Thank you for trying Sticky AMP!!

ফুটবল ছাপিয়ে ফুটবলের লড়াই

রক্তলাল নিশান আর অটল-অবিচল নীলের ডোরা—ওঁরা ১১ জন। ওপাশের ওঁরা এগারোর সাদা নিশান কি তবে শান্তির পায়রা? মোটেও না! দুই দলের জার্সির ধরন-ধারণেই এত পার্থক্য, সেটাই যেন বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের ভিন্নতার প্রতীক। প্রায় সাড়ে ছয় শ কিলোমিটার দূরত্বের দুই শহরের দর্শনের ব্যবধান অযুত-নিযুত ক্রোশের—তা সে ফুটবলীয় দর্শনই হোক কিংবা রাজনীতি।

ফুটবলের আর সব দ্বৈরথের সঙ্গে তাই এল ক্লাসিকোকে মেলালে চলবে না। পৃথিবীর আর সব ‘ডার্বি’ প্রধানত শহরকেন্দ্রিক। ম্যানচেস্টার, লিভারপুল কিংবা মিলান—একই শহরের দুই ক্লাব যখন হয়ে ওঠে ‘চিরশত্রু’। সত্যি বলতে কী, রিয়াল-বার্সাকে বোঝাতে চিরশত্রু শব্দটায় ঊর্ধ্বকমা ব্যবহার না করলেও হয়—এই শত্রুতা যে আক্ষরিক অর্থেই!
স্পেনের এই লড়াই দেশটির মূল দুটি ভিন্ন শহরের, যাদের মধ্যে আসলে কিছুতেই মেলে না। একদিকে বামঘেঁষা স্বাধীনচেতা কাতালানরা। অন্যদিকে বিংশ শতাব্দীতে পুরো ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের একনায়ক ফ্রাঙ্কো ও রাজন্যবর্গের দল রিয়াল, যে দলটার সাবেক নাম মাদ্রিদ এফসি। ফ্রাঙ্কো এসে তাতে যুক্ত করলেন রয়্যাল শব্দটি, যেটির মানেই রাজকীয়তা। তাদের খেলাতেও সেই আভিজাত্য। একই আভিজাত্যে ইউরোপ শাসনও। রিয়ালই একমাত্র ক্লাব, ইউরোপিয়ান কাপ জয়ের সংখ্যা যাদের দুই অঙ্ক ছুঁয়েছে। রাজাদের অহংকার তো তাদেরই মানায়।
কিন্তু রাজাদের যদি আভিজাত্য থেকে থাকে তো প্রান্তিক মানুষেরও থাকে নিজের রক্ত অকাতরে বিলিয়ে দেওয়ার সাহস। স্বাধীন-আকাঙ্ক্ষা। কে জানত, ভিনদেশি এক সুইস নাগরিকের হাতে গড়া একটি ক্লাব হয়ে উঠবে কাতালুনিয়ার সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। কে জানত, অস্ত্র নয়; স্বাধীনতার এই লড়াইয়ের অন্যতম প্রেরণাকেন্দ্র হয়ে উঠবে মাঠের ফুটবল!
ফ্রাঙ্কোর ৩৯ বছরের দীর্ঘ শাসনে এক ন্যু ক্যাম্পে এসে প্রকাশ্যে স্লোগান দিতে পারত সবাই। যেখানে জেনারেলের উর্দি বাহিনীও ঢোকার সাহস করেনি। আবার ফ্রাঙ্কোও তাঁর রাজত্ব যেমন ধরে রেখেছিলেন এই চ্যালেঞ্জের মুখে, রিয়াল মাঠেও হারায়নি তার আভিজাত্য।
না মিলবে না এবং না মেলাই ভালো। ঠিক যেন জিগস পাজল। এক টুকরোর সঙ্গে আরেকটার মিল নেই। তবু কেমন মিলে যায় খাপে খাপে। আর পুরোটা একসঙ্গে মেলে বলেই হয়ে ওঠে দারুণ এক ছবি। রিয়াল-বার্সা এভাবেই নিজেদের সব ভিন্নতা দিয়েই মিলিয়ে দেয় যে ছবিটা, সেটা ক্লাসিক ফুটবলের। এ কারণে পৃথিবীতে আরও অনেক ডার্বি, আরও অনেক ‘ক্লাসিক’ নামের দ্বৈরথ থাকলেও দ্য ক্লাসিক বা এল ক্লাসিকো শুধু একটাই!

আরও পড়ুন: