের লগ্নটাকে। তবে ওই ম্যাচের কথা উঠলে বাকি সব ছাপিয়ে প্রথমেই চোখে ভাসে তামিম ইকবালের উদ্ধত ব্যাটিং। ডাউন দ্য উইকেট গিয়ে জহির খানকে সোজা তুলে মারা ছক্কা।

সময় বদলে গেছে বলেই ১৬ বছর আগে তামিম ইকবালের ৫১ রানের ইনিংস ভারতীয় সাংবাদিকদের যেমন বিমূঢ় করে দিয়েছিল, তানজিদ তামিমের ইনিংসে তেমন কিছু হলো না। তখন বাংলাদেশের তরুণের ব্যাটসম্যানের অমন রণমূর্তি যে বড় এক বিস্ময় হয়ে এসেছিল। স্ট্রোকের ছটার সঙ্গে তাঁর যুদ্ধংদেহী শরীরী ভাষা যোগ হয়ে পোর্ট অব স্পেনের প্রেসবক্সের সেই আবহটা এখনো স্পষ্ট মনে করতে পারি। অকালপ্রয়াত কলকাতার সাংবাদিক বন্ধুর কথাটাও কানে বাজে, ‘এ তোরা কাকে নামিয়ে দিয়েছিস! এ তো দেখছি সনাৎ জয়াসুরিয়া রে!’

১৬ বছর পর আরেকটি বিশ্বকাপ, প্রতিপক্ষ সেই ভারত, আবার তামিমের ৫১। এই ৫১-তেও আছে দারুণ কিছু শট। যশপ্রীত বুমরাকে হুক করে ছক্কা। শার্দূল ঠাকুরের পরপর তিন বলে ৬ ৪ ৬। বিশ্বকাপে ভারতের জন্য আবারও চমক হয়ে এসেছেন এক তামিম।

এই তামিম যে তামিম ইকবাল নন, এটা তো আপনি জানেনই। বিতর্কের আগুন জ্বালিয়ে তামিম ইকবালকে বাদ দিয়েই বিশ্বকাপে এসেছে বাংলাদেশ দল। যে তামিম ইকবাল মাস তিনেক আগেও ছিলেন এই দলের অধিনায়ক। এখানে যে তামিমের কথা বলা হচ্ছে, তিনি তানজিদ হাসান। ডাকনাম তামিম। যা শোনার পর বিদেশি সাংবাদিকদের অনেকেই যাঁকে ‘জুনিয়র তামিম’ বলে ডাকতে শুরু করেছেন।

Also Read: ভালো শুরুর পরও বাংলাদেশ ২৫৬

২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে ভারতকে হারাতে ৫৩ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তামিম ইকবাল

তাঁর তামিম নামটা কে রেখেছিলেন, তানজিদ তা বলতে পারেন না। এই নাম রাখায় তামিম ইকবালের কোনো পরোক্ষ ভূমিকা ছিল কি না, এটাও না। তবে বেড়ে ওঠার সময়টায় তাঁর নামে নাম ব্যাটসম্যানের শৌর্যময় ব্যাটিং তাঁকে যথেষ্টই প্রভাবিত করেছে। তার ওপর যেখানে মিলটা শুধু নামেই নয়। দুজনই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এবং দুজনই ওপেনার। তামিম ইকবালের সঙ্গে একদিন ইনিংস ওপেন করার স্বপ্নটাও তাই বাসা বেঁধেছে তাঁর মনে। সেই স্বপ্ন পূরণও হয়েছে, হোক না তা ঘরোয়া ক্রিকেটে।

বাংলাদেশের হয়ে দুই তামিমের ওপেন করা হয়নি। ছোট তামিম তো দলেই এসেছেন বড় তামিমের জায়গায়। চোটের কারণে এশিয়া কাপ খেলতে যেতে পারছেন না তামিম ইকবাল। এ কারণেই না বাংলাদেশ দলে প্রথম ডাক পড়েছিল তানজিদ তামিমের। নিয়তির নির্মম পরিহাসই বলতে হবে, এখন তিনি দলে আছেন আর আসল তামিমই নেই। না থেকেও অবশ্য আছেন। বিদেশি সাংবাদিকদের তামিম ইকবালকে নিয়ে অনেক কৌতূহল। নিয়মিতই তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন প্রশ্নটা ছুটে গেল কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দিকেও। তামিম ইকবালকে কি মিস করছেন?

