Thank you for trying Sticky AMP!!

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। আগামীকাল এখানেই হবে ভারত–অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ ফাইনাল

রোমাঞ্চ নিয়ে ফাইনালের অপেক্ষায়

আহমেদাবাদ নরেন্দ্র মোদির শহর। তারও আগে মহাত্মা গান্ধীর। সম্ভবত তার চেয়েও বেশি সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের। শহরের বিমানবন্দরও তাঁর নামেই। সেখান থেকে বেরোলেই দেখাও হয়ে যাবে। সুদূরে চোখ রেখে তিনি রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে। মানে তাঁর বড় একটা মূর্তি আরকি!

বড়, ঠিক আছে। তবে সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের আসল বড় মূর্তির তুলনায় এটা কিছুই নয়। শহর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে সেই মূর্তি বিশ্বের উচ্চতম। যেটির নাম ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’। শুধু মূর্তির উচ্চতাই ৫৯৭ ফুট। বেদিসহ ধরলে ৭৯০ ফুট হয়ে যায়। নিউইয়র্কের স্ট্যাচু অব লিবার্টির চেয়ে দ্বিগুণ উঁচু।

শহরে মূর্তি আছে মহাত্মা গান্ধীরও, যিনি অনেক বছর এখানে থেকেছেন। তাঁর সেই আবাস সবরবতী আশ্রম এখন রূপ নিয়েছে জাদুঘরে। সবরমতী একটা নদীর নাম। আহমেদাবাদের বুক চিরে যাওয়া সেই নদীর পাশেই গান্ধী আশ্রম।

বিশ্বকাপ ফাইনালে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত আহমেদাবাদ পুলিশ

আহমেদাবাদের এসব পরিচয় পুরোনো। নতুন পরিচয় তাহলে কী? আর কী, বিশ্বকাপ ফাইনালের শহর। যেটির আবেশ শুরু হয়ে যাচ্ছে শহরের প্রবেশদ্বার থেকেই। বিশ্বকাপের প্রায় দেড় মাস ভারতের বিভিন্ন শহরের বিমানবন্দর থেকে বিমানবন্দরে ঘুরেও বিশ্বকাপের তেমন কোনো ছাপ চোখে পড়েনি। সেখানে কাল বিকেলে আহমেদাবাদে নামতেই বাহারি সব তোরণ। যাতে লেখা: ওয়েলকাম টু ওয়ার্ল্ড কাপ ফ্যানস।

স্বাগত জানানোই উচিত। শহরে লোক ঢুকতে শুরু করেছে। আজ আর আগামীকাল তো আসবে হাজার হাজার মানুষ। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম হওয়ার পরও তা দর্শক চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ। ‘মাত্র’ ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শকই তো থাকতে পারবেন স্টেডিয়ামে। ভারতের সেমিফাইনালে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ৩৩ হাজার ধারণক্ষমতা যেমন অপর্যাপ্ত মনে হয়েছিল, এখানে গ্যালারি প্রায় চার গুণ বড় হওয়ার পরও টিকিটের জন্য একই রকম হাহাকার। এতটাই যে, হোটেলের ম্যানেজার বাংলাদেশের সাংবাদিকের কাছে পর্যন্ত একটা টিকিটের জন্য অনুনয়-বিনয় করছেন।

Also Read: দেখার মতো ফাইনালের আশা স্টার্কের

হোটেল নিয়ে যা হচ্ছে, সেটিকেও অভূতপূর্বই বলা যায়। আট–দশ গুণ বেড়ে গেছে ভাড়া। কোথাও কোথাও আরও বেশি। নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কারণ, এর কোনো নিয়মনীতি তো নেই। যার যত ইচ্ছা দাম হাঁকাচ্ছে, তারপরও বেশির ভাগ হোটেলই ‘ফুললি বুকড’ হয়ে যাচ্ছে।

ফাইনাল দেখতে নিজের নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে আসতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

ফাইনালে নিজের নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থাকবেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিশ্বকাপজয়ী সব অধিনায়ককেও নাকি আইসিসি আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ‘শোনা যাচ্ছে’ ‘নাকি’ এসব লেখার কারণ, আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছুই ঘোষণা করা হয়নি।

