Thank you for trying Sticky AMP!!

ধর্ষণের সংবাদে রোনালদোর মামলার হুমকি, ভয় পাচ্ছেন না সাংবাদিক

ভয়ংকর ঝামেলায় ফেঁসেছেন রোনালদো। ছবি: রয়টার্স

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিপক্ষে ২০০৯ সালে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এক নারী। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডার স্পেইগেল ২০১৭ সালে সেটা ছেপেছিল। কিন্তু সেই নারীর কাছ থেকে অনুমতি না মেলায় গত বছর এ নিয়ে বেশি দূর এগোয়নি এ পত্রিকা। কিন্তু হ্যাশট্যাগ মিটু আন্দোলনের পর নিজের পরিচয় প্রকাশের সাহস পেয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। এরপরই আবার ফলাও করে রোনালদোর ব্যাপারে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে ডার স্পেইগেল। রোনালদোর আইনজীবী প্রতিবেদনটি ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করে সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলার কথা জানিয়েছিলেন।

এ নিয়ে রোনালদো কথাও বলেছেন। ইনস্টাগ্রামে ভক্তদের সঙ্গে গতকাল লাইভ ভিডিওতে আলাপচারিতায় রোনালদো বলেছেন, ‘ওরা যা বলেছে, মিথ্যা, মিথ্যা খবর। ওরা আমার নাম বলে মিথ্যা হতে চায়। এটা আমার পেশার অংশ হয়ে গেছে। আমি একজন সুখী মানুষ এবং সব ঠিক আছে।’ রোনালদোকে এতটা আত্মবিশ্বাসী শোনার পর ডার স্পেইগেলের ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। কারণ, তারকাদের বিপক্ষে যৌন হয়রানির মামলা করে বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টার ঘটনা কিন্তু কম নয়।

কিন্তু ডার স্পেইগেল নিজেদের প্রতিবেদকের ওপর আস্থা রাখছে। নিজেদের নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ সাংবাদিকতার ওপর বিশ্বাস রাখছে তারা। সম্পূর্ণ প্রমাণাদি নিয়ে টুইটারে হাজির হয়েছে তারা। পত্রিকার ক্রীড়া সম্পাদক ক্রিস্টফ উইন্টারবাখ টুইটারে টানা ২৫টি পোস্ট করেছেন। টানা পোস্টে ধারাবাহিকভাবে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন ২০০৯ সালে কী ঘটেছিল, সে সময়ে পুলিশ ও আইনজীবীদের কী ভূমিকা ছিল এবং বর্তমানে কোনো নতুন তথ্য–উপাত্ত পাওয়ায় তারা নতুন করে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে—সবকিছুই বলার চেষ্টা করা হয়েছে। ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পেরে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও এ নিয়ে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে।

ডার স্পেইগেল প্রথমে যে সংবাদ দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল, সেটা হচ্ছে ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি কাটাচ্ছিলেন রোনালদো। এ সময় নাভাডার লাস ভেগাসে এক নারীকে ধর্ষণ করেন এবং সেটা গোপন রাখতে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ডলারে সমঝোতা করেন। ক্যাথরিন মায়োরগা দাবি করেছেন, নয় বছর আগে ঘটা এই ঘটনায় এখনো অসুস্থ বোধ করেন এবং ওই সময় তাঁকে আপস করার ব্যাপারে চাপ দেওয়া হয়েছিল। তখন এ ধরনের ঘটনায় অনভিজ্ঞ এক আইনজীবী থাকায় সে আপস করতে রাজি হয়। তবে এ বছর একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীকে সঙ্গী পেয়ে নতুন করে মামলা করেছেন তিনি।

ডার স্পেইগেলে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে ১২ জুন এক নৈশ ক্লাবে দেখা হওয়ার পর পরদিন পামস ক্যাসিনো রিসোর্টে এক পার্টিতে মায়োরগাকে বান্ধবীসহ ডেকে আনেন রোনালদো। সেখানেই মায়োরগাকে যৌন হয়রানি ও একপর্যায়ে ধর্ষণ করেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। ধর্ষণের পর তাঁকে যেতে দেন রোনালদো। এমনকি এটাও নাকি বলেন, তিনি দুঃখিত, সাধারণত তিনি ভদ্রলোক। মায়োরগার দাবি, পরদিনই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর আইনজীবী ও রোনালদোর আইনি দলকে নাকি জানানো হয়েছিল, তারা সমঝোতা করলে পুলিশ আপত্তি করবে না। ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়া ও রোনালদো–ভক্তদের কাছ থেকে হয়রানির কথা ভেবে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ মেনে নেন মায়োরাগা ও তাঁর আইনজীবী। সে সঙ্গে এ তথ্য কখনো প্রকাশ করা যাবে না, এ স্বীকারোক্তি আদায় করা হয় বাদীর কাছ থেকে।

মায়োরগা পরে ডার স্পেইগেলকে বলেছেন, তখন এতটাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন যে এ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে নিজের মানসিক অবস্থা আর খারাপ করতে চাননি। রোনালদোর মতো তারকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই মিডিয়ার আগ্রহ, সন্দেহ ও আক্রমণের শিকার হলে বারবার তাঁকে সেই ভয়াবহ ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হতো। গত বছর যৌন হয়রানি নিয়ে হ্যাশটাগ মি টু আন্দোলনের পরই এ নিয়ে কথা বলার সাহস ফিরে পেয়েছেন। আর তাঁর আইনজীবীরাও মক্কেলের মানসিক অবস্থার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তথ্য গোপনের সেই চুক্তিকে বাতিল বলে দাবি করছেন। এ ঘটনার পর আত্মহত্যার চিন্তাও নাকি এসেছিল তাঁর মাথায়।

ডার স্পেইগেল এ ব্যাপারে রোনালদোর সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো ফল পায়নি। রোনালদোর আইনজীবীও প্রথমে এটা মিথ্যা খবর, কল্পকাহিনি বলে উড়িয়ে দিলেও এখন ‘খুবই ব্যক্তিগত ঘটনা’ বলছেন। স্পেইগেলও ফুটবল লিকসের মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন ডকুমেন্টের ছবি ছাপিয়ে দেখিয়েছেন, সমঝোতার কাগজে রোনালদোর স্বাক্ষর রয়েছে!