Thank you for trying Sticky AMP!!

গোপীবাগের ভরসা 'গুগল ট্রান্সলেটর'!

২০০৯ কনফেডারেশন কাপ ফুটবলে স্পেনের বিপক্ষে খেলছেন মুয়াইদ খালিদ আল খামিশিয়ে। সংগৃহীত ছবি
>ইরাক জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মুয়াইদ খালিদ আল খামিশিয়ে খেলতে এসেছেন গোপীবাগের ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নে। ২০০৯ সালে কনফেডারেশন কাপ খেলা এই ফুটবলারের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে হলে গুগল ট্রান্সলেটরই ভরসা!

মৃদু অন্ধকার, ছোট একটি কক্ষ। নিজের কক্ষে বসে থাকা মুয়াইদ খালিদ আল খামিশিয়ের চোখেমুখে বুঝি খেলে যাচ্ছে এর চেয়েও বেশি আঁধার। নতুন কোনো আগন্তুক তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেই নাকি আঁধার নেমে আসে তাঁর ফরসা মুখে। তাহলে কি ইরাকি এই ফুটবলার অতিথি পছন্দ করেন না? আসলে তা নয়, সমস্যাটা ভাষাগত।

আরবি ছাড়া কোনো ভাষাতেই কথা বলতে পারেন না ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলতে আসা ইরাকি এই ডিফেন্ডার। কথা বলতে পারেন না বলতে ‘একেবারেই না’, জোর দিয়েই বলা যায়। দু-একটু কথা বলে ভাব জমাবেন? ভরসা মোবাইলে থাকা ‘গুগল ল্যাংগুয়েজ ট্রান্সলেটর’। আসসালামু আলাইকুম বা আরবি ছাড়া অন্য যেকোনো শব্দ ব্যবহার করলেই মুখের সামনে এগিয়ে দেন মোবাইলটি। সেখানে রেকর্ড হওয়া কথা আরবিতে ট্রান্সলেট করে শুনে আবার বলা। তাই গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়নের কাছে খেলোয়াড়ের চেয়ে এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ গুগল ট্রান্সলেটর।

কিন্তু এভাবে কি আর মন খুলে কথা বলা যায়! ইরাক জাতীয় দলে খেলেছেন বেশ কয়েক বছর। ঝুলিতে আছে ২০০৯ সালে ফিফা কনফেডারেশন কাপ খেলার অভিজ্ঞতাও। তাঁর সম্পর্কে তো জানার ইচ্ছে অনেক। অত্যন্ত কৌতূহল থাকা সত্ত্বেও ভাষাগত সমস্যায় কথা আর এগোয় না। দুজনের মুখেই কিছুটা বিরক্তি। ব্যস, ফোনে ধরিয়ে দিলেন থাইল্যান্ডে থাকা তাঁর এজেন্টকে। ইরাকি যেই এজেন্টের মাধ্যমে কমলা জার্সি গায়ে তুলেছেন মুয়াইদ খালিদ। তাঁর মুখ থেকেই কনফেডারেশন কাপ খেলা এই ফুটবলার সম্পর্কে কিছু জানা। বাংলাদেশে আসার আগে ওমানের ক্লাব আল নাহদার জার্সিতে খেলেছেন মুয়াইদ খালিদ। পুরো পরিবারই ফুটবলময়। সাত ভাইবোনের মধ্যে চার ভাইই ফুটবলার। তবে জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতা আছে শুধু তাঁরই।

প্রশ্নটা হলো, খেলার মাঠ বা অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে কীভাবে ভাব বিনিময় করেন তিনি?

ফুটবলের ভাষা এক। সুতরাং মাঠের খেলায় তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু এর বাইরে গেলে কিছুটা সমস্যা হয় বলে জানালেন ম্যানেজার আমের খান, ‘মাঠে তেমন সমস্যায় পড়ি না। কিন্তু অন্য সময় কিছুটা সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করি আমরা। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে কথা বলতে হলে আরবি বলতে পারেন, এমন কাউকে ডাকা হয়। আমাদের ক্লাবেই একজন আছেন, যিনি অল্প আরবি বলতে পারেন।’

মুয়াইদের একটি মজার গল্পও শোনালেন ব্রাদার্স ম্যানেজার, ‘ও প্রথম দিন ক্লাবে এসে ‘হাম্মাম...হাম্মাম’ করছে, আমরা তো আর বুঝি না। পরে গুগলের সাহায্য নিয়ে ওকে টয়লেটের রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া।’

গুগল ছাড়াও আরেকজন কিছুটা পড়তে পারেন ৩১ বছর বয়সী ইরাকি এই ডিফেন্ডারকে। তিনি ব্রাজিলিয়ান এভারটন সান্তোস জুনিয়র। দুবাইয়ের ক্লাবে খেলার সুবাদে টুকটাক আরবি বলতে পারেন মাঝে এক বছর ঢাকার মাঠ কাঁপানো এই ব্রাজিলিয়ান। এ ছাড়া পাশাপাশি রুমে থাকায় দুজনের মধ্যে সম্পর্কটাও অন্যদের চেয়ে একেবারেই আলাদা।

কিন্তু অন্য সতীর্থরাই-বা পিছিয়ে থাকবেন কেন? ইতিমধ্যে হাবিবি (বন্ধু), মুশকিল (সমস্যা আছে) শব্দগুলো শিখতে শুরু করেছেন ইমরুল হাসান, বিপ্লব ভট্টাচার্যরা। দলীয় অধিনায়ক ইমরুল হাসানকেই বেশি সামলাতে হয় মুয়াইদকে। ফলে ভাষার চর্চাটা বেশি করতে হচ্ছে তাঁকেই, ‘প্রথম দিন ক্লাবে আসার পরই আমাকে অফিশিয়ালদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আরবি ছাড়া অন্য কোনো ভাষাতে কথা বলতে পারেন না। কিন্তু দলের প্রয়োজনে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলাও জরুরি। তাই আমি হাবিবি, মাছি, মুশকিল শব্দগুলো শিখি। এ ছাড়া গুগল ট্রান্সলেটর বা ইশারা–ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলি।’

মুয়াইদের আগে ঢাকার মাঠে খেলে গিয়েছেন আরও দুই ইরাকি ফুটবলার—সামির শাকির ও আলভিও। তাঁদের মধ্যে আবাহনীতে খেলা ও পরবর্তী সময়ে জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করা সামির শাকিরের ভাষাগত সমস্যা ছিল না। ইংরেজিতে দক্ষ ছিলেন ইরাকের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা এই ডিফেন্ডার। বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন ১৯৯৯ সালে সাফ গেমসের শিরোপাও। মুয়াইদের ভাষাগত সমস্যা যতই থাক, মাঠে ভালো খেলতে পারলে, সতীর্থদের সঙ্গে তাল-মিলিয়ে চলতে পারলে, ভাষাতে আর কি যায় আসে! কিন্তু গোপীবাগবাসীর দুঃখের ব্যাপার, ফেডারেশন কাপে আলাদাভাবে চেনাতে পারেননি কনফেডারেশন কাপ খেলা এই ফুটবলার। ব্রাদার্সও বিদায় নিয়েছে ফেডারেশন কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে!