Thank you for trying Sticky AMP!!

মেসি থেকে এখন মেসি অ্যান্ড কোং

যেন মাঠেই খেলছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। উত্তেজনা-উচ্ছ্বাস মেসিদের চেয়ে কম কীসে! ছবি: রয়টার্স

মার্কোস রোহোর কাঁধে চড়ে বসেছে লিও মেসি। এক হাত গলায় জড়ানো, অন্য হাত ছুড়ছে আনন্দে-উদ্‌যাপনে। পিঠের ওজন উপেক্ষা করে রোহো আনন্দে দৌড়াচ্ছে, লাফও দিয়ে ফেলল কয়েকটা। শুধু মেসি থেকে দলটা এখন মেসি অ্যান্ড কোং।

খেলোয়াড়েরা নাইজেরিয়ার সঙ্গে যেমন খেলেছে, ওপরের দৃশ্যটা তারই একটা প্রতীক। আর আর্জেন্টিনা এটাই দেখতে চেয়েছিল। যে কিনা নিজের কাঁধে সব সময় পুরো দেশকে বয়ে বেড়ায়, একবারের জন্য হলেও সে বুঝতে পারল, অন্যরা জয়ে অবদান রাখলে সেটার অংশীদার হতে কেমন লাগে। দলগতভাবে সাফল্য অর্জন করলেই তার স্বাদটা সবচেয়ে ভালো অনুভব করা যায়। গ্রুপের শেষ ম্যাচ থেকে নকআউট পর্বে যাওয়ার আগে এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুর্দান্ত এক গোল করে লিও তার কাজটা করেছে। অন্যদের নিজেদের গুরুত্ব প্রমাণ করতে হতো। আমি খুবই আনন্দিত, জয় ছিনিয়ে এনেই তারা সেটা করেছে।

পারফরম্যান্স খারাপ হলে দল নিয়ে নানা ধরনের কথা হয়। সব সামলে রাশিয়ায় টিকে যাওয়াটা আর্জেন্টিনার চারিত্রিক দৃঢ়তার পরীক্ষাই ছিল। কোচ হোর্হে সাম্পাওলির কৌশল প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অবশ্য এটা এমন একটা দিন ছিল, যেদিন পরিকল্পনার নিখুঁত বাস্তবায়নের চেয়েও বেশ কিছুর দরকার ছিল তাদের। এ রকম অবস্থায় থেকে, লড়াই করার অভিজ্ঞতা থেকে আমি এটাকে বলি ‘আগুন’। এই ম্যাচে ছেলেদের কাছে এটাই প্রত্যাশিত ছিল এবং তারা সেটা করে দেখিয়েছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে নিংড়ে নেওয়া এ রকম একটা ম্যাচে, নিজেদের গোল শোধ হওয়ার পর শেষ সময়ের গোলে ম্যাচ জেতার জন্য সত্যিই সাহস লাগে। আর কিছু না হোক, এখন থেকে এই সাহসই তাদের আরও ভয়ংকর করে তুলবে।

শুরুর দারুণ ঝলকটা হারিয়ে যেতে দেখে আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। পেনাল্টি থেকে নাইজেরিয়ার সমতায় ফেরার গোলটা আমাকে আরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। কিন্তু চাপে ভেঙে না পড়ে ছেলেরা সংঘবদ্ধ হয়ে লড়াই করে ফিরেছে। ডিফেন্ডার রোহোর চোখধাঁধানো গোল, এভার বানেগার জীবনের সেরা ম্যাচ, হাভিয়ের মাচেরানোর একই সঙ্গে রক্ষণে সাহায্য এবং আক্রমণ গড়তে ভূমিকা রাখা—এ রকম আরও অনেক উদাহরণ আছে। গোলমুখের শট আটকাতে নিজেদের ওভাবে উজাড় করে দেওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেমন ছিল শক্ত একটা দলের বিপক্ষে নিজেদের আশা বাঁচিয়ে রাখতে ক্লান্তিহীনভাবে লড়ে যাওয়া।

প্রথম দুই ম্যাচে দল হিসেবে এভাবে চেষ্টা করে যাওয়াটাই দেখা যায়নি। আগেও বলেছি, সব সময় লিওর দিকে তাকিয়ে থাকা দলের জন্য ভালো নয়। দলের এই ‘অতিনির্ভরতা’ ট্যাগ থেকে বেরিয়ে আসতে দেখাটা চিত্তাকর্ষক ছিল। শুধু সুযোগ তৈরির বাইরেও ছোট ছোট খণ্ডযুদ্ধ ছিল, যা জিততে হতো। মাচেরানোর গাল বেয়ে ঝরে পড়া রক্তই দেখিয়েছে সেই যুদ্ধ কতটা কঠিন ছিল। আফ্রিকান দলটা অনেক গোছানো ছিল এবং নিজেদের রক্ষণভাগের প্রতিটি ইঞ্চির জন্য তারা লড়াই করেছে। আর্জেন্টিনা কৌশলগতভাবে দারুণ একটা ম্যাচ খেলেছে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে। নাইজেরিয়া আমাদের রক্ষণকে কখনোই একটানা বেশিক্ষণ চাপে রাখতে পারেনি।

আমি জানি, এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এই দল ফ্রান্সের বিপক্ষে কেমন করবে। আমার কথা হলো, সেই ম্যাচটার আরও কয়েকটা দিন বাকি। মাত্রই ওরা চাপে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার মতো একটা পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং সেটা মাথা উঁচু করেই। এ রকম কঠিন ম্যাচের পর স্বাভাবিক হতেও খানিকটা সময় লাগে। এখনই পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবার কোনো দরকার নেই। শরীর ও মনকে শান্ত হতে দেওয়া দরকার। খেলোয়াড়েরা জানে, সামনে কী অপেক্ষা করছে। চাপটা তো একটু হলেও সরেছে, এখন ওরা স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারবে। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পর অন্য দলগুলো মেসি ও তার দলকে নিশ্চয়ই আরেকটু বেশি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে।