Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্ল্যাটারের পদত্যাগে অনিশ্চিত রাশিয়া-কাতার বিশ্বকাপের ভাগ্য

ব্ল্যাটারের পদত্যাগ অনিশ্চিত করে তুলেছে রাশিয়া-কাতার বিশ্বকাপের ভাগ্য। ফাইল ছবি

অনেক প্রশ্ন উঠেছে। উঠবে আরও অনেক প্রশ্ন। কিছু কিছুর উত্তর নিশ্চয়ই মিলবে। কিছু প্রশ্নের উত্তর থেকে যাবে অজানাই। তবে এই মুহূর্তে ফুটবল বিশ্ব সবচেয়ে উদ্বেগের সঙ্গে জানতে চায় এই প্রশ্নের উত্তর: কী ঘটতে চলেছে রাশিয়া ও কাতার বিশ্বকাপের ভাগ্যে?
এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর: রাশিয়াতেই সম্ভবত হতে চলেছে ২০১৮ বিশ্বকাপ ফুটবল, তবে অনিশ্চিত কাতারের ২০২২ বিশ্বকাপের ভাগ্য।
২০১৮ বিশ্বকাপ চেয়েছিল ইংল্যান্ড, ২০২২ বিশ্বকাপ যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের দুই রাজনৈতিক পরাশক্তির দেশ। শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতে তারা হেরে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফুটবলের আবিষ্কর্তা বলে দাবিদার, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল লিগ তাদের, ইংল্যান্ডের ফুটবল সংস্থা এফএরও আছে সুদীর্ঘ ঐতিহ্য। কিন্তু ২০১৮ বিশ্বকাপের ভোটাভুটিতে সবচেয়ে কম ভোট পায় ইংল্যান্ডই। প্রথম দফায় ২২ ভোটের মাত্র দুটি পেয়েছিল তারা, দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটে পায়নি একটি ভোটও। ১৩-৭ ব্যবধানে রাশিয়া হারায় স্পেন-পর্তুগা​ল যৌথ আয়োজকের বিডকে। অন্য দুটি ভোট পায় হল্যান্ড-বেলজিয়ামের যৌথ বিড। সেদিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চার দফায় কাতারের সঙ্গে লড়াই করতে পেরেছে। ১৪-৮ ব্যবধানে জিতে যায় কাতারের বিড।
২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের বিডে হেরে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র। ফিফার সর্বেসর্বা নির্বাহী কমিটির ২২ সদস্য যে দুর্নীতিগ্রস্ত, এটা খুব একটা গোপন তথ্যও ছিল না। ২০১০ সালের অক্টোবরেই সানডে টাইমস ফাঁস করে দেয়, কীভাবে ভোটের কেনাবেচা চলছে। সেই প্রতিবেদনে উঠে আসে, ওশেনিয়ার ফুটবল প্রধান রেনাল্ড তেমারি ১ কোটি থেকে ১ কোটি ২০ লাখ ডলার পাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছেন। আর ফিফার নির্বাহী কমিটিতে থাকা নাইজেরিয়ার আমোস আদামু নিজেই ৮ লাখ ডলার দাবি করেছিলেন নাইজেরিয়ায় চারটি কৃত্রিম টার্ফ বানানোর কথা বলে।
সবাই যে নগদ টাকাই চেয়েছে এমন নয়। নির্বাহী কমিটিতে থাকা প্যারাগুয়ের নিকোলাস লোয়েজের দুটো ‘আবদার’ ছিল। তাঁকে দিতে হবে নাইটহুড, আর ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্ট এফএ কাপের নামকরণ করতে হবে তাঁর নামে! তাহলেই ২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপ বিডিংয়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে তিনি ভোট দেবেন।
ও​দিকে কাতার বিশ্বকাপ নিয়েও ঘুষ দুর্নীতির কম অভিযোগ ওঠেনি। কাতারের ফুটবল প্রশাসক, এক সময় ব্ল্যাটারের সহযোগী ছিলেন মোহাম্মদ বিন হাম্মাম। এশিয়ার ফুটবল কনফেডারেশনেরও প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টাও বিন হাম্মাম।
রাশিয়া–কাতারে বিশ্বকাপ হবে তো?