তানজিদ তামিমের ইনিংসের সময় এমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তামিম ইকবালের মতো অমন বিধ্বংসীরূপে দেখা দিলে তো! পরিসংখ্যান অবশ্য ভিন্ন কথাই বলে। স্ট্রাইক রেট বিচারে তো ছোট তামিমই এগিয়ে। পোর্ট অব স্পেনে তামিম ইকবালের ৫১ ছিল ৫৩ বলে। পুনেতে তানজিদ তামিমের ৫১ এর চেয়ে ১০ বল কম খেলে। তামিম ইকবালের অর্ধশতক এসেছিল ৫১ বলে। এখানেও ১০ বল কম লেগেছে তানজিদ তামিমের।

সাকিব সামনে চলে আসায় একটু আড়াল হয়ে গেছে। তবে তামিম-বিতর্কে হাথুরুসিংহেরও বড় ভূমিকা ছিল। প্রসঙ্গটা যে তাঁর জন্য বিব্রতকর, তা বুঝিয়ে দিয়ে এলোমেলো একটা উত্তর দিলেন। তামিম ইকবাল এখানে নেই, তাই তাঁকে মিস করার কথা কেন আসে...এমন একটা আজব কথাও বললেন। আরে, তামিম ইকবাল নেই বলেই তো তাঁকে মিস করার প্রশ্ন উঠছে। তামিম ইকবাল নিজেকে সবকিছু থেকে সরিয়ে রেখেছেন। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ছুটি কাটাতে চলে গিয়েছিলেন লন্ডনে। ১০ অক্টোবর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচের দিন দেশে ফিরেছিলেন। গতকাল আবার চলে গেছেন দুবাই। নতুন তামিমের ইনিংস দেখেছেন কি না, দেখলে কেমন লেগেছে—এসব নিয়ে কোনো কথাই বলতে রাজি নন। আপাতত ক্রিকেট নিয়েই না।

Also Read: ২৫৭ রানের লক্ষ্যে ঝোড়ো শুরু ভারতের

তামিম ইকবালের সঙ্গে শট খেলার ধরনেও মিল আছে তানজিদ হাসান তামিমের

সময় বদলে গেছে বলেই ১৬ বছর আগে তামিম ইকবালের ৫১ রানের ইনিংস ভারতীয় সাংবাদিকদের যেমন বিমূঢ় করে দিয়েছিল, তানজিদ তামিমের ইনিংসে তেমন কিছু হলো না। তখন বাংলাদেশের তরুণের ব্যাটসম্যানের অমন রণমূর্তি যে বড় এক বিস্ময় হয়ে এসেছিল। স্ট্রোকের ছটার সঙ্গে তাঁর যুদ্ধংদেহী শরীরী ভাষা যোগ হয়ে পোর্ট অব স্পেনের প্রেসবক্সের সেই আবহটা এখনো স্পষ্ট মনে করতে পারি। অকালপ্রয়াত কলকাতার সাংবাদিক বন্ধুর কথাটাও কানে বাজে, ‘এ তোরা কাকে নামিয়ে দিয়েছিস! এ তো দেখছি সনাৎ জয়াসুরিয়া রে!’

তানজিদ তামিমের ইনিংসের সময় এমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তামিম ইকবালের মতো অমন বিধ্বংসীরূপে দেখা দিলে তো! পরিসংখ্যান অবশ্য ভিন্ন কথাই বলে। স্ট্রাইক রেট বিচারে তো ছোট তামিমই এগিয়ে। পোর্ট অব স্পেনে তামিম ইকবালের ৫১ ছিল ৫৩ বলে। পুনেতে তানজিদ তামিমের ৫১ এর চেয়ে ১০ বল কম খেলে। তামিম ইকবালের অর্ধশতক এসেছিল ৫১ বলে। এখানেও ১০ বল কম লেগেছে তানজিদ তামিমের।

রানসংখ্যায় মিল, ব্যাটিংয়ের ধরনেও—তারপরও তানজিদ তামিমের এই ইনিংস নিয়ে কি আগামী দিনেও কাব্য লেখা হবে? যেমন এখনো লেখা হয় তামিম ইকবালের ওই ইনিংস নিয়ে। হয়তো না। পোর্ট অব স্পেনে তামিম ইকবালের ৫১ এমন স্মরণীয় হয়ে থাকার বড় কারণ তো আসলে ওই ম্যাচে বিশ্বকাপ কাঁপিয়ে বাংলাদেশের জয়। ভারত গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ১৯১ রানে। বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুতেই তামিম-ঝড়ই ঠিক করে দিয়েছিল ম্যাচের গতিপথ।  

Also Read: যে অভিষেকটা ভুলতে চাইবেন তানজিদ

এখানে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করেছে। লিটনের সঙ্গে তানজিদ তামিমের উদ্বোধনী জুটিও ম্যাচের গতিপথ ঠিক করে দিচ্ছিল প্রায়। এমন একটা শুরুর পরও মাত্র ২৫৬ রানের বেশি করতে না–পারা যা একরকম ঠিক করেই দিয়েছে। ছোট তামিমের এই ৫১-ও মনে থাকবে, যদি এই ম্যাচটাও জেতে বাংলাদেশ।

ক্রিকেটে তো কত কিছুই হতে পারে, তবে ইনিংস বিরতিতে এই লেখা শেষ করার সময় যেটিকে মনে হচ্ছে অসম্ভব এক কল্পনা।