Thank you for trying Sticky AMP!!

ঘরোয়া ফুটবলে নিচু স্তরের ক্লাবগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না

ছোটরা ‘বড়’ হবে কবে

বিভিন্ন দেশে তৃণমূলের বিপুলসংখ্যক দল অংশ নেয় ঘরোয়া টুর্নামেন্টে। কিন্তু বাংলাদেশে সেই সুযোগ পাচ্ছে মূলত শীর্ষ লিগের ক্লাবগুলোই।

ইংলিশ লিগ কাপে দলসংখ্যা কত? কুইজের প্রশ্ন হতে পারে। উত্তর—৯২টি ক্লাব। দলগুলো আসে ইংল্যান্ডের পেশাদার ফুটবলের চারটি স্তর প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নশিপ, লিগ ওয়ান ও লিগ টু থেকে। একইভাবে স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানিতেও ঘরোয়া কাপে শীর্ষস্তরের ক্লাবগুলোর পাশাপাশি খেলে নিচের দিকের লিগের ক্লাবও।

শুধু ইউরোপ কেন, সাফ অঞ্চলের নেপালেও বছর ১৫ আগে খুকুরি কাপে শতাধিক ক্লাব খেলত। মালদ্বীপের ফেডারেশন আয়োজিত নকআউটভিত্তিক এফএ কাপে বড় পরিসরে খেলেছে সব বিভাগের ক্লাব। ছোট ক্লাবগুলোরও লাভ এতে। ধরুন, বার্সেলোনার সঙ্গে স্পেনের তৃতীয় বা চতুর্থ বিভাগের দল খেলছে। ক্লাবটি এতে উৎসাহিত হওয়ার পাশাপাশি টিকিট বিক্রি থেকেও বড় অঙ্ক পেতে পারে।

কিন্তু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) কখনো এভাবে ভাবেনি। সত্তর-আশির দশকে আগাখান গোল্ডকাপে খেলত ঢাকার প্রথম বিভাগ আর বিদেশি দল। ১৯৮১ সালে প্রবর্তিত আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপে দলসংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। কখনো দল মাত্র ১২টি, কখনো ১৫ বা ১৮। ৯ জানুয়ারি শেষ হওয়া ৩৩তম ফেডারেশন কাপে খেলেছে প্রিমিয়ার লিগের ১২ দলের ৯টি। মাঝেমধ্যে কিছু সার্ভিসেস দল খেলেছে। প্রথম বিভাগের দু-একটি দলও অংশ নিয়েছে মাঝেমধ্যে। সত্তর দশকে প্রবর্তিত স্বাধীনতা কাপেও মূলত খেলছে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ ক্লাবগুলো। এবারের টুর্নামেন্টে প্রিমিয়ার লিগের ১২টি ক্লাবের সঙ্গে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর দল খেলেছে।

নিচের দিকের দলগুলোকে বড় টুর্নামেন্টে আনতে বাফুফের অনীহা অনেক পুরোনো। কারও কারও শঙ্কা, ছোট দল না গোলে ভেসে যায়! তবে গোল খাওয়ার ভয়ে তৃণমূলের ক্লাবগুলোকে মূল স্রোতে না আনা যুক্তিযুক্ত নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। ঢাকা মহানগরী লিগ কমিটির সাবেক সভাপতি আবদুর রহিম বলছেন, ‘গোল খাওয়া কোনো ব্যাপার নয়। তৃণমূলের ক্লাবকে বড় দলগুলোর সঙ্গে খেলার সুযোগ দিলে দেশের ফুটবলের পিরামিড আরও শক্ত হবে। এটা খুব দরকারও।’

কিন্তু ফেডারেশন কাপে অতীতে অনেক দলকে আমন্ত্রণ জানালেও উৎসাহী দল তেমন পাওয়া যায়নি—এমন কথা বলেছে অনেক সংগঠনই। তারপরও একাধিকবার ফেডারেশন কাপের টুর্নামেন্ট কমিটির সাবেক সম্পাদক ফজলুর রহমান তৃণমূলের দল চান বাফুফের টুর্নামেন্টে, ‘আমরা অতীতে শীর্ষ লিগের বাইরে শুধু সার্ভিসেস টিম পেয়েছি ফেডারেশন কাপে। নিচের দিকে অনেক ক্লাব জানায়, তাদের প্রস্তুতি নেই। তবে তৃণমূলের ক্লাবগুলোকে নিয়ে টুর্নামেন্ট হলে খুবই ভালো।’

নিচের দিকের দলগুলোকে ফেডারেশন বা স্বাধীনতা কাপে সুযোগ দেওয়া উচিত বলছেন সাবেক ফুটবলার ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপুও, ‘তৃণমূলে এমনিতেই খেলা কম। ক্লাবগুলো সারা বছর বলতে গেলে বসেই থাকে। সেই ক্লাবগুলোকে একটা সুতোয় গাঁথতে পারলে ইতিবাচক ফল আসবে। তৃণমূলের দলগুলোও উৎসাহ পাবে।’

তৃণমূলের খেলোয়াড়-সংগঠকদেরও একই মত। প্রথম বিভাগের ক্লাব মহাখালী একাদশের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক পাশা নিচের দিকের অনিয়মিত লিগ নিয়ে আক্ষেপ জানিয়ে বললেন, ‘আগামীতে বাফুফে আয়োজিত টুর্নামেন্টে সুযোগ পেলে অবশ্যই খেলব।’ ক্লাবের ফরোয়ার্ড খলিলুর রহমানের কথা, ‘খেলোয়াড় তৈরি করতে চাইলে তৃণমূলের ক্লাবগুলোকে অবশ্যই সুযোগ দিতে হবে বাফুফের টুর্নামেন্টে। বড় দলের কাছে হয়তো আমরা গোল খাব। কিন্তু ম্যাচ খেলতে পারলে তৃণমূলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস এতে বাড়বে অনেক।’

তৃণমূল নিয়ে এখন কি নতুন করে ভাবা যায়? বাফুফের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুর্শেদীর প্রতিশ্রুতি, ‘নিচের দিকের দলগুলোর অনেক সংকট আছে। তবে আগামীতে আমরা নিচের দিকের কিছু দলকে টুর্নামেন্টে সুযোগ দিতে পারি। এটা উত্তম ভাবনা। আমরা দেখব।’