Thank you for trying Sticky AMP!!

দলবদলের পর: কেমন হলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড?

নতুন মৌসুমে নতুন ইউনাইটেডকে দেখবে সবাই? ছবি : এএফপি
গত রাতে শেষ হয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর দলবদল। নিজেদের শক্তিমত্তা বিবেচনা করে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো এর মধ্যেই প্রয়োজনীয় খেলোয়াড় এনেছে, অপ্রয়োজনীয় খেলোয়াড় ছেড়ে দিয়েছে। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো আর নিজের দলে খেলোয়াড় আনতে পারবে না। দলবদল শেষে দলগুলোর অবস্থা কেমন হলো? এই পর্বে আমরা দেখে নেব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সম্পর্কে।


নতুন কোচ ওলে গুনার সুলশার আসার পর এটাই ছিল প্রথম দলবদলের সময়। নতুন কোচের পরিকল্পনা ও খেলানোর ধরন অনুযায়ী ক্লাবের দুর্বল জায়গা গুলো শক্তিশালী হবে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থকদের আশা ছিল এটাই। কিন্তু সেই প্রত্যাশার ঠিক কতটুকু পূরণ হয়েছে?

এই দলবদলের পর খালি চোখে ইউনাইটেডের একাদশ দেখলে বলতে হয়, অতটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি সুলশার। আবার এটাও মাথায় রাখতে হবে, ইউনাইটেডের যে অবস্থা, তা ঠিক করতে একটা দলবদলের জানালাই (ট্রান্সফার উইন্ডো) যথেষ্ট নয়। ইয়ুর্গেন ক্লপ আসার পর লিভারপুলে যা হয়েছিল আর কি। চার বছরের চেষ্টায় লিভারপুলকে আজকের মতো ইউরোপ জয়ী দলে পরিণত করতে পেরেছেন ক্লপ। সে হিসেবে এক দলবদলে ইউনাইটেডের সকল সমস্যা যে সুলশার মেটাতে পারবেন না, এটা মোটামুটি জানাই ছিল। তাও, সুলশার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন দলের মূল দুর্বলতার জায়গা গুলো ঢেকে রাখার। সে লক্ষ্যে কতটুকু সফল হয়েছেন তিনি? নতুন মৌসুমে কেমন রূপে ইউনাইটেডকে দেখব আমরা?

এবার ইউনাইটেডে নতুন খেলোয়াড় এসেছেন তিনজন। ক্রিস্টাল প্যালেস থেকে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে এসেছেন ইংলিশ রাইটব্যাক অ্যারন ওয়ান-বিসাকা, লেস্টার সিটি থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ডিফেন্ডার বানিয়ে ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে নিয়ে আসা হয়েছে ইংলিশ সেন্টারব্যাক হ্যারি ম্যাগুয়ারকে। সোয়ানসি সিটি থেকে ১৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছেন ওয়েলশ উইঙ্গার ড্যানিয়েল জেমস।

ব্যস, এটুকুই। দল ছেড়ে গিয়েছেন বেলজিয়ামের স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু, ইকুয়েডরের রাইটব্যাক আন্তোনিও ভ্যালেন্সিয়া, স্প্যানিশ মিডফিল্ডার অ্যান্ডার হেরেরা।

এই দলবদলে ইউনাইটেডের সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল নিজেদের রক্ষণভাগকে ঠিক করা। সে লক্ষ্যে তারা মোটামুটি সফল। গত কয়েক বছর ধরে রাইটব্যাক হিসেবে মাত্তেও দারমিয়ান, ফিল জোনস, আন্তোনিও ভ্যালেন্সিয়া ও অ্যাশলি ইয়ংকে বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলিয়ে সাফল্যের মুখ না দেখা ইউনাইটেড এবার এই জায়গায় খেলানোর জন্য নিয়ে এসেছে ওয়ান-বিসাকাকে। গত মৌসুমে লিগের অন্যতম সেরা রাইটব্যাক ছিলেন এই তারকা। গত মৌসুমের ফর্ম তিনি যদি ইউনাইটেডের জার্সি গায়েও ধরে রাখতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, অন্তত এক দশকের জন্য রাইটব্যাক সমস্যার সমাধান পেয়ে গিয়েছে ইউনাইটেড। ওয়ান-বিসাকার পাশাপাশি এবার ইউনাইটেডে রাইটব্যাক হিসেবে আছেন পর্তুগিজ তরুণ দিওগো দালোত। গত মৌসুমে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখানো দালোত, ওয়ান-বিসাকার সঙ্গে ইউনাইটেডের রাইটব্যাক-সমস্যার সমাধান করবে, প্রত্যাশা এটাই।

রাইটব্যাকের মতো সমস্যা ছিল সেন্টারব্যাক জায়গাটা নিয়েও। গত কয়েক বছর ধরে এই পজিশনে ঘুরেফিরে খেলছেন ক্রিস স্মলিং, ফিল জোনস, মার্কোস রোহো, এরিক বাইয়ি, ভিক্টর লিন্ডেলফ প্রমুখ। প্রথম দুজন বছরের পর বছর ধরে খেলে গেলেও নিজেদের জায়গা পাকা করতে পারেননি, পরের জন নিজেও হয়তো জানেন না যে তিনি আসলে লেফটব্যাক না সেন্টারব্যাক! বাকি দুজনের মধ্যে এরিক বাইয়ি চোটে পরে নিজের প্রতিভার বিকাশ করতে পারছেন না। বাকি থাকেন লিন্ডেলফ। যোগ্য সঙ্গীর অভাবে এই সুইডিশ তারকা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ীও খেলতে পারছেন না। তাই লিন্ডেলফের সঙ্গী করার জন্যই বিশ্বের সবচেয়ে দামি ডিফেন্ডার বানিয়ে লেস্টার সিটি থেকে ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে এসেছেন হ্যারি ম্যাগুয়ার। লিন্ডেলফ-ম্যাগুয়ার জুটি ইউনাইটেডের রক্ষণভাগের সমস্যা মেটাতে পারেন কি না, মৌসুম শেষে বলা যাবে সেটা।

ক্লাব ছেড়েছেন লুকাকু, আনা হয়নি তাঁর যোগ্য বিকল্প। ছবি : এএফপি

লেফটব্যাক হিসেবে গত মৌসুমে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন ইংলিশ লেফটব্যাক লুক শ। বিভিন্ন চোট, ফর্মহীনতা, হোসে মরিনহোর সঙ্গে বিবাদ - সব মিলিয়ে সেই ১৮ বছর বয়সে সাউদাম্পটন থেকে ইউনাইটেডে আসলেও নিজেকে ঠিক মেলে ধরতে পারেননি। এই ঝামেলা গুলো মিটেছে সুলশার আসার পর। নতুন মৌসুমে ইউনাইটেডের মূল লেফটব্যাক হওয়ার জন্য লড়বেন এই লুক শ ও দলের অধিনায়ক অ্যাশলি ইয়ং। মাত্তেও দারমিয়ানকেও চাইলে লেফটব্যাকে খেলাতে পারবেন সুলশার।

আর রক্ষণভাগের পেছনে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে রয়েছেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক ডেভিড ডা হেয়া। দলবদলের শুরুতে তার সঙ্গে চুক্তি নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও শেষমেশ ডা হেয়ার দাবি অনুসারেই তাকে নতুন চুক্তি দিয়েছে ইউনাইটেড। গত কয়েক বছর ধরেই দলের সেরা খেলোয়াড়কে ধরে রাখতে পেরে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন সমর্থকেরা। ডা হেয়ার বিকল্প গোলরক্ষক হিসেবে দলে আছেন আর্জেন্টিনার সার্জিও রোমেরো ও ইংল্যান্ডের লি গ্রান্ট।

ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে বর্ষীয়ান নেমানিয়া মাতিচের সঙ্গে এবার আছেন স্কট ম্যাকটমিনে। চেলসি থেকে ইউনাইটেডে দুই বছর আগে আসার পর প্রথম প্রথম দুর্দান্ত খেললেও পরে নিজের ফর্ম আর ফেরত পাননি মাতিচ। তাঁর জায়গায় ম্যাকটমিনে মাঝে মাঝে সুযোগ পেলেও দীর্ঘ মেয়াদে আদৌ তাঁর ওপর ভরসা রাখা হবে কি না, সুলশার সেটা নিশ্চিত করেননি। ফলে দলে আরেক জন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের দরকার ছিল, যে সমস্যার সমাধান করা হয়নি। মৌসুমের পরবর্তী পর্যায়ে এ নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে ইউনাইটেড।

অপেক্ষাকৃত আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে মূল একাদশে ফরাসি মিডফিল্ডার পল পগবার জায়গা নিশ্চিত। রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস বা বার্সেলোনার সঙ্গে পগবাকে জড়িয়ে হাজার গুঞ্জন রটলেও শেষ পর্যন্ত ইউনাইটেডেই থেকে যাচ্ছেন পগবা, বলা যায়। আবার স্পেন, ইতালিতে দলবদলের সময়সীমা যেহেতু এখনো শেষ হয়নি, সেহেতু আর কিছুদিন পর পগবা যে রিয়াল বা জুভেন্টাসে পাড়ি জমাবেন না, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। আর সেটা যদি হয়, তাহলে অকূলপাথারে পড়বে ইউনাইটেড। এ ধরনের সমস্যা যাতে না হয়, এ জন্য টটেনহামের ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের দিকে হাত বাড়িয়েছিল ইউনাইটেড, লাভ হয়নি। অপেক্ষাকৃত আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলানোর জন্য ইউনাইটেডে আরও আছেন ব্রাজিল তারকা ফ্রেড। তবে গত মৌসুমে দলে আসা এই তারকা নিজেকে এখনো মেলে ধরতে পারেননি। অ্যানহেল গোমেজ বা আন্দ্রেয়া পেরেইরার মতো তরুণ মিডফিল্ডারদের ওপর তাই এ মৌসুমে সুলশার অনেক ভরসা রাখবেন।

আক্রমণভাগে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলার জন্য দলে আছেন মার্কাস রাশফোর্ড ও একাডেমির তরুণ তারকা ম্যাসন গ্রিনউড। রোমেলু লুকাকুকে দলবদলের শেষ দিনে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে ইন্টার মিলানের কাছে। ফলে ইউনাইটেডের মূল স্ট্রাইকার হিসেবে বর্তমানে কোনো বৈশ্বিক তারকা নেই। রাশফোর্ডের ওপর যেমন প্রত্যাশা করা হয়েছিল, গত দুই বছরে তাঁর ছিটেফোঁটাও মেটাতে পেরেছেন কি না, সন্দেহ। তাই তাঁর ওপরে মূল স্ট্রাইকার হওয়ার বিশাল দায়িত্ব দেওয়াটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, মৌসুম শেষে সেটা বোঝা যাবে। ১৭ বছর বয়সী ম্যাসন গ্রিনউডের ওপরেও অনেক দায়িত্ব এবার। পেশাদার ফুটবলের সর্বোচ্চ লিগে নিজের প্রথম সম্পূর্ণ মৌসুমে গ্রিনউডকে দিয়ে কতটুকু কাজ করাতে পারেন সুলশার, সেটাও দেখার বিষয়। উইঙ্গার হিসেবে দলে আছেন বর্ষীয়ান স্প্যানিশ তারকা হুয়ান মাতা, চিলির তারকা অ্যালেক্সিস সানচেজ, ইংল্যান্ডের হেসে লিনগার্ড, ফ্রান্সের অ্যান্থনি মার্সিয়াল ও হল্যান্ডের তাহিত চং। নতুন আনা হয়েছে ওয়েলশ উইঙ্গার ড্যানিয়েল জেমসকে।

ইউনাইটেডের নতুন স্কোয়াড। ছবি : সংগৃহীত

ইউনাইটেডের কোনো রাইট উইঙ্গার নেই, এই সমস্যা আজকের নতুন নয়। বড় আশা করে বছর দেড়েক আগে আর্সেনাল থেকে আনা হয়েছিল অ্যালেক্সিস সানচেজকে। কিন্তু ক্লাব বদল করার সঙ্গে সঙ্গে সানচেজের ফর্মের যেমন অধঃপতন হয়েছে, তাঁর সঙ্গে তুলনা চলে শুধু ফার্নান্দো তোরেসের। লিভারপুল থেকে চেলসিতে যাওয়ার পর তোরেস যেমন গোল করা ভুলে গিয়েছিলেন, সানচেজেরও হয়েছে ঠিক তাই। সুলশারও তাঁর ওপর আর ভরসা করেন না। ওদিকে হুয়ান মাতা এককালে দুর্দান্ত খেললেও এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। হেসে লিনগার্ডকে কোনোভাবেই ইউনাইটেডের মূল একাদশের খেলোয়াড় বলা যায় না। ফলে এবার আনা হয়েছে ড্যানিয়েল জেমসকে। যদিও জেমস মূলত একজন লেফট উইঙ্গার। উইঙ্গার হিসেবে জেমসের কার্যকারিতা ও গতিশীলতা দিয়ে এর মধ্যেই মুগ্ধ হয়েছেন সুলশার। বাকিটা দেখা যাবে মাঠে। অ্যান্থনি মার্সিয়ালের অবস্থাও লিনগার্ড বা রাশফোর্ডের মতোই। পাহাড়সম চাপে ভেঙে পড়েছেন তিনি, প্রতিভার সুবিচার করতে পেরেছেন সামান্যই। স্ট্রাইকে গ্রিনউডের মতো উইংয়ে তরুণ তারকা তাহিত চংয়ের ওপরেও এবার তাই বেশ ভরসা রাখবেন সুলশার।

সব মিলিয়ে দলবদলের পর নতুন মৌসুমে ইউনাইটেডকে দেখা যেতে পারে অনেকটা এই রূপে -

আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। এই দল দিয়ে ইউনাইটেড কিছু জিততে পারবে তো?