সমাপনী অনুষ্ঠানে পপস্টার দুয়া লিপার থাকা না-থাকা নিয়েও যেমন ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে উপলক্ষটা স্মরণীয় করে তুলতে অনেক কিছুই যে আছে, তা তো অনুমান করাই যাচ্ছে। তবে নিশ্চিত বলা যাচ্ছে শুধু এয়ার-শোর কথাই। ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটা বিশেষায়িত দলের সেই শোয়ের একটা মহড়াও হয়ে গেল কাল। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে স্টেডিয়ামের ওপর উড়ে বেড়াল একঝাঁক বিমান।

সমাপনী অনুষ্ঠান সামনে রেখে একঝাঁক বিমান নিয়ে কাল মহড়া দিয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষায়িত দল

বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অধিনায়কদের একজন গতকাল বিকেলেই আহমেদাবাদে নামলেন। তিনি অবশ্য বিশ্বকাপের শুরু থেকেই আছেন। ধারাভাষ্য দিচ্ছেন কখনো কখনো, তবে মূল পরিচয় আইসিসির বিশেষ দূত। সাবেক অধিনায়কদের মধ্যেও এউইন মরগান একটু আলাদা। ১৯ নভেম্বর নতুন কারও মাথায় ওঠার আগপর্যন্ত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের অদৃশ্য মুকুটটা তো তাঁর মাথায়ই। নতুন কারও না বলে দুজনের মধ্যেই তো ব্যাপারটা রাখা যায়। রোহিত শর্মা না প্যাট কামিন্স?

তা মরগান মুকুট দেখছেন কার মাথায়? প্রশ্নটা শুনে মুদৃ হাসিতে উত্তর, ‘লেটস সি!’ তা কি বলতে চান না বলে, নাকি বলতে পারছেন না! দুটিই হতে পারে। ফাইনালের ট্যাগলাইন খুব সহজ—এই বিশ্বকাপের সেরা দল বনাম বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা দল।

Also Read: ফাইনালে ‘পরিষ্কার ফেবারিট’ ভারত, কিন্তু...

তবে ফাইনাল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করাটা তত সহজ নয়। ম্যাচের পর ম্যাচ ভারত যে অপ্রতিরোধ্য রূপে দেখা দিয়েছে, তাতে ফাইনালের আগেই রোহিত শর্মার হাতে বিশ্বকাপ তুলে দেওয়ার মতো অবস্থা। দেওয়া যাচ্ছে না, কারণ খেলায় অনেক অভাবিত কিছু ঘটে।

আর এখানে রোহিত শর্মার হাতে বিশ্বকাপ না উঠলে সেটিকে একেবারে অভাবিতও বলা যাবে না, কারণ প্রতিপক্ষ দলের নাম অস্ট্রেলিয়া। যারা বিশ্বকাপের দল। বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচ কীভাবে জিততে হয়, তাতে পিএইডি করা দল। আগের সাত ফাইনালের দুটিতে পরাজয় আছে। তবে সর্বশেষ যে চারবার ফাইনাল, তার কোনোটিতেই অন্য কোনো দল জেতেনি।

ফাইনালের পিচ প্রস্তুত করে তুলছেন মাঠকর্মীরা

যার মধ্যে ২০ বছর আগের সেই জোহানেসবার্গ-ফাইনালও আছে। যেটির কথা মনে করে বদলা-বদলা একটা রবও উঠে গেছে ভারতে। ২০০৩ বিশ্বকাপের সেই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এবারের ভারতের মিল আছে। সেবার অস্ট্রেলিয়াও ফাইনালে উঠেছিল অপরাজিত থেকে। ভারত একটা ম্যাচেই হেরেছিল। সেটি ফাইনালের প্রতিপক্ষের কাছেই। ফাইনালে রিকি পন্টিং আর ডেমিয়েন মার্টিনের ব্যাটে উড়ে যাওয়ার সেই স্মৃতি এখনো পোড়ায় সৌরভ গাঙ্গুলীকে। ১৯ নভেম্বর সৌরভের কাছে তাই সেই জ্বালা ভোলার দিন।