Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশের 'সেরা' ১০ নম্বর ও 'অপমান'

>ফুটবলে ১০ নম্বর জার্সির কথা উঠলেই ভেসে ওঠে কিছু কিংবদন্তির মুখ। বিশ্ব ফুটবলে পেলে-ম্যারাডোনা থেকে শুরু করে রোনালদিনহো-জিদান হয়ে বর্তমানের লিওনেল মেসি-নেইমারের গায়ে শোভা পায় ১০ নম্বর। বাংলাদেশের জাতীয় দলের ইতিহাসে যাদের গায়ে উঠেছে মর্যাদার এই ১০ নম্বর জার্সি, তাদের কয়েকজনকে নিয়েই নতুন এই ধারাবাহিক ‘বাংলাদেশের ১০ নম্বর’—
আলফাজ আহমেদ। ফাইল ছবি: এএফপি

৪ অক্টোবর, ১৯৯৯...। বলটা জালে জড়াতেই দুই হাত ছড়িয়ে ওড়ার ভঙ্গিতে দৌড় শুরু করেও বেশি দূর যেতে পারলেন না আলফাজ আহমেদ। একে একে তাঁর কাঁধের ওপর লাফিয়ে উঠলেন সতীর্থেরা। কাঠমান্ডুর সেই ছবিটা বাংলাদেশের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার হয়ে হেসেছিল। ২১ বছর আগের সেই দৃশ্য আজও দেশের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে জীবন্ত। জয়সূচক এই গোলেই ইতিহাসে সোনার অক্ষরে নিজের নামটা লিখে নিয়েছেন আলফাজ। আলফাজের ওই গোলেই নেপালকে ১–০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সাফ গেমস ফুটবলের সোনা জেতে । 


স্ট্রাইকার আলফাজকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যও ওই একটি গোলই যথেষ্ট। সেই থেকে টানা ৮ বছর (১৯৯৯-২০০৭) লাল-সবুজের ১০ নম্বর জার্সি ছিল তাঁর গায়ে। সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ১০ নম্বর জার্সিতে সর্বাধিক ম্যাচ খেলা ফুটবলার আলফাজ।

১৯৯৫ সালে কলম্বোয় সার্ক গোল্ডকাপে জাতীয় দলে অভিষেক। ২০০৮ সালে মিয়ানমারে গ্র্যান্ড রয়্যাল চ্যালেঞ্জ কাপে সমাপ্তি। সাবেক এই স্ট্রাইকার আনুমানিক ৭০টি ফিফা স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। গোল ১১টির বেশি। এর মধ্যে ১০টিই ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলা ৫০টির মতো ম্যাচে।

বাংলাদেশের ফুটবলে যাঁদের খেলা দেখতে দর্শক মাঠে যেত, সেই সৌভাগ্যবানদের শেষ প্রজন্মের সদস্য আলফাজ। যে দেশে এখন একজন ভালো মানের স্ট্রাইকারের জন্য মাথা কুটে মরতে হয়, সে দেশেরই ছোটখাটো গড়নের এক স্ট্রাইকারের মাথায় ১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসে উঠেছিল ‘এশিয়ান ফুটবলার অব দ্য মান্থ’–এর মুকুট। ভাবা যায়!


আলফাজ ছিলেন তাঁর সময়ের সেরা স্ট্রাইকার। শক্তি, গতি, ড্রিবলিংয়ে ছিটকে দিতেন প্রতিপক্ষকে। ছিলেন ঠান্ড মাথার ‘ফিনিশার’। দেশের ফুটবল ইতিহাসে এখন পর্যন্ত চারটি আন্তর্জাতিক শিরোপার প্রথম তিনটির (১৯৯৫ মিয়ানমারে চার জাতি টুর্নামেন্ট, ১৯৯৯ সাফ গেমস ও ২০০৩ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ) সঙ্গেই মিশে আছে আলফাজের নাম।

ঘরোয়া ফুটবলে প্রায় বিশ বছরের ক্যারিয়ার। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে রহমতগঞ্জের হয়ে শুরু করে ২০১৩ সালে মোহামেডানের জার্সিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে খেলে বুট জোড়া তুলে রাখেন আলফাজ।

জাহিদ হাসান এমিলি। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় দলে শুরু আলফাজের ১৩ নম্বর জার্সিতে। ঐতিহাসিক মিয়ানমার সফরে গায়ে ছিল ‘৪’। ১৯৯৯ সাফ গেমসে তাঁর হাতে ১০ নম্বর জার্সি তুলে দেন সামির শাকের। ২০০৮ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলার আগে ২০০৭ সালে ভারতে নেহেরু কাপ পর্যন্ত তাঁর গায়েই ছিল এই জার্সি। স্ট্রাইকার হিসেবে খেলা শুরু করার পর থেকেই ১০ নম্বর জার্সির প্রতি ঝোঁক ছিল আলফাজের। তিনি বলছেন, ‘১৯৯৬ সালে মোহামেডানে সাব্বির ভাইয়ের রেখে যাওয়া ১০ নম্বর জার্সিটা আমি পাই। এর পর থেকেই জাতীয় দলের ১০ নম্বর জার্সির প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়। ১৯৯৯ সাফ গেমসে প্রথম পেলাম। স্ট্রাইকার হিসেবে এই জার্সি পরে খেলার আলাদা একটা জোশ আছে।’


