Thank you for trying Sticky AMP!!

অচেনা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম!

নোংরা স্টেডিয়াম পরিষ্কার করতে ব্যস্ত ঢাকা ক্লিন সংগঠনের কর্মীরা--- ছবি: সৌজন্য

দিনের বেলায় ব্যস্ত সড়কের চেয়েও বেশি যানজট লেগে থাকে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে! এ যেন বারোয়ারি বাজার। কি নেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে? ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, ফাস্ট ফুড থেকে শুরু করে খুরমা, খেজুর, সফেদা, শসাসহ সব রকমের মৌসুমি ফলের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন ব্যবসায়ীরা। মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথের পাশে মুঠোফোনের কাভারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিকস সরঞ্জামের বেচাবিক্রি চলে দেদারসে। যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছে লোকজন। দুর্গন্ধে টেকা দায় সাধারণ মানুষসহ খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের। রাতের বেলায় স্টেডিয়ামে জমা ধুলোবালি আর কাগজের খোসায় তৈরি হয় এক সমুদ্র আবর্জনা। 

স্টেডিয়ামের এক পাশের লোহার গ্রিল কেটে তৈরি করা হয়েছে আউটার মাঠে ঢোকার সংক্ষিপ্ত পথ। এখানে হাত বাড়ালেই মেলে ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ। প্রশাসনের নাকের ডগায় চলে সব রকম অনৈতিক কার্যকলাপ। রাত গভীর হলেই ভাসমান মানুষের শয্যা পাতার ব্যস্ততা শুরু হয় স্টেডিয়ামের বারান্দায়। যেন দেখার কেউ নেই এই স্টেডিয়ামের।
কাল বিকেলে একটুখানি হলেও বদলে গিয়েছিল আন্তর্জাতিক এই স্টেডিয়াম। রাস্তাগুলো দেখাচ্ছিল ঝকঝকে তকতকে। কোথাও আবর্জনা নেই। নেই নোংরার লেশমাত্র। সবুজ জার্সি গায়ে একঝাঁক তরুণ-তরুণী স্টেডিয়াম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে ব্যস্ত। প্রত্যেকের জার্সিতে লেখা-‘পরিচ্ছন্নতা শুরু হোক আমার থেকে।’
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তানজিরুল ইসলাম রোহান, ঢাকা সিটি কলেজের সুমাইয়া ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আসিয়া ফেরদৌস, আবু ইসহাকদের হাতে ঝাড়- এবং গ্লাভস। মুখে পরা মাস্ক। সবাই ভীষণ উৎসাহ নিয়ে স্টেডিয়াম পরিষ্কার করছেন।
এই উদ্যোগটা নিয়েছে ‘ঢাকা ক্লিন’ নামের একটি সংগঠন। প্রধান সমন্বয়ক ফরিদ উদ্দিন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের ব্যবসা করেন।
গত বছর ৩ জুন ফরিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার এই অভিযান শুরু করেন মাত্র ২৪ সদস্য নিয়ে। শাহবাগ থেকে সোনারগাঁ মোড় পর্যন্ত রাস্তা পরিষ্কার করেন সেই রাতে। এরপর ধীরে ধীরে সংগঠনের পরিধি বেড়েছে। ঢাকার বাইরে খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহেও বর্তমানে কার্যক্রম চলছে। এই সংগঠনের বর্তমান সদস্য সংখ্যা সাড়ে চার হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
ফেসবুকে এই সংগঠনের একটি পেজ রয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমেই সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কবে, কোথায় থাকতে হবে, সেটাও জানিয়ে দেওয়া হয় ফেসবুক পেজের মাধ্যমে।
ব্যাপারটা যেন ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’র মতো। এই কার্যক্রমে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই নন, যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন পেশাজীবী লোকজনও। এমনকি স্টেডিয়ামের দোকানদারেরাও অনেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় নেমে পড়েছেন। যে কাজ করার কথা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি), সেই কাজ করছে একদল স্বেচ্ছাসেবী মানুষ।
এত কাজ থাকতে এমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযানে নামলেন কেন? ফরিদ উদ্দিনের হাসিমাখা উত্তর, ‘আমরা প্রতিদিন দেশকে নোংরা করে যাচ্ছি, অসচেতন অবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় যত্রতত্র ময়লা ফেলছি। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। এ জন্যই সব মানুষকে সচেতন করতে এই উদ্যোগ নিয়েছি।’
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বিভিন্ন সময়ে খেলা দেখতে আসতেন ফরিদ। এবার স্টেডিয়াম পরিষ্কার করতে পেরে ভীষণ উচ্ছ্বসিত, ‘এখানে খেলা দেখতে এলে নোংরা স্টেডিয়াম দেখে খারাপ লাগত। তা ছাড়া এদিক দিয়ে রাতে যখন যাই মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। দেখে খারাপ লাগে। ওরা মল-মূত্র ত্যাগ করে জায়গা নোংরা করে। আজ জায়গাটা পরিষ্কার করে ভালো লাগছে। তা ছাড়া পর্যটকেরা এমন স্টেডিয়াম দেখলে স্বাভাবিকভাবেই দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।’
বিশ্বের আর কোনো স্টেডিয়ামে দোকানপাট বসানোর এমন নজির নেই। এমন নোংরা স্থাপনাও দেখা যাবে না কোথাও। অথচ একটু সচেতন হলেই ৬৩ বছরের পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়াম সাজিয়ে রাখা যায় ড্রয়িং রুমের মতো।