Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশের সাবেক কোচ জোরান জর্জেভিচ

‘আমি কোচ থাকলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বকাপ খেলত’

আজ ৮ ফেব্রুয়ারি। ২০১০ সালের এই দিনে আফগানিস্তানকে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ান গেমস ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। দলটির কোচের দায়িত্বে ছিলেন সার্বিয়ার জোরান জর্জেভিচ।

বাফুফের সঙ্গে নতুন চুক্তিতে সমঝোতা না হওয়ায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন তিনি। বেলগ্রেড থেকে হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোকে এক যুগ আগের সেই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দিয়েছেন ৬৯ বছর বয়সী এই কোচ।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: ১২ বছর আগে এই দিনে আপনার হাত ধরেই দক্ষিণ এশিয়ান গেমস ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। মনে আছে দলটার কথা?

জোরান জর্জেভিচ: অবশ্যই। টুর্নামেন্টে আমরা সব কটি ম্যাচ জিতেছিলাম। কোনো গোল না খেয়ে অনেকগুলো (১৩ গোল) গোল করেছিলাম। এমনকি আমার খেলোয়াড়েরা কোনো কার্ডও দেখেনি। এটা ইতিহাস। বাংলাদেশে আর কেউ গড়তে পারবে বলে মনে করি না আমি।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: আপনার অধীনেই প্রথম ‘হাই প্রেসিং’ ফুটবল খেলতে দেখা গিয়েছে বাংলাদেশকে। ফিটনেসে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা একটা দলকে এই কৌশলে খেলিয়েই বাজিমাত...

জর্জেভিচ: আপনি যদি চ্যাম্পিয়ন হতে চান, আপনাকে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হতে হবে বল কেড়ে নেওয়ার জন্য। আবার আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার মানসিকতাও থাকতে হবে। যুদ্ধ করার মানসিকতা অর্জন করা জরুরি। হয়তো এভাবে আপনি কখনো সফল না–ও হতে পারেন। কিন্তু এটাই আমার কোচিংয়ের বৈশিষ্ট্য। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ১৪টি দেশে এভাবেই আমি কোচিং করিয়েছি। সব জায়গায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। বিষয়টি এমন নয় যে শুধু বাংলাদেশেই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।

আক্রমণাত্বক মানসিকতা এবং দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেওয়া খেলোয়াড় পছন্দ জর্জেভিচের
প্রশ্ন

প্রশ্ন: পেছনে ফিরে তাকালে দলটার সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকাটা কী ছিল?

জর্জেভিচ: খুব অল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশে ছিলাম। এতটুকু বুঝেছি, বাংলাদেশের মানুষ ফুটবলটাকে খুব ভালোবাসে। ফেডারেশনের কর্তারা আমাকে বলেছিলেন, ‘এই ফুটবলপাগল মানুষদের একটা শিরোপা উপহার দিতে হবে আপনাকে।’ আমার কোচিং স্টাফকে আমিও সেই একই কথা বলেছিলাম। এমন খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গড়ে ছিলাম, যারা খেলার জন্য মুখিয়ে থাকে। মাঠে সর্বোচ্চ পর্যায়েরও বেশি পরিশ্রম করতে চায়। এভাবে দল গঠন করে শৃঙ্খলার ওপর জোর দিয়েছিলাম। ছেলেরা আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে ইতিহাস রচনা করেছে। আমার হাতে ভালো কিছু খেলোয়াড় ছিল। এখনো আমিনুল হক, এমেলি (জাহিদ হাসান), এনামুল (হক), জাহিদের (হোসেন) কথা মনে আছে।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: কিন্তু আপনি তো টুর্নামেন্ট শেষে এনামুলকে বাদ দিয়ে বড় চমক উপহার দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে চার বছর পর জাতীয় দলে ফিরিয়ে এনেছিলেন রোকনুজ্জামান কাঞ্চনকে। কেন?

জর্জেভিচ: আমি খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা আনতে চেয়েছিলাম। নিজেদের পায়ে বল না থাকলে এনামুলের মধ্যে একটা গা ছাড়া ভাব দেখতাম। কাঞ্চনকে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়ার মতো লড়াকু মনে হয়েছিল। এ ছাড়া একটা টুর্নামেন্ট শেষে একজন কোচও নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়তে চান। সে সংস্কারই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে সুযোগটি দেয়নি আপনাদের ফেডারেশন।

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল
প্রশ্ন

প্রশ্ন: আপনার বিদায়টা তো ছিল খুবই নাটকীয়। আপনি ফেডারেশনকে চার বছরে সাত কোটি টাকার চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ফেডারেশন সেটি মেনে না নেওয়ায় আপনি দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় যাননি...

জর্জেভিচ: ভালো ফলের নিশ্চয়তা দিয়েই আমি প্রস্তাবটি দিয়েছিলাম। আমি ও আমার কোচিং স্টাফ ইতিহাস গড়েছি, আপনি কেন বেতন দ্বিগুণ করে দেবেন না! বেতনের সঙ্গে বিষয়টি ছিল চার বছর মেয়াদি একটা পরিকল্পনার। ফুটবল জুয়া নয় যে আপনি ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকবেন। এখানে পরিকল্পনা অনুযায়ী সাফল্য আসে। ফেডারেশন যদি প্রস্তাবটা মেনে নিয়ে আমাকে কোচের দায়িত্বে রাখত, বাংলাদেশ এখন বিশ্বকাপ খেলত।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: তখন বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিং ছিল ১৫০। বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখাটা কি আসলেই বাস্তবিক ছিল?

জর্জেভিচ: ফুটবলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আপনার সম্ভব করার চেষ্টা ও পরিকল্পনা থাকতে হবে। খেলোয়াড়দের মধ্যে সম্ভাবনা ছিল। এশিয়ান কাপ ও বিশ্বকাপের লক্ষ্য নিয়ে এগোন যেত। আমি মনে করি, আমি এই কাজের জন্য যোগ্য ব্যক্তি ছিলাম। দেখুন, বিবিসি আমাকে নিয়ে এমনি এমনি ‘কোচ জোরান অ্যান্ড হিজ আফ্রিকান টাইগার্স’ ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করেনি। ২০১২–১৩ সালের অবহেলিত দক্ষিণ সুদানকে নিয়ে আমি দুর্দান্ত কিছু কীর্তি গড়ায় এই ফিল্ম বানিয়েছে তারা। আমাকে যদি এখনো ফেডারেশন ডাকে, আমি কিছু করে দেখাতে পারব।

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জন্য বিশ্বকাপে খেলা এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে
প্রশ্ন

প্রশ্ন: কিন্তু আপনি তো বিদায়ের দিন রাগ করে বাফুফের গাড়িতে পর্যন্ত উঠতে চাননি...

জর্জেভিচ: আমি তাদের অসম্মান করতে চাইনি। আসলে আমার কাছে মনে হয়েছিল, তারা ফুটবল নিয়ে কিছুই ভাবে না। ফুটবলের প্রতি দরদ পর্যন্ত নেই। এ জন্য ভীষণ রাগ হয়েছিল আমার।