Thank you for trying Sticky AMP!!

অর্ধেক বাস্তব তুমি অর্ধেক কল্পনা

নারী-পুরুষ-শিশু সবাই ছিল একসঙ্গে, ছিল জয়ের আনন্দে। ছবি: রয়টার্স

‘অর্ধেক নগরী তুমি অর্ধেক কল্পনা’

সেই প্যারিস আজ উৎসবের নগরী। ফ্রান্সের রাজধানীর অলিগলি, রাস্তাঘাট পরিপূর্ণ আবালবৃদ্ধবনিতায়। সবার মুখে জয়ের আনন্দ, বিজয়ীর হাসি। হাসবে নাই-বা কেন! ২০ বছর পর ঘরে ফিরেছে যে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতার শিরোপা। বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা।

সকাল থেকেই প্যারিসজুড়ে ছিল সাজ সাজ রব। লোকে লোকারণ্য ছিল প্রতিটি ট্রাম, ট্রেন, মেট্রো, বাস। সবার মুখে মুখে স্লোগান, আলে লে ব্লু (Allez les blues), ‘এগিয়ে যাও ফ্রান্স।’ সবার গন্তব্য প্যারিসের ২৩০টি বড় পর্দার যেকোনো একটি কিংবা আইফেল টাওয়ার অথবা প্যারিস গেট। প্রত্যেক প্যারিসিয়ানের কাঁধে বাঁধা ফ্রান্সের পতাকা, মুখে আঁকা ফ্রান্সের পতাকার তিনটি রং—নীল, সাদা, লাল। ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ স্বাধীনতা, সমতা, ভ্রাতৃত্ব ধারণ করে আছে তিন রং।

শহরজুড়ে ছিল আনন্দ। ছবি: রয়টার্স

আস্তে আস্তে খেলা শুরুর সময় ঘনিয়ে আসে, মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে, কেউ আসে জোড়ায় জোড়ায়, কেউ আসে দল বেঁধে। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় প্রতিটি পাব, রেস্তোরাঁ। সবার হাতে পানীয়, চোখ টিভির পর্দায়। খেলা শুরুর বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় উদ্‌যাপনের প্রস্তুতিও। গোল হয়, আর চিৎকারে ফেটে পড়ে ফ্রান্সের মানুষ। চিৎকার তো নয় যেন ভূমিকম্প। পরিচিত-অপরিচিত যে যাকে কাছে পায়, তাকেই জড়িয়ে ধরে, মুখে সমস্বরে আওড়াতে থাকে

aux armes citoyens
Formez vos bataillons
marchons, marchons, marchons (ফ্রান্সের জাতীয় সংগীত)

আইফেল টাওয়ার সেজেছিল অন্য সাজে। ছবি: রয়টার্স

সেই সঙ্গে চলতে থাকে বাজি ফুটানো, একটু পরপর বুম বুম শব্দে কেঁপে ওঠে প্যারিসের রাস্তাঘাট। রেফারি চূড়ান্ত বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো কানের পর্দা ফেটে যাবে ভুভুজেলা ও বাজির শব্দে। মুহূর্তের মধ্যে সবাই নেমে আসে রাস্তায়। চলতে থাকে কোলাকুলি, পানি ছিটানো, কৃত্রিম ধোঁয়ায় উদ্‌যাপন। কালো-সাদা, নারী-পুরুষ; ছিল না কোনো ভেদাভেদ। ভ্রাতৃত্বের এক অপূর্ব মেলবন্ধন গড়ে মিছিলে মিছিলে সবাই যেতে থাকে গন্তব্যহীন উদ্দেশে।

প্যারিস জুড়ে আনন্দে ‘নয়নের মণি’ ছিলেন গ্রিজমান। ছবি: রয়টার্স

সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় আতশবাজি ফুটানো। আকাশে চলতে থাকে বিরতিহীনভাবে আতশবাজির খেলা। চলতে থাকে গাড়ির হর্নের শব্দ। যুবকেরা মোটর শোভাযাত্রা বের করে। কোথাও কোথাও ১০ থেকে ১৫ জন মিলে গোল হয়ে নাচতে থাকে। সবাই সবাইকে শুভেচ্ছা জানায়, মনে হয় কত দিনের চেনাজানা। মেট্রো, ট্রেনগুলোয় তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কিন্তু কারও মুখে বিরক্তির কোনো ছাপ নেই। সবার মুখে তৃপ্তি। প্রশান্তির ছায়া। গলা ভেঙে গেছে, তবু মুখে on est champion (অন এ চ্যাম্পিয়ন), ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন।’

আনন্দে শামিল হয়েছিল শিশুরাও। ছবি: রয়টার্স

এ এক অন্য রকম প্যারিস, কোনো যান্ত্রিকতা নেই, কোনো বিরতি নেই, শুধু উৎসব আর আনন্দ। যা কোনো শব্দ দিয়ে বোঝানো কঠিন। তবে আমরা সৌভাগ্যবান, নিজ চোখে বিশ্বকাপ জয়ের এ আনন্দ দেখার সুযোগ হলো। এ জয়, এ উদ্‌যাপন, এ আনন্দ ছড়িয়ে যাক বিশ্বের আনাচকানাচে। এ প্রত্যাশা রইল।