Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকা শহরের কত জায়গায় যে দৌড়াতাম!

শেখ মোহাম্মদ আসলাম। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাসআক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এইসময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলেদিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো-

১৯৯২ সালে মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মনে পড়ছে, নব্বই দশকের শুরুর দিকে আবাহনীর হয়ে ভারতে নাগজি ট্রফি জিতে আসার পর মা ঢাকা বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। নিরাপত্তা বেস্টনি ভেদ করে সমর্থকেরা মাকে আমার কাছে নিয়ে আসে সেদিন। সেই স্মৃতি কখনো ভুলব না।

এতদিন ভাবছিলাম মাকে ঘিরে মনের কোনে ভীড় করা হাজারো স্মৃতিকথা ডায়েরিতে লিখে রাখব। পরে একটা বই আকারে প্রকাশ করব। নানা কারণে সেই সুযোগ হয়নি এতদিন। করোনাভাইরাসের সময়ে সে সুযোগটা পেয়েছি। মাকে নিয়ে কিছুটা লিখেও ফেলেছি। বাকিটাও আশা করি লিখে ফেলতে পারব।

আমার প্রয়াত বাবা শেখ আলী আহমেদের কথাও আসছে লেখায়। বাবা ভালো ফুটবল খেলতেন। খুলনা বেতারের শিল্পী ছিলেন, নাটক করতেন। খুবই সৃজনশীল একজন মানুষ ছিলেন। তাঁর মধ্যে সংস্কৃতিচর্চা ছিল। সেই ছোঁয়াটা আমার মধ্যেও কিছুটা আছে। যদিও আমি শিল্পী হইনি। তবে এখনো গানের চর্চা করি।

শুনে অবাক হলেন! ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আমার আগ্রহ। মা চাইতেন ছেলে গায়ক হবে। কিন্তু আমি হলাম কিনা ফুটবলার! অথচ ছোটবেলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে প্রথম পুরস্কার নিয়ে আসতাম বাড়িতে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির অনুষ্ঠানেও গান গেয়েছি হা, হা, হা। এটা অবশ্য সিরিয়াস কিছু নয়। তবে গানটা আমার ভালো লাগে এই আর কী!

খেলা, চাকরি ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ততায় পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারিনি। এই সময়ে এসে বুঝতে পারছি, আপনজনদের অনেক বঞ্চিত করেছি। এটা ঠিক হয়নি। এখন দুই মেয়ে, স্ত্রী, শাশুড়ি সবাই মিলে ভালো সময় কাটছে বাসায়। স্ত্রীকে সময় দিতে পারছি। আমার দুই মেয়ের বড় জনের বিয়ে হয়ে গেছে। তবে সেও এখন আমার বাসায়। দুই বোন মিলে আমাকে বেশ শাসনে রেখেছে। বাসায় বাইরে যাওয়া একদমই বারণ। গল্পগুজবের ফাঁকে টিভি দেখি। সনি টিভিতে ক্রাইম পেট্রোল অনুষ্ঠানটা বেশ লাগে আমার। এটাই বেশি দেখা হয়। কীভাবে গোয়েন্দারা অপরাধিদের ধরে এগুলো দেখে অনেক কিছু শেখার আছে। টুকটাক সিনেমাও দেখি। শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়াম করি। দেয়ালের গায়ে টেনিস বল পেটাই। এভাবেই চলছে আমার করোনাকালীন জীবন।

যাই করি না কেন, খেলোয়াড়ী জীবনের ফেলে আসা স্মৃতিগুলো মনকে দোলা দিয়ে যায় প্রতিনিয়ত। সকাল-বিকাল কঠোর অনুশীলন করতাম তখন। আবাহনী মাঠে বিকেলে লম্বা অনুশীলনের পরও আমার ক্ষুধা মিটত না। সন্ধ্যায় পর সংসদ ভবনের ওখানে গিয়ে দৌড়াতাম। সঙ্গীদের বলতাম, 'পারলে দৌড়ে তোরা আমাকে ধর।' এই যুগের ফুটবলাররা ভাবতেও পারবে না ঢাকা শহরের কত জায়গায় দৌড়াতাম আমি। তখন ফিট থাকার জন্য কী যে পরিশ্রম করেছি বোঝানো কঠিন। দেশের ঘরোয়া লিগে সর্বোচ্চ ৫ বার সর্বোচ্চ গোলদাতা এমনি এমনিই তো হয়ে যাইনি!

এখন এসব হারিয়ে গেছে। দেশের বর্তমান ফুটবলের দুরবস্থার কথা ভেবে দুঃখ হয়। নেতেৃত্বের উদাসীনতা আর ব্যর্থতায় আমাদের ফুটবল অনেক পিছিয়ে গেছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় মানুষদের কথা ভাবলে মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়। ঠিক করেছি সারা দেশের কিছু টেনিস খেলোয়াড়কে আর্থিক সহায়তা করব। একটা তহবিল গঠনের কাজ চলছে।

অনেকে হয়তো বলবেন, সাবেক ফুটবলার হয়ে আমি কেন টেনিস খেলোয়াড়দের সাহায্য করবো! আমি টেনিস ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির কোষাধক্ষ্য। নিয়মিত টেনিস খেলিও। কাস্টমসে চাকরি করার সময় ওখানে এক বড় ভাই বলেছিলেন, 'আসলাম, তুমি টেনিস খেল। সারা জীবন সুস্থ থাকবে।' তাঁর কথা শুনে টেনিস খেলা শুরু করি। আজ মনে হয়, যৌবনে কেউ আমাকে উৎসাহিত করলে টেনিসেও নিশ্চয়ই ভালো করতাম। সব মিলিয়ে টেনিসের প্রতি আলাদা একটা অনুভূতি কাজ কওে সবসময়।

ফারাজ স্মৃতি গোল্ডকাপ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের সঙ্গেও আমি সক্রিয়ভাবে যুক্ত। সোনালী অতীত ক্লাব টুর্নামেন্টটি আয়োজন করে আসছে। টুর্নামেন্টের তহবিল থেকে কিছু আর্থিক সহায়তার চেষ্টা করছি ফুটবলাঙ্গনের পিছিয়ে থাকা মানুষদের। এটাই এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি।