Thank you for trying Sticky AMP!!

মুন্না নেই, ১৫ বছর পর জানলেন রাশিয়ান ঝুকভ

১৯৯২ সালে মোনেম মুন্নার সঙ্গে আবাহনীতে খেলেছিলেন সের্গেই ঝুকভ। ছবি: সংগৃহীত

‘হোয়াট!’

মোনেম মুন্না নেই কথাটি শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লেন বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিদেশি ফুটবলার সের্গেই ঝুকভ। ফোনের ওপর প্রান্তে নীরবতা স্থায়ী হলো বেশ অনেকক্ষণ। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকা ১৫ বছর আগে চলে গেলেও রাশিয়ান ঝুকভের কাছে মুন্নার মৃত্যুর ধাক্কা তো তখনো তাজা। সাবেক সতীর্থের মৃত্যুর সংবাদ বড় একটা ঝাঁকুনি দিল নব্বইয়ের দশকের আবাহনীতে খেলে যাওয়া এই ফুটবলারকে।

বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে খেলে যাওয়া অন্যতম সেরা বিদেশি ফুটবলার বলা হয় ঝুকভকে। কেউ কেউ তো তাঁকেই সেরা বলতে চান কোনো দ্বিধা ছাড়া। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯২ সালে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে খেলতে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন অত্যন্ত উঁচুমানের রুশ ও উজবেক ফুটবলার। ঝুকভকে এনেছিল আবাহনী। স্বদেশি আলেক্সি আরিকিয়েভ ও আলেকজান্ডার পালিনকভ তাঁর সঙ্গী। আবাহনী এনেছে, মোহামেডান চুপচাপ বসে থাকবে কেন! তারাও উড়িয়ে এনেছিল বরিস কুজনেৎসভ, সের্গেই নভিকভ ও আজামত আবদু রহিমভকে। এর মধ্যে রহিমভ ছিলেন উজবেকিস্তানের বড় তারকা।

ঝুকভ কোন মানের ফুটবলার ছিলেন সেটা তাঁর ক্লাব ক্যারিয়ার দেখলেই বোঝা যায়। খেলেছেন রুবেন কাজান, লোকোমোটিভ মস্কো, টর্পেডো মস্কোর মতো ক্লাবে। রাশিয়া জাতীয় দলে খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর। কিন্তু সেটি কোনোভাবেই তাঁর খেলোয়াড়ি মানের নির্ণয়ক নয়। ১৯৯২ লিগে আবাহনীর শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন ঝুকভ। এক মৌসুম খেলেই বাংলাদেশ ছাড়ার পর একেবারেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বর্তমানে রাশিয়ার তৃতীয় বিভাগের দল এফসি স্যাটার্নের কোচের দায়িত্ব পালন করা ঝুকভের।

১৯৯২ সালের আবাহনী ফুটবল দল। ছবি: সংগৃহীত

ঝুকভের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন এই প্রতিবেদক। সাড়া মেলেছে সামান্যই। কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ থেকে যোগাযোগ করার সুবাদে একটু অবাক হয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অনেক দিন পর আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করায় অবাক লাগছে।’ এর পর আবার নীরবতা। অবশেষে ১৭ জুন সাড়া দিলেন। বুধবার রাতে নিজেই ফোন করে ঝুকভ জানতে চাইলেন তাঁর সতীর্থ মুন্নার কথা। বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন বলে ২০০৫ সালে সবাইকে কাঁদিয়ে মুন্নার বিদায়ের কথা জানা ছিল না তাঁর। ধাক্কাটা সামলে নিতে সময় নিলেন, তার পর ভাঙা ইংরেজিতে মুন্নাকে নিয়ে শুধু এতটুকুই বললেন, ‘হি ওয়াজ এ গ্রেট।’

২৮ বছর আগে আবাহনীতে খেলার সুবাদে সেই ক্লাবের ফুটবলারদের সঙ্গেই তাঁর বন্ধুত্ব হয়েছিল। মুন্না ছাড়াও শেখ মোহাম্মদ আসলামের কথা জিজ্ঞেস করলেন। তাঁর জিজ্ঞাসা ছিল আরও একজনকে নিয়ে—গোলাম রব্বানী হেলাল, আবাহনীর সাবেক ফুটবলার ও কর্মকর্তা। মোনেম মুন্নার মৃত্যু সংবাদ যেমন তাঁকে হতবাক করল, তেমনি স্তব্ধ করে দিল হেলালের মৃত্যুও। কয়েক দিন আগেই যে পরপারে চলে গেলেন হেলাল। ঝুকভ প্রস্তুত ছিলেন না হেলালের মৃত্যু সংবাদ নিয়েও। আসলাম ভালো আছেন জেনে অনেকটাই স্বস্তি পেলেন তিনি।

আসলাম নিজেও উচ্ছ্বসিত ঝুকভ তাঁর খোঁজ করেছেন বলে। বাংলাদেশ ছাড়ার পর ঝুকভের সঙ্গে কখনো যোগাযোগ হয়নি আসলামের, ‘প্রায় ২৮ বছর পরও ঝুকভ আমার কথা জিজ্ঞাসা করেছে, খুবই ভালো লেগেছে। ওর সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভালো লাগবে। ’৯২-এর লিগে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে একটা তিন পাসে গোল করেছিলাম। শেষ পাসটা আমাকে বাড়িয়েছিল ঝুকভই। মুন্না, হেলাল ভাই ও আমার সঙ্গে ঝুকভের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। প্রতি সপ্তাহে আমার বাড়িতে আসত।’