শারীরিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন খেলোয়াড়দের জাতীয় দল গঠন করেছে ফিলিস্তিন
শারীরিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন খেলোয়াড়দের জাতীয় দল গঠন করেছে ফিলিস্তিন

‘বিশেষ’ বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলার স্বপ্ন দেখছে ফিলিস্তিন

নিখুঁত শরীর নেই কারও। কেউ ক্রাচে ভর দিয়ে খেলছেন, কেউ আবার কৃত্রিম পা লাগিয়ে লাথি মারছেন বলে। স্বপ্ন তাঁদের বহুদূর—শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশেষ ফুটবল বিশ্বকাপ।

এই স্বপ্ন নিয়েই প্রথমবারের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ফুটবলারদের জাতীয় দল গঠন করেছে ফিলিস্তিন।

গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিন স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছে এই দল। তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি। গাজার পাঁচটি ক্লাব থেকে নানান দুর্ঘটনায় বা যুদ্ধে অঙ্গ হারানো ২০ খেলোয়াড় বাছাই করে জাতীয় দল গঠন করা হয়েছে।

৩৮ বছর বয়সী হাসান আবু করিম তাঁদের একজন। ২০০৬ সালে আল–মাঘহাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় পা হারান তিনি। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে করিম বলেন, ‘পা হারানোর পর থেকে আমার জীবন একই রকম ছিল। কিন্তু আশা হারাইনি, জীবনের লক্ষ্য বিসর্জন দিইনি। ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করাই আমার লক্ষ্য, মাঠে নিজের জন্যও কিছু অর্জন করতে চাই।’

‘বিশেষ’ বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখছে ফিলিস্তিন

শারীরিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন খেলোয়াড়দের নিয়ে ফুটবল দল ২০১৯ সালেই দেখা গেছে ফিলিস্তিনে। সেটি ছিল স্থানীয় দল। রেডক্রসের মুখপাত্র সুহাইর জাকুত জানান, এই জাতীয় দল ফিলিস্তিনের খেলার মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। সুহাইরের ভাষ্য, প্রথমবারের মতো জাতীয় দল গড়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন এই খেলোয়াড়েরা।

আগামী বছর মার্চে ইরানে অনুষ্ঠিত হবে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ফুটবল বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। এখন তারই অনুশীলন করছে ফিলিস্তিন দল। বাছাইপর্ব উতরে যেতে পারলে তুরস্কে আগামী বছর শেষ নাগাদ বিশেষ বিশ্বকাপে অংশ নেবে ফিলিস্তিন।

সেখানকার শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফুয়াদ আবু ঘালিউন জানান, ২০১৯ সালেই শারীরিক প্রতিবন্ধী ফুটবলের আন্তর্জাতিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদ পেতে আবেদন করা হয়। এ বছরের শুরুর দিকে সেই আবেদন অনুমোদন করা হয়।

অনুশীলনে ফিলিস্তিনের খেলোয়াড়েরা

আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে এএফপির প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে দলটির কোচ সাইমন বেকার বলেন, লোকে যেন শুধু ফুটবল খেলাটাই দেখে, খেলোয়াড়ের অক্ষমতা যেন প্রকাশ না পায়—সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার কথা জানালেন তিনি।

বেকার যোগ করেন, ‘আমরা চাই, লোকে খেলোয়াড়দের সম্মান করুক। এসব খেলোয়াড়ের ভেতর থেকে আমরা নায়ক বের করে আনতে চাই।’

ফিলিস্তিনের এই দল গাজা উপত্যকাতেই দিনের পর দিন অনুশীলন করে যাচ্ছে। ২০০৭ সালে গেরিলা সংগঠন হামাস গাজার দখল নেওয়ার পর থেকে সেখানকার প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি ইসরাইলি সৈন্যবেষ্টিত হয়ে জীবনযাপন করছে।

দলটির খেলোয়াড় ৩৪ বছর বয়সী আবু নার জানালেন, ২০১৮ সালে তিনি ইসরাইলি সৈন্যদের দ্বারা আহত হন, ‘সেই চোটের আগে আমি অন্য কেউ ছিলাম। চোটের পর পাল্টে যাই। নতুন এক জীবন শুরু হয়। এরপর থেকেই নিজের লক্ষ্যপূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’