Thank you for trying Sticky AMP!!

জিকো নামের এক গোলকিপার

বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন টাটকা হাওয়া আনিসুর রহমান জিকো। ছবি: প্রথম আলো
>

টানা দুটি টাইব্রেকারে বসুন্ধরা কিংসকে জিতিয়ে তুলেছেন স্বাধীনতা কাপের সেমিফাইনালে। আনিসুর রহমান জিকো এখন ঢাকার ফুটবলে টাটকা হাওয়া

জিকো নামটা কে রেখেছেন, তা কখনো জিজ্ঞেস করেননি বাবা-মাকে। তাই জানেন না নামটা রাখার রহস্য কী। তবে জিকো নামের বিখ্যাত ফুটবলারটির কথা জানেন। আইএসএলে একটা দলের কোচ সেটাও শুনেছেন। ছবি-টবি দেখেছেন। সেটিও ব্রাজিলের সমর্থক বলে। তবে আর বেশি কিছু জানেন না। কখনো ইউটিউবে কৌতূহলবশত ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির খেলাও দেখেননি। আনিসুর রহমান জিকো বলেন, ‘দেখতাম, উনি যদি গোলকিপার হতেন। উনি তো গোলকিপার নন (হা হা)।’
এই জিকোর সঙ্গে তাঁর নামের উৎপত্তি নিয়ে কথা হচ্ছিল গতকাল। আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমস বাংলাদেশ জাতীয় দলের ট্রেনার থাকার সময় এই জিকোও ছিলেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। তখন নাকি জিকোকে মজা করে মারিও বলেছিলেন, ‘নামের কারণে আমি তো ভাবছি তুমি স্ট্রাইকার হে।’
আসলে তো গোলকিপার। উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি, আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো। তা অবশ্য কোনো বাধা নয়। ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়েও পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় দলে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন রণজিৎ বিশ্বাস। তো এই জিকো কী করবেন, সময়ই বলবে। তবে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ফুটবলে সবচেয়ে আলোচিত নাম এই জিকোই। মাঠে স্ট্রাইকারদের সামনে বাধার প্রাচীর। পত্রিকার পাতায় তাঁর বড় ছবি, শিরোনামও তাঁকে নিয়েই।
হওয়ারই কথা। ২১ বছরের তরুণ কাঁধে বইছেন মৌসুমের সবচেয়ে বেশি ১০-১২ কোটি টাকায় গড়া দল বসুন্ধরা কিংসের ভার। যেখানে দলটির জার্সি গায়ে খেলা রাশিয়া বিশ্বকাপে কোস্টারিকার ফরোয়ার্ড দানিয়েল কলিনদ্রেস পর্যন্ত পেছনের পাতায়। সবার ওপরে এখন জিকো।
অনুশীলনে স্পট কিক ঠেকান, নিজে গোলও করেন। এটা তাঁর অভ্যাস। তাই ম্যাচ টাইব্রেকারে গেলে বসুন্ধরা কিংসের বিশ্বাস, জিকো ম্যাচ জিতিয়ে দেবেন। বলের নিচে থাকেন, ফ্লাইটটা বোঝেন। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই গুণগুলোর জোরেই রহমতগঞ্জের বিপক্ষে স্বাধীনতা কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে অপ্রতিরোধ্য জিকো। ২-২ শেষে টাইব্রেকারে রহমতগঞ্জের ৫ শটের তিনটিই আটকে নায়ক জিকো। এক ম্যাচে তিন স্পট কিক ঠেকানোর অভিজ্ঞতা তাঁর ২০১৩ সালেই হয়েছে। চট্টগ্রামে দ্বিতীয় বিভাগে কল্লোল সংঘকে এভাবেই টাইব্রেকারে জেতান। ৩টি সেভ করে টাইব্রেকারে গোলও করেন। দলটি ওঠে প্রথম বিভাগে।