১০ নম্বর জার্সি পরে খেলাটা আলফাজের জন্য ছিল স্বপ্ন পূরণের মতো ব্যাপার। তবে এই জার্সি গায়ে বাড়তি একটা চাপও অনুভব করতেন তিনি, '১০ নম্বর খেলোয়াড়ের দিকে সবার চোখ থাকে বেশি। সব সময় মনে হতো দর্শকেরা আশা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।’

২০০৭ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নেহরু কাপের পর ২০০৮ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ও কলম্বো সাফ ফুটবলে জাতীয় দলে জায়গা হয়নি আলফাজের। বছরের শেষ দিকে মিয়ানমারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জ কাপ দিয়ে আবার জাতীয় দলে ফেরা। সেবার ১০ নম্বর জার্সি ফিরে না পাওয়ায় এখনো হতাশা কাজ করে তাঁর মধ্যে, ‘২০০৮ সালে লিগে স্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় থাকায় আমাকে জাতীয় দলে ফেরানো হয়। কিন্তু আমার সঙ্গে আলোচনা না করেই ১০ নম্বর জার্সিটা এমিলিকে দিয়ে দিন কোচ মানিক ভাই। যেহেতু লিগের সেরা গোলের তালিকার উপরের দিকে ছিলাম, জার্সিটা আমি আবার আশা করেছিলাম। মানিক ভাই মোটেও কাজটি ভালো করেননি। আমি এখনো মনে করি আমাকে অপমান করা হয়েছিল।' অবশ্য আলফাজের অনুপস্থিতিতে এর আগেই জাতীয় দলের ১০ নম্বর জার্সিটি নিজের করে নিয়েছিলেন জাহিদ হাসান এমিলি। ২০০৭ সালে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ প্রাক বাছাইয়ে প্রথম ১০ নম্বর জার্সি পান কয়েক বছর আগেই কার্যত সাবেক হয়ে পড়া এই স্ট্রাইকার। প্রিয় খেলোয়াড় আলফাজের হাত থেকে জার্সিটি পাওয়ার স্মৃতি এখনো ভোলেননি তিনি, 'ঢাকায় তাজিকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে আমি প্রথম ১০ নম্বর জার্সি পাই। আমার প্রিয় খেলোয়াড় আলফাজ ভাই এটা আমার হাতে তুলে দেন। ১০ নম্বর জার্সি নিয়ে খেলার গর্ব আমি সবসময় অনুভব করি। এই জার্সির গুরুত্ব আমার কাছে অনেক।’


২০০৫ সালে করাচিতে সাফ ফুটবল দিয়ে অভিষেক হয়ে এমিলি জাতীয় দলের হয়ে খেলেন ২০১৬ সাল পর্যন্ত। শেষ ম্যাচটি ছিল এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে ভুটানের বিপক্ষে। এমিলি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন প্রায় ৬০টি, গোল করেন ১৫টির মতো। ২০টির বেশি ম্যাচে ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলে গোল কমপক্ষে পাঁচটি। মাঝে প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ১০ নম্বর জার্সি ছিল মিডফিল্ডার হেমন্ত ভিনসেন্টের গায়ে।


হেমন্তকে ১০ নম্বও পরতে দেন তখনকার ডাচ্‌ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ। ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে ১০ নম্বর জার্সিতে হেমন্তের অভিষেক। ২-২ গোলে ড্র হওয়া আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে কোনো গোল করেননি হেমন্ত, তবে দুটি গোলের উৎসই সেদিনের ‘নাম্বার টেন’। ২০১৬ সালের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও গ্রুপ পর্বের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গোল করেন হেমন্ত। কিন্তু এরপর থেকে হেমন্ত চোট আর নেতিবাচক কারণেই খবরে আসেন বেশি। ১০ নম্বরের ভার তিনি বইতে পারেননি।

গত বেশ কয়েক বছর ধরেই জাতীয় দলে ১০ নম্বর জার্সি কারও গায়ে টিকছে না। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান কোচ অ্যান্ড্রু ওর্ডের অধীনে একটি মাত্র ম্যাচে ১০ নম্বর পরে খেলেন নাবীব নেওয়াজ। বর্তমান ইংলিশ কোচ জেমি ডে জমানায় শাখাওয়াত হোসেন থেকে শুরু করে নাবীব নেওয়াজ হয়ে সর্বশেষ বর্তমানে তরুণ রবিউল হাসান পেয়েছেন ১০ নম্বর। কিন্তু ১০ নম্বর নিয়েও মাঠের বাইরে বসে থাকেন রবিউল!