Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশের প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিকের গল্প

>স্বাধীনতার পর ঢাকার প্রথম বিভাগ ফুটবলে প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিক করেন মেজর হাফিজ
খেলোয়াড়ি জীবনে (মেজর অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতার ঠিক পররে কথা। ঢাকার প্রথম বিভাগ ফুটবলে ফায়ার সার্ভিসের হয়ে খেলতেন ডিফেন্ডার দুলাল। আজ এই মানুষটি কোথায় আছেন জানা নেই। কোথাও তাঁর নামও উচ্চারিত হয় না। তবে একজন নামটি ভোলেননি। ক্রীড়াঙ্গনের পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনীতিতেও অতি পরিচিত নাম-মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে ১৯৬৬-১৯৭০ সাল পর্যন্ত খেলা হাফিজ রাজনীতিতে যোগ দিয়ে একাধিকবার সাংসদ, মন্ত্রী হয়েছেন। তবু ষাট-সত্তর দশকের নামী ফুটবলার হিসেবে তাঁর যে পরিচিতি, সেটি এখনও অম্লান।
তা দুলাল নামটি কেন ভোলেননি হাফিজ? কারণ, স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকার প্রথম বিভাগ ফুটবলে প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিকটির সঙ্গে যে জড়িয়ে আছে দুলালের নাম! ১৯৭৩ সালের এক বিকেল। মোহামেডান-ফায়ার সার্ভিস ম্যাচ চলাকালে দুলাল একটি অনুরোধ করেন মোহামেডান স্ট্রাইকার মেজর হাফিজকে, 'ভাই আর গোল কইরেন না। ৩ গোল তো হয়ে গেছে!'

কিন্তু মেজর হাফিজ কী আর থামেন! সেদিন ঢাকা স্টেডিয়ামে ঢোকার পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচিত সব খেলোয়াড় হাফিজকে অনুরোধ করেন, 'হাফিজ ভাই, বেশি গোল দিয়েন না আজকে।' এই ফায়ার সার্ভস দল দিয়েই ১৯৬২ সালে ঢাকার ফুটবলে অভিষেক তরুণ হাফিজের। দলটিতে খেলেন ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত। ১৯৬৮ সালে মোহামেডানে আসার আগে ওয়ান্ডারার্সে কাটান ২ বছর। তারপর টানা ১৯৭৮ পর্যন্ত সাদাকালোয় কাটিয়ে তুলে রাখেন বুট জোড়া।

দুলালের অনুরোধ সেদিন রাখতে পারেনি হাফিজ। ফায়ারের জালে এক-দুটি নয়, ছয়-ছয়টি গোল দিলেন। সেটি ছিল স্বাধীনতার পর ঢাকা লিগে প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিক। ৪৫ বছর পেছন ফিরে এই প্রতিবেদককে মেজর হাফিজ বলেন, 'আমি সেদিন মাঠে নামার পর হেলাফেলা করেই দুটি গোল করে ফেললাম। ভাবলাম, এবার তো হ্যাটট্রিক করা যায়। সেই হ্যাটট্রিকও হয়ে গেল। ফায়ার সার্ভিসের ফুলব্যাক দুলাল ওই সময় আমাকে বলেছিল, হাফিজ ভাই, হ্যাটট্রিক হয়ে গেছে, আর কি চান? প্লিজ, আমাদের বক্সের আশপাশে আর আইসেন না। ওর মুখে এটা শুনে ঠিক করলাম ঠিক আছে, আর গোলটোল দেব না। ৩ গোলই যথেষ্ট।'

কিন্তু ছন্দে থাকা হাফিজকে আটকানো যায়নি ওই বিকেলে। গোল হতেই থাকল। হাফিজ পেছনে তাকান, 'আমরা আক্রমণের তোড়ে ভাসিয়ে দিচ্ছি ফায়ারকে। রাইট আউটে একটা বল এল, সেই বল না থামিয়েই পা চালিয়ে দিলাম। চতুর্থ গোলটা এসে গেল।'

ফায়ার সার্ভিসের খেলোয়াড়েরা ক্লান্ত হয়ে এর-ওর মুখ চাওয়া-চাউয়ি করছেন। দুলাল এবার হাফিজকে বলেন, 'ভাই এটা কী করলেন! আরেকটা গোল করে দিলেন!' হাফিজ বলেছিলেন, 'দেখ, আমি কিন্তু গোল হওয়ার জন্য মারিনি। কিন্তু হয়ে গেছে। কী করার আছে!' এরপরও গোল বৃষ্টি চলল। ভালো দুটি পাস পেয়ে দুটিতেই গোল করেন হাফিজ। নামের পাশে ৬ গোলের গৌরবদ নিয়ে মাঠ ছাড়েন । এমন দিন অনেক স্ট্রাইকারের জীবনে হয়তো আসেই না। হাফিজের জীবনে এসেছিল।

তাঁর সময়ে মোহামেডান লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৬৯, ১৯৭৫, ১৯৭৬ ও ১৯৭৮ সালে। ১৯৬৮ সালে জেতে আগা খান গোল্ডকাপ। ঘরোয়া ফুটবলে ১০টি আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ খেলে ৭ গোল করেন মেজর হাফিজ। ১৯৭৬ সালে ছিলেন সাদাকালোর অধিনায়ক। এত এত স্মৃতির ভিড়ে ফায়ার সার্ভিসের ডিফেন্ডার দুলালের কথাটা তাঁর একটু বেশিই মনে আছে।

মেজর হাফিজের ডাবল হ্যাটট্রিকের কদিন পরই ঢাকার মাঠ দেখল আরেকটি ডবল হ্যাটট্রিক। দিলকুশার বিপক্ষে আবাহনীর ১০-০ জয়ে প্রথম ৭ গোলই ছিল কাজী সালাউদ্দিনের। বাকি তিন গোল নরসিংদীর আবদুল গফুর, যাঁকে 'স্কুটার গফুর' বলা হতো। তখনকার সময়ে ঢাকার খোলা রাস্তায় স্কুটার ছুটত বাধাহীনভাবে। গফুরও এভাবে বল নিয়ে ছুটতেন বলে তাঁর ওই নাম। আবাহনীর বাকি দুটি গোল প্রয়াত অমলেশ সেন ও অধিনায়ক গোলাম সারোয়ার টিপুর।

সালাউদ্দিন তখন তুখোড় ফর্মে। বল পেয়ে অল্প জায়গা থেকে গোল করতে পারঙ্গম। সেদিন লিগে দিলকুশার সঙ্গে ম্যাচের শুরু থেকেই তাঁর খুনে মেজাজ। কখনো একক নৈপুণ্যে, কখনো সতীর্থদের সহায়তায় গোল করছেন। ৬৪ মিনিটে একাই বক্সে ঢুকে ডাবল হ্যাটটট্রিকটি পূর্ণ করেন। শেষ দিকে পেনাল্টিতে সপ্তম গোল। এত বছর পর স্মৃতির ধুলো ঝেড়ে সালাউদ্দিন বলছিলেন, 'তখন এত সুপার ফিট ছিলাম যে গোল করা কঠিন কিছু ছিল না। দিলকুশাকে সেদিন আমরা ছিঁড়ে খুড়ে খেয়েছি। এই আনন্দ কখনো ভোলার নয়।'

ডাবল হ্যাটট্রিক এরপর আরও অনেকই হয়েছে। কিন্তু হাফিজের প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিক আর সালাউদ্দিনের ৭ গোল বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসেরই অংশ হয়ে আছে আজও।