Thank you for trying Sticky AMP!!

চা-বাগানে ফুটবল-ফুল

চা–বাগানের মেয়েরা। তাদের জীবনে নতুন স্বাদ এনেছে ফুটবল । ছবি: প্রথম আলো

চা-বাগানের খাটুনির গণ্ডিতে বাঁধা পড়ে ছিল তাঁদের জীবন। কুঁড়ির খোঁজ করতেই অস্ত যেত সূর্য। সেই জীবনে নতুন স্বাদ আনল ফুটবল।

৭ বছর পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে নারী ফুটবল লিগ। এতে অংশ নিচ্ছে সিলেট জেলার স্পার্টান এমকে গ্যালাকটিকো এফসি। দলটির সাত খেলোয়াড় চা-বাগানের শ্রমিক। সবারই বয়স ১৫-১৬ বছরের মধ্যে। লাবনি নায়েক, রিমি গোয়ালা ও লতা ব্যানার্জি লালা খাল চা-বাগানে, দীপা মুণ্ডা ও মুক্তা দাস দলদলি চা-বাগানে, শ্যামলী বসাক খাদিম চা-বাগানে ও জননী মুদি লাকাতুরা চা-বাগানে কাজ করেন। ধরাবাঁধা জীবনের বাইরে এসে তাঁরা এখন ফুটবল খেলেন।

ঢাকার গোপীবাগে লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবে আবাসিক ক্যাম্প চলছে এই মেয়েদের। প্রথম ম্যাচে নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির কাছে ১২-০ গোলে হারলেও গ্যালাকটিকোর মেয়েরা মন খারাপ করেননি। বরং নতুন জীবন উপভোগ করছেন। ভালো খাবার পাচ্ছেন। হাতখরচ বাবদ পাওয়া টাকাটাও চা-বাগানের তুলনায় ভালো। ঘাড়ের ওপর ৪৩ কেজি পাতা তোলার চাপ নেই। গাছে ওষুধ ছিটাতে হচ্ছে না। সাদাচোখে এটাই নগদ প্রাপ্তি।

তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়া জননীর বাবা চা-বাগানে কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। বেশ কয়েক বছর অসুস্থ হয়ে বাড়িতে ছিলেন, গত বছর মারা যান তিনি। তাই অল্প বয়সেই চা-শ্রমিক হয়ে ওঠা জননীর। চা-বাগানে কাজ করা ছাড়াও একটি মুদিদোকানও দেখতে হয় ডিফেন্ডার জননীকে। মিডফিল্ডার দীপা মা হারান সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়। মায়ের মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়ে হিসেবে বাড়ির দায়িত্ব বুঝে নেওয়ায় থেমে যায় পড়াশোনা। বাড়ির রান্নার দায়িত্ব নিতে হয় তাঁকে। চা-বাগানে না গেলে বাদ পড়ার শঙ্কা থাকে। যেখানে দৈনিক সর্বনিম্ন মজুরি মাত্র ১০২ টাকা।
চা-বাগানে কাজ করার চাপে পড়াশোনা করা হয় না দুই বোনের বড়জন লতার। বাবা-মা যেকোনো একজনের অনুপস্থিতিতে হাজিরা দিতে হয় বাগানে। বাকি চারজনের গল্পটাও একটু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই রকম। প্রতিদিন বা মাঝেমধ্যে হয় চা-পাতা তোলা, না হয় গাছের তোলা, পরিষ্কার করা অথবা গাছে ওষুধ ছিটাতে হয়। স্কুলের খাতায় নাম আছে মুক্তা, রিমি ও শ্যামলীর। কিন্তু সেটা শুধু থাকার মতোই।

সামাজিক সংগঠন এফআই ডিবি ও সাম্পান ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এই মেয়েদের ফুটবলে আসা। সবারই বিভিন্ন স্কুলের হয়ে বঙ্গমাতা ফুটবল খেলার সুযোগ হয়েছিল। এবার নারী ফুটবল লিগে মেয়েদের দল গড়তে গ্যালাকটিকো খেলোয়াড় বাছাইয়ের ঘোষণা দিলে চা-বাগানের ১৩ জন মেয়ে ট্রায়াল আসেন। টিকলেন এই সাতজন। তবে আর চা-বাগান নয়। এই মেয়েরা ফুটবলই খেলতে চান। সবার হয়ে শুধু এই আরজিটাই জানিয়ে রাখলেন দশম শ্রেণির ছাত্র শ্যামলী, ‘চা-বাগানে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফুটবল আমরা আগেও খেলেছি। কিন্তু সেটা দু-এক দিনের জন্য। এবার এক মাস ধরে আমরা একসঙ্গে ফুটবল খেলছি। এখন থেকে ফুটবলই খেলতে চাই। চা-বাগানের চাকরিতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।’

ওদের ধরে রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে গ্যালাকটিকো। প্রয়োজনে এই মেয়েদের বাড়িতে বাজারও করে পাঠানো হয় বলে জানান ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ। তাঁর কথা, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রায় এক মাসের ক্যাম্প করিয়ে ঢাকায় এনেছি এই মেয়েদের। মেয়েদের ফুটবলে ধরে রাখতে চাই, সে জন্য প্রয়োজনীয় কিছু হাতখরচ দেওয়ার চেষ্টা করছি। কখনো কখনো ওদের বাড়িতে বাজার করেও পাঠানো হয়।’ খেলোয়াড় থেকে কর্মকর্তা সবারই স্বপ্ন চা-বাগানে ফুটবল ফুল ফোটানোর। সেই আশা শূন্যে মিলিয়ে না গেলেই হয়।