Thank you for trying Sticky AMP!!

শতকের পর সিকান্দার রাজা। ইনোসেন্ট কাইয়ার সঙ্গে তাঁর শতকে বাংলাদেশকে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে

বাংলাদেশকে ভুলে যাওয়া পরাজয়ের স্বাদ দিলেন রাজা-কাইয়া

প্রিয় সংস্করণে প্রিয় প্রতিপক্ষ। যে প্রতিপক্ষের সঙ্গে আজকের আগে টানা ১৯টি জয় বাংলাদেশের। এমনকি এটাও বলা হয়, বাংলাদেশ যখন অফ ফর্মে থাকে, তখন এই প্রিয় প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের সঙ্গে নাকি খেলে আসলে ফর্মে ফেরার জন্য। সেই জিম্বাবুয়ের কাছে আজ হারারে স্পোর্টস ক্লাবে বাংলাদেশ যে ৬ উইকেটে হেরে গেল, সেটাকে চোখ বুঝে ‘অঘটন’ তো বলে দেওয়াই যায়।

হারারেতেই বেড়ে ওঠা ইনোসেন্ট কাইয়া ও বাংলাদেশকে প্রায় ‘ঘর’ বানিয়ে ফেলা সিকান্দার রাজা শুনলে আপত্তি করতে পারেন। এমন হেসেখেলে জয়ের পর ‘অঘটন’ আবার কী! ৩০৩ রান করেছিল বাংলাদেশ, কিন্তু কাইয়া-রাজা যে সেটাকে পাত্তাই দিলেন না! কাইয়া পেলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি, রাজা চতুর্থ। ৬ রানে দ্বিতীয় ও ৬২ রানে তৃতীয় উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দুজনের ১৭২ বলে ১৯২ রানের জুটি। ১২২ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১১০ রান করে মোসাদ্দেকের বলে শরীফুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে কাইয়া যখন ফেরেন, জিম্বাবুয়ের তখন ম্যাচ জিততে দরকার ৪৯ বলে ৫০ রান। হাতে ৬ উইকেট, অভিজ্ঞ রাজা তখনো ক্রিজে। এই ম্যাচ আর জিম্বাবুয়ে হারে নাকি!

Also Read: নয় বছর ও ১৯ ম্যাচ পর বাংলাদেশকে হারাল জিম্বাবুয়ে

রাজা শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। মোসাদ্দেকের বলে ইনিংসের ষষ্ঠ ছক্কা মেরে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রায় ভুলে যাওয়া জয়ের স্বাদ দিয়েছেন জিম্বাবুয়েকে। ১০৯ বলে অপরাজিত ১৩৫ রানের ইনিংসটিকে হয়তো ক্যারিয়ারেরই সেরা বলে মানবেন এই অলরাউন্ডার।

উড়ছেন সিকান্দার রাজা, এমন ইনিংসের পর তো তিনি উড়বেনই!

৩০৩ রান এই উইকেটে যথেষ্ট ছিল কি না, এই প্রশ্ন যেমন তোলা যায়, তেমনি প্রশ্ন তোলা যায় বাংলাদেশের নির্বিষ বোলিং নিয়েও। সঙ্গে যোগ হয়েছে বাজে ফিল্ডিং। কাইয়া-রাজা দুজনেরই ক্যাচ পড়েছে, স্টাম্পিং মিস হয়েছে। তাসকিনের বলে বদলি ফিল্ডার তাইজুল যখন কাভারে ক্যাচ ফেলেছেন, রাজা যখন ৪৩ রানে। ৬৮ রানে থার্ডম্যানে কাইয়ার ক্যাচ ফেলেছেন তাসকিন, পরের ওভারেই আবার ফেলেছেন শরীফুলও। এই ক্যাচ দুটি অবশ্য কঠিন ছিল কিছুটা, কিন্তু ম্যাচ বের করতে হলে এই ধরনের ক্যাচ তো নিতে হবেই। তাসকিন তো পড়ে ছেড়েছেন লুক জঙ্গুয়ের ক্যাচও। ততক্ষণে ম্যাচ অবশ্য বেরিয়ে গেছে হাত থেকে।

Also Read: সিরিজ থেকে ছিটকে গেলেন লিটন, এশিয়া কাপ নিয়েও শঙ্কা

বাংলাদেশের রানটা আরও বাড়তে পারত, যদি তামিম আউট হওয়ার আগে বলের সঙ্গে রানের ব্যবধানটা কমিয়ে যেতে পারতেন। অথবা যদি লিটন দুর্ভাগ্যজনকভাবে চোট পেয়ে মাঠ না ছাড়তেন, কিংবা এনামুল আরেকটু ভাগ্যের সহায়তা পেতেন। লিটন-এনামুল দুজনেই তো এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। ৭৫ বলে ফিফটি করা লিটন দাস হাত খুলে মারা শুরু করেছিলেন সময়মতোই। পরের ১৪ বলে নিলেন ৩১ রান। সব মিলিয়ে ৯টি চারের সঙ্গে নিয়াউচিকে লং অফ দিয়ে মারা একটা ‘লিটনীয়’ ছক্কা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তাঁর ষষ্ঠ সেঞ্চুরিটা যখন স্রেফ সময়ের ব্যাপার বলে মনে হচ্ছিল, তখনই দৌড়াতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান। ৮৯ বলে ৮১ করা লিটনকে তাই মাঠ ছাড়তে হয় স্ট্রেচারে করে। পরে আর ব্যাট করতে নামতে পারেননি। জিম্বাবুয়ে থেকে খবর, স্ক্যানের পর জানা গেছে এই সিরিজেই আর খেলতে পারবেন না লিটন। শঙ্কা আছে আসছে এশিয়া কাপে খেলা নিয়েও। ম্যাচ হারের চেয়েও যা বড় ধাক্কা।

ক্যারিয়ারের প্রথম শতক পেয়েছেন ইনোসেন্ট কাইয়া

লিটন যখন মাঠ ছাড়েন, তাঁর সঙ্গী এনামুল তখন ১৭ রানে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রানের বন্যা বইয়ে দিয়ে, এক মৌসুমে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়ে যিনি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন, তাঁকে কেন জানি ৫০ ওভারের ম্যাচে খেলানোই হচ্ছিল না। যে সংস্করণে রান করেছেন, সেই সংস্করণ বা দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে। অবশেষে আজ সেই সুযোগ মিলল। ২০১৯ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন। কাল তাঁর ব্যাটিং দেখে অবশ্য মনে হয়নি, মাঝে এত দিনের বিরতি গেছে। দলের তখন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান দরকার, এনামুলও সেভাবেই ব্যাট করলেন। তাতে ফিফটি এল ৪৭ বলেই। রান বাড়ানোর তাড়াতেই ৪৬তম ওভারে যখন নিয়াউচিকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন, তাঁর রান ৬২ বলে ৭৩। এর আগেই ৭১ রানে ওয়েসলি মাধেভেরে তাঁর সহজ ক্যাচ ফেলেছিলেন। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি এনামুল।

Also Read: হারারে যখন ওয়েলিংটন ও মেলবোর্নের মিশেল

মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ পরে বলের সঙ্গে তাল মিলিয়েই রান তুলেছেন। কিন্তু এখনকার ওয়ানডেতে ওটা ঠিক সব সময় যথেষ্ট নয়। দলের রানটা ৩০০ থেকে ৩৩০/৩৪০ বানাতে একজন বা দুজনকে একটা ঝড় তুলতে হয়। সেই ঝড়টাই ছিল না বাংলাদেশের ইনিংসে। মুশফিক ৪৯ বলে ৫২ করে অপরাজিত থেকে গেছেন, ১২ বলে ২০ রান করা মাহমুদউল্লাহ শেষে চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু তখন আর হাতে বল নেই।

এর আগে তামিম-লিটনের শুরুটা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, তাড়াহুড়ো না করে উইকেট ধরে রেখে ভিত গড়তে চান দুজন। তামিমের তো ইদানীং এটাই ধরন ব্যাটিংয়ের। শুরুতে বেশ সময় নেন, পরে চেষ্টা করেন সেটা পুষিয়ে দিয়ে স্ট্রাইক রেটটা ১০০-এর কাছাকাছি রাখতে। কখনো পারেন, কখনো পারেন না। কাল যেমন পারেননি। ৭৯ বলে ৫০ করার পর চেষ্টা করছিলেন বল-রানের ব্যবধান কমিয়ে আনতে। কিন্তু সিকান্দার রাজার অফ স্পিনের শিকার হয়ে গেলেন ৮৮ বলে ৬২ রানে থাকতে। অবশ্য এর আগেই একটা কীর্তি গড়া হয়ে গেছে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের। বাংলাদেশের প্রথম ব‍্যাটসম‍্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ৮ হাজার রান। শুধু আক্ষেপ, তাঁর এমন কীর্তির দিনটা বাংলাদেশের জয়ে রঙিন হলো না।