Thank you for trying Sticky AMP!!

বল হাতে ছন্দে নেই মোস্তাফিজুর রহমান

মোস্তাফিজ ‘করে নাকো ফোঁসফাঁস, মারে নাকো ঢুসঢাস’

একেকটি ডেলিভারি যেন কাটার নয়, রীতিমতো ছোবল!

আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রেখেই মোস্তাফিজুর রহমান যখন একের পর এক কাটারে ব্যাটসম্যানদের প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলছিলেন, তখন তাঁর বোলিং সম্পর্কে অনেকেই এমন বিশেষণ দিতেন। বোঝাতেন, সাপের প্রাণঘাতী ছোবলে যেমন মানুষ মারা যায়, মোস্তাফিজের কাটারে ব্যাটসম্যানদের দশাও তেমনই। সাত বছরের ব্যবধানে সেই ছোবলে এখন ‘বিষ’ নেই।

এতটাই ‘নির্বিষ’ যে তুলনা টানা যায় ‘বাবুরাম সাপুড়ে’ কবিতার সেই সাপের সঙ্গে, ‘যে সাপের চোখ নেই/ শিং নেই নোখ নেই/ ছোটে না কি হাঁটে না/ কাউকে যে কাটে না/ করে নাকো ফোঁসফাঁস/ মারে নাকো ঢুসঢাস।’

Also Read: মোস্তাফিজ কেন অটো চয়েস

একসময় যে মোস্তাফিজ ব্যাটসম্যানদের জন্য ‘উৎপাত’ হয়ে উঠতেন, সেই মোস্তাফিজ এখন বোলিংয়ে যেন দুধ–ভাত। পরিস্থিতি এমন যে অন্য বোলারদের দেখেশুনে খেলে তাঁর ওপর চড়াও হচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা।

যার নগদ নজির দেখা গেছে আজকের বাংলাদেশ–পাকিস্তান ম্যাচে। ম্যাচের শুরুতে বোলিং করেছেন, শেষেও করেছেন। মার খেয়েছেন সব অংশেই।

বাংলাদেশের হয়ে বোলিংয়ের শুরুটা করেছিলেন তাসকিন আহমেদ। মোহাম্মদ রিজওয়ান আর বাবর আজম সেই ওভার থেকে নিয়েছেন ১ রান।

প্রথম ওভারে তাসকিনের বলে গুটিয়ে থাকা পাকিস্তানের দুই ওপেনার মোস্তাফিজ বল হাতে নিতেই যেন ডানা মেলার উপলক্ষ পেয়ে যান। তৃতীয় বলটিকে এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে মেরে ম্যাচের প্রথম চার তুলে নেন বাবর। এক বল পর আবারও বাউন্ডারি, এবার পুল শটে। প্রথম ওভারেই দিলেন ১০ রান।

Also Read: মার খেয়ে ভূত মোস্তাফিজ

অধিনায়ক নুরুল হাসান মোস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেন পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারেও। এ দফায় তাঁকে চার হাঁকান রিজওয়ান, চার সিঙ্গেল আর এক ওয়াইডসহ এবার দেন ৯ রান। এমন নয় যে হ্যাগলি ওভালে তখন সব বোলারই মার খাচ্ছিলেন।

মোস্তাফিজ আর তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ ছাড়া বাকি সবাই আঁটসাঁট বোলিংয়ে হয় রান আটকাচ্ছিলেন, নয় তো উইকেট নিচ্ছিলেন। দিন শেষে হাসানের তা–ও একটি উইকেটের সান্ত্বনা আছে, ৪ ওভারে ৪২ রানে নিয়েছেন ইফতিখার আহমেদের উইকেট। কিন্তু মোস্তাফিজ?

সবাই যখন রান–নিয়ন্ত্রণ বা উইকেট তুলে পাকিস্তানের রানতোলার গতিতে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, বল হাতে নিয়ে ওই বাঁধ ভেঙে দিয়েছেন বোলিং বিভাগের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এই পেসারই। ১৬ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ছিল ৩ উইকেটে ১১১। টি–টোয়েন্টির মোস্তাফিজ ডেথ ওভারে বেশি কার্যকর—এমনটা দেখা গেছে বহুবার। কিন্তু মোস্তাফিজ যেন ‘গেছে যে দিন একেবারেই গেছে’ বানিয়ে ছাড়লেন!

Also Read: মোস্তাফিজ বললেন, বাংলাদেশ কেন টি–টোয়েন্টিতে খারাপ

ওই ওভারে ৬ বলের তিনটিকেই সীমানাছাড়া করলেন রিজওয়ান–ইফতিখার। এক ওভারেই ১৬। নিমেষেই বাংলাদেশের মুঠো থেকে বেরিয়ে গেল ম্যাচের লাগাম। এরপর ইনিংসের বিশতম ওভার করতে এসে যে ১৩ রান দিলেন, তা ছিল যেন আগের ওভারগুলোরই ধারাবাহিকতা।

ইনিংস শেষে মোস্তাফিজের বোলিং ফিগার—৪ ওভার, ৪৮ রান, উইকেট নেই। ২৪ বলের মধ্যে ডট ৬টি, বাউন্ডারি দিয়েছেন ৮টি (৭ চার ও ১ ছয়); ছিল দুটি ওয়াইডও।
এ নিয়ে চলতি বছরে খেলা ১১ টি–টোয়েন্টির মধ্যে ৫টিতেই উইকেটশূন্য তিনি। আর ম্যাচে দুইয়ের বেশি উইকেট পান না ১৮ ম্যাচ হয়ে গেছে।

২০১৯ সালে নিজের ৩৩তম আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে পেয়েছিলেন ৫০তম উইকেট, যা টি–টোয়েন্টিতে দ্রুততম পঞ্চাশে এখনো অষ্টম।

উইকেটের ফিফটির পর আজ খেলেছেন ৪০তম ম্যাচ। এ সময়ে পেয়েছেন ৪৪ উইকেট; সাকল্যে ৭৩ ম্যাচে ৯৪ উইকেট।

টি–টোয়েন্টি বিবেচনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে উইকেট গৌণ হয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ইকোনমি আর ডেথ ওভারের কার্যকারিতা। সেখানেও কি বাংলাদেশ দলের ‘অটো চয়েজ’ পর্যায়ের ছন্দে আছেন মোস্তাফিজ?

জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টি–টোয়েন্টি বাদ দিলে সর্বশেষ ৯ ম্যাচের কোনোটিতেই ওভারপ্রতি রান খরচ সাতের নিচে নামাতে পারেননি।

আর ডেথ ওভার?

সর্বশেষ এশিয়া কাপে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের কাছে হেরে গিয়েছিল তাঁরই বাজে বোলিংয়ের খেসারত গুণে। জয়ের জন্য শেষ চার ওভারে ৪ রান নিতে হতো আফগানদের। ১৭তম ওভারে অধিনায়ক সাকিব বল তুলে দেন মোস্তাফিজের হাতে।

Also Read: ‘আইপিএলের’ মোস্তাফিজ কেন টেস্ট খেলেন না

কিন্তু সেই ওভারে দুটি ছক্কাসহ ১৭ রান দিয়ে ফেলেন মোস্তাফিজ। আফগানিস্তান ম্যাচ জিতে যায় ৯ বল রেখে দিয়ে। শারজার সেই ‘ফর্ম’টাই যেন আজ ক্রাইস্টচার্চে টেনে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের শুরুতে কাটার মাস্টার খেতাব পাওয়া এই পেসার।

মোস্তাফিজ একসময় দলকে একাই টানতেন। এখন দলই যেন তাঁকে টানছে!