Thank you for trying Sticky AMP!!

আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে শেখ জামালের ওমর জোবে।

‘বাংলাদেশের ফুটবলে ৩৯ বছরের রেকর্ড ভাঙতে চাই’

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে সময়ের আলোচিত নাম পা ওমর জোবে। গাম্বিয়ান এই স্ট্রাইকার এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচে ১০ গোল করে গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে আছেন।

এখানেই না থেমে লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে চান। ভাঙতে চান ৩৯ বছর আগে গড়া সালাম মুর্শেদীর এক লিগে সর্বোচ্চ ২৭ গোলের রেকর্ড।

লিগে নিজের লক্ষ্য এবং আরও অনেক বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর মুখোমুখি গত ডিসেম্বরে ২২ বছরে পা দেওয়া এই স্ট্রাইকার—

প্রশ্ন: ৮ ম্যাচে ১০ গোল করেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। লিগে কত দূর যাওয়ার লক্ষ্য?

ওমর জোবে: বাংলাদেশ লিগে ৩০টি গোল করতে চাই। আরও ১৫টি ম্যাচ বাকি আছে। এক ম্যাচে তিন-চারটি গোলও আপনি করে ফেলতে পারেন। আরামবাগের বিপক্ষ শেখ জামালের ৬-০ গোলের জয়ে আমার ৪ গোল। এমন গোল আরও আসতে পারে। কাজেই আমি আশাবাদী যে লক্ষ্য পূরণ করতে পারব। সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলেছি।

প্রশ্ন: ৩০ গোল করতে পারলে তো একটা রেকর্ড হয়ে যাবে। ১৯৮২ সালে তৎকালীন ঢাকা লিগে সর্বোচ্চ ২৭ গোলের রেকর্ড গড়েন বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী। ২০১২-১৩ পেশাদার লিগে আপনার দল শেখ জামালের নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ওয়েডসন আনসালমে ২৬ গোল করেছিলেন। এবার আপনি পারবেন সালামের সেই ২৭ গোলের রেকর্ড ভাঙতে?

ওমর জোবে: নিশ্চয়ই ৩৯ বছর আগের রেকর্ড আমি ভাঙতে চাই। সেটা খুব যে কঠিন, তা নয়। আমার দরকার আর ১৮টি গোল। অসম্ভব কিছু নয়। আমাদের দল শেখ জামাল শিরোপা জয়ের জন্যই খেলছে। সেই জয়ের মিশনে আমি দলকে যতটা সম্ভব এগিয়ে নিতে চাই। গোল করে দলের জয় অবদান রাখতে চাই।

লিগে এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচে ১০ গোল জোবের।

প্রশ্ন: আপনার দল শেখ জামাল চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে—সত্যিই এ বিশ্বাস করেন?

ওমর জোবে: কেন নয়? শেখ জামালের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সামর্থ্য রয়েছে। আমরা পয়েন্ট তালিকায় আবাহনী ও বসুন্ধরার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। ৯ ম্যাচে বসুন্ধরা কিংস ১টি ড্র করেছে। ৯ ম্যাচে আবাহনীর ৩টি ড্র। আমাদের ৮ ম্যাচে ৩ ড্র। ৩টি দলই কাছাকাছি অবস্থানে আছে।

বসুন্ধরা ও আবাহনীর সঙ্গে আমরা প্রথম রাউন্ডে ড্র করেছি। আশা করি, লিগের দ্বিতীয় পর্বে এই দুই দলকে হারিয়ে আমরা চ্যাম্পিয়ন হব। টিম ম্যানেজমেন্টের যদি বিশ্বাস থাকে যে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারব, খেলোয়াড় ও কোচ সবাই মিলে চেষ্টা করলে এবং নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখলে অবশ্যই আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারি।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে আসার আগে অন্য কোন লিগে আপনি সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন?

