Thank you for trying Sticky AMP!!

বিশ্বকাপে প্রত্যাশার চাপ হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছিল যেবার

সেই আলোচিত জায়ারে দল!
>বিশ্বকাপ ফুটবল খেলে জাতীয় বীর হওয়ার কথা। কিন্তু বিশ্বকাপ খেলে যদি কেউ খলনায়কে পরিণত হন, সেটা কেমন হয় বলুন তো! ১৯৭৪ বিশ্বকাপে আফ্রিকার দেশ জায়ারের (বর্তমানে কঙ্গো) ফুটবলারদের অভিজ্ঞতা ছিল এমনই।

ফুটবল পরাশক্তিরা বিশ্বকাপে যায় ট্রফি জিততে। তাদের কাছে এর বাইরে আর কোনো আবেগ বড় হয়ে দেখা দেয় না। কিন্তু বিশ্বকাপে খেলাই ট্রফি জয়ের আনন্দ নিয়ে ধরা দেয়—এমন দেশের সংখ্যাই কিন্তু বেশি। কিন্তু প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে গিয়েই যদি কোনো নবীন দেশের ফুটবলারদের যদি প্রত্যাশার চাপে পিষে ফেলা হয়, সেটা নিশ্চয়ই অন্যায়। ১৯৭৪ সালে আফ্রিকান দেশ জায়ারের খেলোয়াড়দের এমন অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছিল।

সেই ১৯৩৪ সালে মিসরের পর এই জায়ারই প্রথম আফ্রিকান প্রতিনিধি হয়ে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে। সে দেশে তখন চলছে একনায়ক এমবোতু সেসে সেকোর শাসনামল। ক্রীড়াপ্রেমী এই শাসক ঘোষণা দিয়েছিলেন, জায়ার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারলে খেলোয়াড়দের গাড়ি-বাড়ি দিয়ে পুরস্কৃত করবেন। করেছিলেনও। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রত্যাশা ছিল, বিশ্বকাপে দেশের নাম উজ্জ্বল করবেন জায়ারের খেলোয়াড়েরা।

জায়ারের গ্রুপসঙ্গী ছিল ব্রাজিল, স্কটল্যান্ড ও যুগোশ্লাভিয়া। প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে খুব ভালো খেলে জায়ার হেরেছিল ২-০ গোলে। কিন্তু এমবোতু তাতে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। ভালো ফুটবল খেলে কী লাভ? দল যদি জিততে না পারে—এমনই ছিল এমবোতুর মনোভাব। খেলোয়াড়দের কাছে চলে গেল সরকারি বার্তা—ম্যাচ হারলে চলবে না। ম্যাচ হারলে প্রাপ্য বোনাস দেওয়া হবে না তাঁদের।

এমনটা শুনে ভীষণ খেপে গিয়েছিলেন জায়ারের ফুটবলাররা। বোনাস তো তাদের প্রাপ্য। বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার পর সরকারই সেই বোনাস ঘোষণা করেছিল। এখন সেটা দেওয়া হবে না একটা ম্যাচে হার সঙ্গী হয়েছে বলেই! এ কেমন কথা! যুগোশ্লাভিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচটিতে খেলোয়াড়েরা মন দিয়ে খেললেন না। জায়ার ম্যাচ হারল ৯-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে। এই ফলে একনায়ক এমবোতু রেগে পাগল হয়ে গেলেন। খেলোয়াড়দের কাছে বার্তা গেল, শক্তিশালী ব্রাজিলের বিপক্ষে হারলেও চার গোলের বেশি কোনোমতেই খাওয়া যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না ফুটবলারদের।

এবার রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলেন খেলোয়াড়েরা। ব্রাজিল অনেক শক্তিশালী দল। কিন্তু তারপরও চেষ্টা করলেন ব্রাজিলের সঙ্গে যতটা সম্ভব ভালো খেলার। কিন্তু যতই চেষ্টা করুন না কেন, জায়ারের মতো পুঁচকে দলের পক্ষে কি আর ব্রাজিলকে থামানো সম্ভব? ৬৬ মিনিটের মধ্যে রিভেলিনো আর জেয়ারজিনহোর গোলে ২-০-তে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। এর কিছুক্ষণ পরেই ব্রাজিল ডি বক্সের ঠিক বাইরে একটা ফ্রি কিক পায়। রিভেলিনো আর জেয়ারজিনহোর মধ্যে ফ্রি কিকটি কে নেবেন, সেটা নিয়েই যখন কথাবার্তা চলছে, ঠিক তখনই মানবদেয়াল ভেঙে জায়ারের ডিফেন্ডার এমওয়েপু ইলুঙ্গা রিভেলিনো-জেয়ারজিনহোর সামনে থাকা বলটাকে লাথি মেরে উড়িয়ে দেন!

এই ঘটনায় হাসাহাসি পড়ে যায় ফুটবল দুনিয়ায়। অনেকেই ভাবতে থাকেন—আফ্রিকানরা ফুটবল নিয়ে এতটা অজ্ঞ! কিন্তু আসল ঘটনাটা বেরিয়ে আসে ম্যাচের পর।

জায়ারের খেলোয়াড়েরা গোল খাওয়ার ভয়ে এতটাই সন্ত্রস্ত ছিলেন, আতঙ্কে তারা এমন কাণ্ড করে বসেন। যদি আরেকটা গোল করে বসে ব্রাজিল, সেই ভয়েই ইলুঙ্গা সেই কাণ্ড করেছিলেন! সে ম্যাচে জায়ার অবশ্য হেরেছিল ৩-০ গোলে!

বিশ্বকাপ শেষে জায়ারের খেলোয়াড়েরা দেশে ফিরতে পারলেও তাঁদের রীতিমতো অসম্মানিত করা হয়। জাতীয় ‘খলনায়ক’ ঘোষণা করা হয় খেলোয়াড়দের। একনায়ক এমবোতুও ফুটবলের প্রতি সব আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। সম্ভাবনাময় ফুটবলের বাজেট কমিয়ে দেন। আগ্রহী হয়ে ওঠেন বক্সিংয়ের প্রতি। জায়ারে ১৯৭৪ সালেই আয়োজিত হয়েছিল মোহাম্মদ আলী ও জর্জ ফোরম্যানের সেই বিখ্যাত বক্সিং লড়াই ‘র‍্যাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’।