Thank you for trying Sticky AMP!!

আর্জেন্টাইন ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ফুটবলার

ক্লাবে এত এত সাফল্যটা আর্থিকভাবে কোনো ফল এনে দেয়নি ম্যাকারেনা সানচেজকে। ফাইল ছবি

‘আমরা এমন এক পরিবেশে বাস করি যেখানে আমাদের আলাদা করে রাখে, আমাদের ঘৃণা করে। সমাজের বড় একটা অংশ মনে করে মেয়েরা ফুটবল খেলতে পারে না। আমাদের কোনো অধিকার নেই ফুটবল অনুশীলন করার।’ অভিযোগটা অনেক বড়, বিশেষ করে যখন সেটা শোনা যায় কোনো পেশাদার ফুটবলারের কণ্ঠে।

না, দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে পিছিয়ে থাকা কোনো দেশের কোনো নারী ফুটবলার এমন কথা শোনাচ্ছেন না। দুটি বিশ্বকাপ জেতা আর্জেন্টিনা, সমর্থক বিবেচনায় যে দেশ বিশ্বের শীর্ষ দুই দেশের একটি সেই আর্জেন্টিনার এক ফুটবলারই এমন অভিযোগ করেছেন। শুধু অভিযোগ করে থামেননি। এ অভিযোগ যেন মানুষ নজরে নেন, সেটা নিশ্চিত করতে তাঁর ক্লাব ও দেশের ফুটবল ফেডারেশনের বিপক্ষে মামলা করেছেন ম্যাকারেনা সানচেজ। কারণ, তাঁর মতো অসংখ্য নারী ফুটবলারকে পেশাদার ফুটবলার হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে চায় না আর্জেন্টিনা! অথচ মেয়েদের ফুটবলে ৩৬তম দেশ তারা। নারী ফুটবলেই সব নজর দেওয়া বাংলাদেশের চেয়ে ৮৮ ধাপ এগিয়ে আছে যে দল।

২০১২ সালে সানচেজ বুয়েনেস এইরেসে এসেছিলেন সানচেজ। কারণ দেশের অন্যতম বড় ক্লাব ইউএআই আরকুইহাতে যোগ দেবেন। সে ক্লাবের হয়ে ভালোই করছিলেন সানচেজ। গত মৌসুমেও বোকা জুনিয়র্স ও রিভার প্লেটকে হারিয়েছে এই ক্লাব। মহাদেশীয় প্রতিযোগিতা কোপা লিবারতোদোরেসে জায়গা নিশ্চিত করেছে ক্লাবটি। আর এই ক্লাবের ছেলেদের দলটি কি না পড়ে আছে তৃতীয় বিভাগে।

এতেও অবশ্য লাভ হয়নি সানচেজের। কারণ প্রথম বিভাগে থাকা মেয়েদের চেয়ে ছেলেরাই বেশি সুবিধা পান ক্লাবে, ‘এটা খুবই হতাশাজনক। ওরা ভালো বেতন পায়, ভালো পরিবেশ পায় এবং শুধু ফুটবলার হিসেবেই জীবন যাপন করতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা পারি না। আমাদের ফল ভালো, বেশি শিরোপা জিতেছি, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলেছি। তবু নারী হওয়াতেই আমাদের অবজ্ঞা করা হয়।’

অবজ্ঞার চিত্রটি একটু তুলে ধরা যাক। মাসে যাতায়াতের জন্য শুধু ৪০০ আর্জেন্টাইন পেসো (৮৮০ টাকার মতো) মিলত সানচেজদের। তবু নাকি মেয়েদের অন্য ক্লাবের চেয়ে ভালো অবস্থা ইউএআইয়ের! ‘আমাদের সঙ্গে অবজ্ঞা ও নিরুৎসাহিত করার মতো আচরণ করা হতো। সুযোগ-সুবিধা ভালো ছিল না। মাঝে মাঝেই খুব বাজে পরিবেশে অনুশীলন করতে হতো, পেশাদারি উন্নতি করার উপকরণ ছিল না। অন্য ক্লাবের সঙ্গে তুলনা করলে ইউএআই সেরাদের একটি। অনেক ক্লাব খেলোয়াড়দের মাসে মাসে টাকা দেয়। অন্য ক্লাব তো অনুশীলন ও খেলার মৌলিক বিষয়ও নিশ্চিত করে না। অনুশীলনের কাপড়, সামগ্রী, খাবার , অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ, ডাক্তারের খরচ খেলোয়াড়দেরই দিতে হয়। (এর মাঝে শেষের তিনটি খেলায় বাধ্যতামূলক এবং ক্লাব এটা দিতে বাধ্য।) অনেক ক্লাব তো চোটের খরচ কিংবা শুশ্রূষার খরচও দেয় না।’

এ মৌসুমের মাঝপথে সানচেজকে তাঁর ক্লাব বলে দিয়েছে,আর তাঁকে দরকার নেই ক্লাবের। মৌসুমের মাঝপথে নতুন কোনো ক্লাবে যাওয়ার সুযোগও নেই সানচেজের। কারণ মৌসুমের শেষেই দলবদল করা সম্ভব। যেহেতু এখন আর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়টাও নেই, তাই সানচেজ ক্লাব ও ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ‘ক্লাব ও এএফএ প্রতিদিন আমাদের ওপর যে অত্যাচার চালায় সেটা বন্ধ করতে হবে। আমাদের ক্রীড়া কর্মী হিসেবে গণ্য করতে হবে, এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা তাই। ফুটবল আর্জেন্টিনার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। তবু মেয়েদের পেশাদার হিসেবে ধরা হয় না। ফেডারেশন ও ক্লাব আমাদের পেশাদার মনে করে না। বেতনের মতো মৌলিক বিষয়ও দেয় না।’

ক্লাবের কাছ থেকে তাই গত সাত বছরের জন্য জরিমানা চাইছেন সানচেজ। তবে ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলারে মূল চাওয়া আরও বড়। ফুটবল পাগল আর্জেন্টিনার মতো দেশে মেয়েদের ফুটবলার হিসেবে গণ্য না করার লজ্জাটা দূর করা। এ কারণেই জরিমানার অর্থ মেয়েদের ফুটবলেই ব্যয় করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন সানচেজ।