সেই হাম্মাম ২০১১ ফিফা সভাপতি নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যান ব্ল্যাটারের বিরুদ্ধে। পরে ফাঁস হয়, হাম্মাম খামের মধ্যে কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার ভরে ঘুষ দিয়েছেন। সেই দফায় ব্ল্যাটার অভিযুক্ত সবাইকে ছেঁটে ফেলেন, হাম্মামসহ। কিন্তু রাশিয়া ও কাতার বিশ্বকাপের পক্ষে তাঁর অবস্থান বরাবরই অটল ছিল।

বিশ্বকাপ উপলক্ষে অবকাঠামোখাতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে কাতার। ফাইল ছবি


ফুটবল ঐতিহ্য নেই, বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে এক শর ঘরে পড়ে থাকা কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের পেছনে যে বিশাল অঙ্কের টাকা ঢেলেছে—এ রকম অভিযোগ মাঝে মধ্যেই উঠে আসছিল। কাতার সবচেয়ে বেশি টাকা ঢেলেছে ফিফার তখনকার আরেক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, সহসভাপতি জ্যাক ওয়ার্নারের পেছনে। কাতারি একটি সংস্থা ওয়ার্নারকে দিয়েছে ১২ লাখ ডলার। ওয়ার্নারের ছেলে পেয়েছেন সাড়ে সাত লাখ ডলার। ওয়ার্নারের এক কর্মচারীর নামে বরাদ্দ হয়েছে আরও ৪ লাখ ডলার।
দুর্নীতির অভিযোগ তো ছিলই, ওদিকে দলগুলোও আপত্তি জানাচ্ছিল কাতারের ভয়ানক তাপমাত্রায় কীভাবে গ্রীষ্মকালে ফুটবল বিশ্বকাপ সম্ভব? শেষ পর্যন্ত ব্ল্যাটার আগের অবস্থান থেকে সরে এসে জানান, কাতারে বিশ্বকাপ হবে শীতকালে। ২০২২ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে। কিন্তু এবার বেঁকে বসে ইংল্যান্ড। ইউরোপের লিগগুলো আগস্টের দিকে শুরু হয়ে এপ্রিলের দিকে শেষ হয়। এর মধ্যে বিশ্বকাপ করতে হলে তো সূচিতে প্রচুর রদবদল আনতে হবে। যার প্রভাব পড়বে টিভি সম্প্রচারে, মূল টাকা​টা যেখান থেকে আসে।
গত শুক্রবার পঞ্চম মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর ব্ল্যাটার আবারও জোর গলায় বলেছিলেন, রাশিয়া আর​ কাতারেই হবে বিশ্বকাপ। কিন্তু ব্ল্যাটারের নিজেরই পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই সরে দাঁড়িয়েছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস ফাঁস করেছে, ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ আয়োজনের বিনিময়ে ১ কোটি ডলার ঘুষের অভিযোগের ব্যাপারে জেনেও মিথ্যাচার করেছে ফিফা। এ নিয়ে এখন তদন্ত করছে এফবিআই। সতর্কভাবে এত দিন ঘুটি চেলে আসা ব্ল্যাটার এবার কোণঠাসা। ওদিকে রাশিয়া-কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের পেছনের দুর্নীতি নিয়েও চলছে তদন্ত।
রাশিয়া-কাতার বিশ্বকাপের ভাগ্য এখন নির্ধারণ করবেন ফিফার নতুন সভাপতি। যাঁকে পেতে আরও ছয়-সাত মাস অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। প্রশ্নটা অন্যখানে। একটি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে অবকাঠামোগত যে বিশাল পরিবর্তন আনতে হয়, এর জন্য স্বাগতিক দেশের প্রচুর সময় আর অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। কাতার বিশ্বকাপের বিকল্প আয়োজক বেছে নেওয়ার​ যথেষ্ট সময় থাকলেও রাশিয়া বিশ্বকাপের বিকল্প বেছে নেওয়া কি এত সংক্ষিপ্ত সময়ে সম্ভব?
এ ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বদৌলতে তাদের ফুটবল অবকাঠামো তৈরিই আছে। আর ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের সুবাদে অনেকটাই প্রস্তুত আছে পরিবহন ও আবাসন অবকাঠামোও। তারা বলতে পারে বিশ্বকাপ আমাদের দাও। কিন্তু রাশিয়া সেটি মেনে নেবে কি? এরই মধ্যে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করা রাশিয়ার জন্য সেটি আর্থিকভাবে ভয়ংকর ক্ষতির তো হবেই, তা ছাড়া সেটি হবে রাশিয়ার রাজনৈতিক পরাজয়ও।
ফলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত সমঝোতা আসতে পারে এভাবে—২০১৮ বিশ্বকাপ রাশিয়াতেই হলো, ২০২২ বিশ্বকাপ পেল যুক্তরাষ্ট্র। কিংবা ২০২২ বিশ্বকাপ নিয়ে আয়োজন করা হবে নতুন বিড। কিন্তু ব্ল্যাটারের শেষ মুহূর্তের পদত্যাগ আবারও একই কথা মনে রাখবে পরামর্শ দিচ্ছে, ফিফায় যে নাটক চলছে, তাতে এখনো অনেক ক্লাইম্যাক্স বাকি!