পরশু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা কাপের সেমিফাইনালেও যথারীতি আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর জিকো। ১২০ মিনিট ১-১, যেখানে দারুণ খেলেছেন জিকো। টাইব্রেকারে আবাহনীর প্রায় প্রতিটি শটই বলের লাইনে ঝাঁপান। কিন্তু নাগাল পাচ্ছিলেন না। অবশেষে আবাহনীর অষ্টম শটটি আটকে দলকে সেমিতে তোলার দরজা খোলেন। পরপরই সবাইকে চমকে দলের অষ্টম শটে নিজেই গোল করে দলকে তোলেন স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে।
এখন সবার শুভেচ্ছায় সিক্ত জিকো। বাড়ি থেকে বন্ধু, আত্মীয়স্বজনদের ফোন আসছে। বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বালুরচর গ্রামে। যেখানে মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও সুশান্ত ত্রিপুরারও বাড়ি। পাশেই মহেশখালীতে বাড়ি তৌহিদুল আলম সবুজের। এঁরা চারজন একই এলাকার, খেলছেনও একই দল বসুন্ধরা কিংসে। চারজনই সর্বশেষ জাতীয় দলে ছিলেন। যদিও জিকোর এখনো অভিষেক হয়নি জাতীয় দলে।
তবে অনূর্ধ্ব-১৯,২৩ দলে খেলেছেন গোটা সাতেক ম্যাচ।
এখন স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলের একাদশে ঢোকার। যে স্বপ্নটা দেখছেন ছোট থেকেই এলাকায় খেলে। এলাকার খেলা মানে দুই দলে ভাগ, গোলকিপার টান পড়লে একজনকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া। এভাবে খেলতে খেলতে এলাকারই বড় ভাই শেখ জামালের স্ট্রাইকার নুরুল আবসারের চোখে পড়েন। আবসার তখন বলেন, ‘তুই নিয়মিত মাঠে আয়, ফুটবল খেললে ভালো করতে পারবি।’ সেই প্রেরণায় ডুলহাজারা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠের সঙ্গে সখ্য, কিন্তু বুট নিতেন না। পরিবারও চাইত না ফুটবলার হোক ছেলে। লুকিয়ে লুকিয়ে যেতেন খেলার মাঠে। সন্ধ্যার আগে বাড়ি না ফিরলে বকুনি খেতে হবে।
পড়ালেখা নয়তো বাবা মনজুর আলমের লবণ, মাছের আড়ত দেখাশোনা। ফুটবলার না হলে এটাই ছিল তাঁর ইচ্ছা। এখন তো জীবনই গেছে বদলে। ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিকফোর্ডকে আদর্শ মেনে এগিয়ে চলেছেন। গোলরক্ষক হিসেবে ভালো লাগে আশরাফুল রানা ও সোহেলকে। আর ভালো লাগে কক্সবাজারের শুঁটকি।
জিকোর বসুন্ধরা কিংসে আসা ঘটনাচক্রে। কিংসের মূল গোলকিপার মোস্তাক মৌসুম শুরুর আগেই চোটে পড়েন। তখন জাতীয় দলের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকা জিকোকে ‘বুক’ করে দলটি। জাতীয় দলে তখন একমাত্র জিকোরই দল চূড়ান্ত হয়নি। আগের মৌসুমে সাইফ স্পোর্টিংয়ে শুরুর দিকে খেললেও পরে বিদেশি কোচ তাঁকে খেলাতেন না। তারও আগের বছর চট্টগ্রাম আবাহনীতে ছিলেন জাতীয় দলের এক নম্বর গোলকিপার আশরাফুল রানার ছায়ায়।
বসুন্ধরায় এসেও শুরুতে দর্শক। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট চায়নি শেখ জামালের বিপক্ষে ফেডারেশন কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে গোলকিপার বদল করতে। কিন্তু স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজন নামিয়ে দেন জিকোকে। সেই থেকেই জিকোই কোচের প্রিয় পাত্র। এখন তো জিকো দলটির ত্রাতাও!