ওমর জোবে: আমার দেশ গাম্বিয়ায় সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছি। আরও ছোট ছিলাম যখন গাম্বিয়ার দ্বিতীয় বিভাগে সেরা গোলদাতা হই। সেনেগালের শীর্ষ লিগে ২৮ ম্যাচে ২৬ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছি ২০১৯ সালে। তারপর বাংলাদেশে আসি। এসেই শেখ জামালে খেলা শুরু করি। কিন্তু গত বছর তো লিগ শেষ হলো না। বাংলাদেশ লিগে ৬টি ম্যাচ হওয়ার পর মার্চে করোনায় গত লিগটা পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও দিদিয়ের দ্রগবা তাঁর আদর্শ।

প্রশ্ন: আপনি ব্যাকহিলে উত্তর বারিধারার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত একটি গোল করেছেন। দেখে মনে হয়েছে খুব আত্মবিশ্বাসী যে এভাবে গোল হতে পারে এবং আপনি সেটি করে দেখিয়েছেন। এমন গোল ঢাকার মাঠে কখনো দেখা যায়নি...

ওমর জোবে: আমি চেষ্টা করি, যেখানেই বল পাই পোস্টে মারতে। পেনাল্টি স্পটের আরেকটু সামনে থেকে ব্যাকহিলে আমি আগে গোল করিনি। তবে এ–জাতীয় গোল আগে করেছি। আমার চেষ্টা থাকে বড় বড় ফুটবলারের ভিডিও ফুটেজ দেখা, যাঁরা এ ধরনের গোল করে থাকেন। যেমন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর এমন একটি গোল আছে স্প্যানিশ লিগে। জোসে মরিনিওর আমলে মালাগার বিপক্ষে ব্যাকহিলে দুর্দান্ত ওই গোল করেছিলেন তিনি। গোলটি দেখে আমি বেশ উজ্জীবিত হই এবং নিজেও ভাবি যে আমিও এমন গোল করতে পারি। এ ধরনের গোল আমি প্র্যাকটিস করি।

প্রশ্ন: যেভাবে গোল করছেন, তাতে খুশি?

ওমর জোবে: পুরোপুরি খুশি নই। আরও ভালো করতে পারি এবং সে সামর্থ্য আমার রয়েছে। এখনো আমি গোল নষ্ট করছি। না হলে আমার গোল আরও বেশি থাকত। দু-তিনটি গোল রেফারি দেননি। তবে এসব খেলারই অংশ। ফুটবলে অনেক সময়ে সহজ সুযোগ নষ্ট হতে পারে। এ জন্য মাঠে আরও কঠোর অনুশীলন করতে হবে। আমি সেটা করছিও।

প্রশ্ন: এবার বাংলাদেশ লিগে সেরা গোলদাতার লড়াইয়ে কাকে প্রতিপক্ষ মনে করেন?

ওমর জোবে: বেশ কয়েকজন ভালো ভালো স্ট্রাইকার রয়েছে। আমাদের দলে আমারই স্বদেশি সোলেমান সিল্লাহ ভালো স্ট্রাইকার। কিন্তু সিল্লাহ খুব বেশি গোল পাননি। বসুন্ধরা কিংসের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার রাউল (৯ গোল) আছে, একই দলের রবসন (৭ গোল), আবাহনীর রাফায়েল (৭ গোল) ভালো করছেন। তবে এই খেলোয়াড়েরা ত্রিশোর্ধ্ব। আমি বা সিল্লাহর বয়স ২২। আমরা আরও ভালো করতে পারব। আমার উচ্চতা ৬ ফুট ১ ইঞ্চি। এটাও আমার ভালো কাজে আসে। অন্যদের উচ্চতাও অবশ্য ভালো।

প্রতিপক্ষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছেন জোবে।

প্রশ্ন: শেখ জামালে আপনি, সলোমন কিং ও সিল্লাহ—তিনজনই গাম্বিয়ান। এ দেশে কেমন কাটছে আপনাদের দিনকাল?

ওমর জোবে: ভালোই কাটছে। এখানে আমরা একই ফ্ল্যাটে থাকি। দেশে আমাদের তিনজনেরই বাড়ি কাছাকাছি। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের রাস্তা। সোলেমান ও আমি এর আগে একই দলে খেলেছি। আমরা একে অন্যকে আগে থেকেই চিনি। একই ভাষায় কথা বলি। মাঠে এর ইতিবাচক প্রভাব থাকে।

প্রশ্ন: আপনারা তিনজনই গাম্বিয়ার অনূর্ধ্ব-২৩ দলে খেলেছেন...

