চ্যাম্পিয়নস লিগে পরশু ম্যানচেস্টার সিটির ম্যাচে একটা বড় ভুল করেছেন রেফারি। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের জুড বেলিংহাম সিটি গোলরক্ষক এডেরসনকে ফাউল করেছেন ধরে নিয়ে বল জালে যাওয়ার আগেই বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি। পরে রিপ্লেতে দেখা গেছে ফাউল হয়নি। কিন্তু বল জালে যাওয়ার আগেই বাঁশি বাজানোয় ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি এ সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেননি।
গতকাল রেফারি তাই বল জালে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। বায়ার্ন মিউনিখ-পিএসজি ম্যাচের ১২ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পের কাছ থেকে বল পেয়ে গোল করেছিলেন জুলিয়ান ড্রেক্সলার। বল ম্যানুয়েল নয়্যারকে ফাঁকি দেওয়ার পরই রেফারি বাঁশি বাজিয়ে জানিয়েছেন অফসাইড। হতাশ ড্রেক্সলার ভেবেছিলেন ভিএআর তাঁর মুখে হাসি ফেরাবে। কিন্তু ভিএআরও বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় রেখে সে সিদ্ধান্তই বজায় রেখেছে।
ফিফা এভাবে আর কাউকে অপেক্ষায় রাখতে রাজি নয়। আগামী বিশ্বকাপেই অফসাইডের নিয়মে নতুন কিছু আনতে চাইছে। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের সময় অফসাইড হয়েছে কি হয়নি, সেটা লাইনসম্যানকে জানিয়ে দেওয়ার প্রযুক্তি আনার পরিকল্পনা করছে ফিফা।
ফুটবলে প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এমন অবস্থায় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে গোললাইন প্রযুক্তি ও ভিএআর না রাখার সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এ কারণেই। এর মধ্যেই ফিফা জানাল, আর লাইনসম্যানের ওপর পুরো ভরসা রাখতে চায় না তারা। বরং বিতর্ক এড়াতে এখন থেকে প্রযুক্তিই লাইনসম্যান ও অফিশিয়ালদের অফসাইড হলে জানিয়ে দেবে। এতে করে ভিএআর কী বলছে, সেটা জানার জন্য আর সময় অপচয় হবে না।
আর্সেনালের কিংবদন্তি কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার এখন অনেক বড় দায়িত্বে আছেন। ফিফার ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের প্রধান এখন তিনি। এই ফরাসি যেভাবে সম্ভব খেলাটার উন্নতির জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজছেন। ফুটবলের প্রথম দিন থেকেই অফসাইড নিয়ে বিতর্ক চলছে। এমনকি ভিএআর প্রযুক্তিও এ বিতর্ক থামাতে পারছে না। কারণ, ভিএআর প্রযুক্তিতেও একজন রেফারি গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নেন।
আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি) গত মাসে জানিয়েছিল তারা অফসাইডের নিয়ম পরীক্ষা করছে। এবং ভিএআরের জন্য দীর্ঘ প্রতিক্ষা কমানো যায় কি না, সেটা দেখার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখতে চায়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে আধা স্বয়ংক্রিয় অফসাইডের সিদ্ধান্ত জানানোর কথা জানিয়েছিল আইএফএবি।
ওয়েঙ্গার অবশ্য ‘আধা’ নয়, পুরোপুরি প্রযুক্তির ব্যবহার দেখতে চান। এমন এক প্রযুক্তি দেখতে চান, যা সরাসরি অফিশিয়ালকে জানিয়ে দেবে অফসাইড হয়েছে কি হয়নি। বর্তমান গোললাইন প্রযুক্তি যেমন সরাসরি রেফারিকে জানিয়ে দেয় বল গোললাইন অতিক্রম করেছে কি না।
দ্য টাইমসকে ওয়েঙ্গার বলেছেন, ‘আমার ধারণা স্বয়ংক্রিয় অফসাইড ২০২২ সালের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে। আমি স্বয়ংক্রিয় অফসাইডের সিদ্ধান্ত চালু করার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছি। এর ফলে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে লাইনসম্যানের কাছে বার্তা পৌছে যাবে।’
বর্তমানে ভিএআর নিয়ে অনেকেই অসন্তুষ্ট। সাধারণ গোলের ক্ষেত্রেও অফসাইড হয়েছে কি না, সেটা দেখা হয়। সেটা দেখে জানাতে জানাতেই অনেক সময় দুই–তিন মিনিট লেগে যায়। আর একটু ঝামেলাপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলে তো পাঁচ মিনিটও মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে খেলা। ফুটবলের মতো গতিময় এক খেলার প্রাণ কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ভিএআরের বিরুদ্ধে।
ওয়েঙ্গারও জানালেন তাঁর দুশ্চিন্তার কথা, ‘বর্তমানে গড়ে এখন আমাদের ৭০ সেকেন্ডের মতো অপেক্ষা করতে হয়। মাঝে মাঝে ১ মিনিট ২০ সেকেন্ডও। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেখা যাচ্ছে অনেক উদ্যাপনই ভেস্তে যায় সক্ষ্ণ পার্থক্যের জন্য।’
ফুটবলারদের গোল উদ্যাপন এখন তাই অনেকটা রয়েসয়ে করতে হচ্ছে। অনেকেই গোল করেও অপেক্ষায় থাকেন রেফারির সিদ্ধান্তের জন্য। আবার অনেকেই উল্লাস করেও একটু পর হতাশায় ডোবেন। এই অবস্থায় মার্কো ফন বাস্তেনের মতো কিংবদন্তি পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে অফসাইডের নিয়মই তুলে দিতে বলেছিলেন।
ফিফা অতটা বাড়াবাড়িতে বিশ্বাসী নয়। তারা তাই চেষ্টা করছে বর্তমান নিয়মের মধ্যেই যতটা সম্ভব ঝামেলা মিটিয়ে নিতে। এ চিন্তা থেকেই স্বয়ংক্রিয় অফসাইড ডাকার চেষ্টা। ২০১৮ বিশ্বকাপ দিয়ে ভিএআর ফুটবলে জায়গা করে নিয়েছে। দেখা যাক কাতার বিশ্বকাপ দিয়ে অফসাইডের এই নতুন প্রযুক্তি স্থান করে নিতে পারে কি না।