Thank you for trying Sticky AMP!!

টেস্ট সিরিজের ট্রফি হাতে দুই অধিনায়ক নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি (বাঁয়ে) ও দক্ষিণ আফ্রিকার নিল ব্র্যান্ড

কখনো সিরিজ না হেরেও এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘আন্ডারডগ’ দক্ষিণ আফ্রিকা

এত দিন এটা ছিল স্রেফ নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ। এখন থেকে একটা নাম থাকছে এই সিরিজের—‘টাঙ্গিওয়াই শিল্ড’; যে নামের সঙ্গে জড়িত নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনার স্মৃতি।

১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড থেকে টাঙ্গিওয়াইগামী ট্রেন ওয়াংগাহু নদীর রেলসেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় পড়ে। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সেতু ভেঙে যায় এবং ট্রেনের কয়েকটি বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে নদীতে পড়ে যায়। মারা যান ট্রেনে থাকা ২৮৫ যাত্রীর ১৫১ জন।

একই দিনে জোহানেসবার্গে শুরু হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। সেই টেস্টে নিউজিল্যান্ড দলে ছিলেন ফাস্ট বোলার বব ব্লেয়ার। ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত যাত্রীদের মধ্যে একজন ছিলেন ব্লেয়ারের বাগ্‌দত্তা নেরিসা লাভ। সেই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন ব্লেয়ার। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই ম্যাচে ব্লেয়ার খেলবেন না।

এখন থেকে নিউজিল্যান্ড–দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজের নাম ‘টাঙ্গিওয়াই শিল্ড’

টেস্টের প্রথম দিন, যেদিন দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেদিন দক্ষিণ আফ্রিকা করেছিল ৮ উইকেটে ২৫৯ রান। ২৫ ডিসেম্বর ছিল বড়দিনের বিরতি। এর পরের দিন দক্ষিণ আফ্রিকা ২৭১ রানে অলআউট হয়ে যায়, এবং জবাব দিতে নেমে নিউজিল্যান্ডের ৯ উইকেট পড়ে যায় ১৫৪ রানে। ওই অবস্থায় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ব্লেয়ার দলের প্রয়োজনে নেমে যান ব্যাট হাতে। শেষ উইকেটে বার্ট সাটক্লিফের সঙ্গে গড়েন ৩৩ রানের জুটি। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে সেটা এক আবেগঘন ও স্মরণীয় মুহূর্ত। সেই ঘটনার স্মরণেই এখন থেকে ওই দুই দলের সিরিজের নাম ‘টাঙ্গিওয়াই শিল্ড’।

তবে ভীষণ আবেগ জড়ানো ওই ঘটনা বাদ দিলে মাঠের খেলার এই দুই দলের টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার একতরফা দাপট। এখন পর্যন্ত ১৭টি টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল, নিউজিল্যান্ড একটা সিরিজও জিততে পারেনি। ১৩ বার সিরিজ জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ড্র বাকি চারটি সিরিজ।

তবে ইতিহাস আর পরিসংখ্যান বাদ দিলে বাংলাদেশ সময় আগীমকাল ভোর ৪টায় শুরু সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ফেবারিট বলার কোনো কারণ নেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার যে দলটা ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে অধিনায়ক নিল ব্র্যান্ডসহ অভিষেকের অপেক্ষায় ৮ জন! ১৪ জনের দলে বাকি যাঁরা আছেন, তাঁদের কাউকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে নিয়মিত দেখা যায় না। এমন একটা দল নিয়ে কি পুরো শক্তির নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জেতার আশা করা যায়!

Also Read: বলছেন দক্ষিণ আফ্রিকা কোচ: ‘টি-টোয়েন্টি লিগ না হলে টেস্টও থাকবে না’

কেন দক্ষিণ আফ্রিকা এমন দল দিয়েছে, সেটা এত দিনে সবার জানা হয়ে গেছে হয়তো। ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা (সিএসএ) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আগে তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ এসএটোয়েন্টিতে খেলতে বাধ্য থাকবেন স্থানীয় ক্রিকেটাররা। এসএটোয়েন্টি সিএসএর আয়ের বড় উৎস। এবার এসএটোয়েন্টির সূচি নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট সিরিজের সূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যাওয়ায় জাতীয় দলের মূল খেলোয়াড়দের এসএটোয়েন্টিতেই খেলাচ্ছে সিএসএ। এমনকি নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে এই টেস্ট সিরিজটা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হওয়ার পরেও।

দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলের বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দিতে পারেন ৩৪ বছর বয়সী পেসার ড্যান প্যাটারসন, যাঁর ঝুলিতে মাত্র ২টি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা, সেই দুটিও বছর চারেক আগে। প্যাটারসন অবশ্য তারপরেও বলেছেন, ‘এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি রোমাঞ্চিত।’

Also Read: ডি ভিলিয়ার্সও চমকে উঠেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দল দেখে

যতই অনভিজ্ঞ দল হোক, দক্ষিণ আফ্রিকাকে আন্ডারডগ মনে করছেন না নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান রাচিন রবীন্দ্র। তাঁর কথা, ‘আপনি যখন মাঠে নামবেন, সেখানে আন্ডারডগ বলে কিছু নেই।’

আসলেই হয়তো নেই। নইলে কি আর এমন দাপুটে অস্ট্রেলিয়াকে শামার জোসেফরা এভাবে হারিয়ে দেন!