ওমর জোবে: আমি আর সিল্লাহ একই সময়ে খেলেছি গাম্বিয়ার অলিম্পিক দলে। আমাদের আগে গাম্বিয়ার অনূর্ধ্ব-২৩ দলে খেলেছে সলোমন। আমি গাম্বিয়ার জাতীয় দলেও একটি ম্যাচ খেলেছি। আরেকটি ম্যাচে ডাক পেয়েও চোটের কারণে খেলতে পারিনি। সেটি ছিল ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে আফ্রিকানস কাপের বাছাইয়ে।

প্রশ্ন: গাম্বিয়ার ফুটবল আর বাংলাদেশের ফুটবলে কী পার্থক্য দেখেছেন?

ওমর জোবে: গাম্বিয়ার খেলোয়াড়েরা অনেক বেশি টেকনিক্যাল এবং স্কিলে ভালো। বাংলাদেশেও ভালো খেলোয়াড় আছে। আমাদের দেশে অপেশাদার লিগ। বাংলাদেশে পেশাদার লিগ হচ্ছে এবং এখানে খুব ভালো কয়েকটি দল আছে। বসুন্ধরা, আবাহনী, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সাইফ, চট্টগ্রাম আবাহনী...সবাই ভালো। কাজেই এখানে খেলা ও গোল করা খুব সহজ নয়।

প্রশ্ন: আপনার ফুটবল নায়ক কে?

ওমর জোবে: ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও দিদিয়ের দ্রগবা। তবে আমি বেশি অনুসরণ করি ক্রিস্টিয়ানোকে। গোলের পর তাঁর মতো উদ্‌যাপন করি অনেক সময়। দেশে যেখানেই যাই না কেন, সবাই আমাকে দ্রগবা (আইভরি কোস্টের তারকা দিদিয়ের দ্রগবা) ডাকে। রাস্তায় দেখলে বলে, ‘ওই যে দ্রগবা যায়।’ এটা বলার কারণ, আমি গোল করতে ভালোবাসি। সেনেগালে গিয়ে গাম্বিয়ার কেউ আগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারেনি, তবে আমি হয়েছি।

প্রশ্ন: বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে আপনার একটি গোলের ভিডিও ফুটেজ ফিফা পর্যন্ত গিয়েছে। যদিও ফিফা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তারা বলছে, রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত; যদিও রেফারি আপনার বিপক্ষে ফাউলের বাঁশি বাজান এবং গোল দেননি। সেটি গোল হলে চলতি প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়নরা প্রথম হারত। ওই গোল বাতিল নিয়ে কী বলবেন...

ওমর জোবে: রেফারি আমার বিরুদ্ধ ফাউল দিয়েছেন। কিন্তু কোনোভাবেই আমি ফাউল করিনি; বরং ডিফেন্ডার তপু বর্মণ আমাকে টেনে ধরে চেষ্টা করেছে আটকাতে। যা-ই হোক, রেফারি গোল দেননি। এতে আমরা অবাক হলেও কিছু করার নেই। রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী আপনার?

ওমর জোবে: শুধুই ফুটবল খেলে যাওয়া আর গোল করা। গাম্বিয়ার ফুটবল লিগটা অপেশাদার। তবে আমি সেনেগালের লিগে খেলেছি। মেসিডোনিয়ায় খেলতে গিয়েছিলাম, কিন্তু গাম্বিয়ায় আমার ক্লাব সময়মতো ছাড়পত্র দেয়নি। ফলে, আমার মেসিডোনিয়ায় খেলা হয়নি। সামনে যতটা সম্ভব বড় লিগে খেলতে চাই। আরও আয় করতে চাই। গত বছর বিয়ে করেছি। আমার স্ত্রী গাম্বিয়াতেই থাকেন। দেশে আমার একটি গাড়ি নেই। আশা করছি, নিজের সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।