Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশের বিপক্ষে ফাইনালে গোলের পর নেপালের ফুটবলাররা।

যেখানে এগিয়ে নেপালের ফুটবল

ফুটবলে কাছাকাছি শক্তির দলই বলা যায় বাংলাদেশ আর নেপালকে। কিন্তু খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত স্কিল, ফিটনেস, দলীয় পারফরম্যান্সের সূচকগুলো তুলনা করলে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে নেপালের এগিয়ে যাওয়াটা ভালোই চোখে পড়ে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের পর যে আর কখনোই র‌্যাঙ্কিংয়ে নেপালকে টপকাতে পারেনি বাংলাদেশ!

সর্বশেষ দুটি দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে নেপালের টানা সোনা জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জন দুটি ব্রোঞ্জ। বাংলাদেশে ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নেপাল। একই বছর এএফসি সলিডারিটি কাপেরও শিরোপা জিতেছে তারা। চলমান বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের ১ পয়েন্টের বিপরীতে নেপালের পয়েন্ট ৩।

একাডেমিভিত্তিক ফুটবল অবকাঠামো গড়ে তুলেই এগিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি দেশটি। কাঠমান্ডু, ধারান ও ভুটালে তিনটি একাডেমি গড়েছে তারা। পোখারায় চলছে আরও একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠার কাজ।

ফিফার আর্থিক সহায়তায় ১৯৯৯ সালে ৪০ জন ছাত্র নিয়ে প্রথম আনফা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয় কাঠমান্ডুতে। আনফা ভবনের পাশে চারতলা একাডেমি ভবনটি যেন নেপাল ফুটবল উন্নয়নের বিজ্ঞাপন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ধারান ও বুটালের একাডেমিতে চলছে খেলোয়াড় তৈরির কার্যক্রম। স্থানীয় কোচদের তত্ত্বাবধায়নে অনুশীলন করছে ১৬ বছর বয়সী ৫৯ জন ফুটবলার।

দুই বছর পরপর বিভিন্ন জেলা থেকে বাছাই করা অনূর্ধ্ব–১৪ বছর বয়সী ছেলেদের এনে প্রশিক্ষণে রাখা হয় ৫ বছর। প্রতিটি একাডেমির পেছনে গড়ে বছরে ৬০ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় হয় বলে জানান আনফার সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রমান তুলাধার।

নেপাল জাতীয় দলের বেশির ভাগ ফুটবলার উঠে এসেছেন একাডেমি থেকে।

নেপাল জাতীয় দলের ৮৫–৯০ ভাগ ফুটবলার আসে এখান থেকেই। কিরণ চেমজং, রোহিত চাঁদ, বিমল ঘাতরিরা উঠে এসেছেন এই একাডেমি থেকেই। দক্ষিণ এশিয়া ছাপিয়ে এখন ইন্দোনেশিয়ার লিগ মাতাচ্ছেন রোহিত। টানা তিন বছর ধরে ইন্দোনেশিয়ান লিগে খেলা এই ফুটবলার সেখানকার লিগের সেরা বিদেশি খেলোয়াড়ও হয়েছেন।

গোলরক্ষক কিরণ নেপাল ছাড়াও নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারতের আইলিগের দল রাউন্ডগ্লাস পাঞ্জাবকে। প্রথম আলোকে কিরণ বলছিলেন, ‘একাডেমির ছাত্র না হলে আমি হয়তো এ পর্যন্ত আসতেই পারতাম না। সবাই বলেন, আমার ফুটবলের মৌলিক কৌশলগুলো ভালো। সেটা সম্ভব হয়েছে একাডেমির জন্যই।’

বাংলাদেশে ফুটবলাররা খেলতে খেলতেই চলে আসেন জাতীয় দলে। একজন স্ট্রাইকার বা মিডফিল্ডার হওয়ার মৌলিক গুণগুলো কী, অনেক সময় সেসবও তাঁরা জানেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে আসার পর। জাতীয় দলের বিদেশি কোচিং স্টাফের পেছনে মাসে প্রায় ৩৫ হাজার ডলার খরচ করেও তাই লাভের অঙ্ক সামান্য। অথচ মাত্র ২ হাজার ডলারের স্থানীয় কোচিং স্টাফ নিয়েই ভালো ফলাফল পাচ্ছে নেপাল। বিদেশি কোচ থাকলেও তাদের সেই খরচ গিয়ে দাঁড়ায় সাকল্যে ৭ হাজার ডলারে।

একাডেমিভিত্তিক ফুটবল অবকাঠামো গড়ে তুলেই এগিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি দেশটি।

বাংলাদেশ ও নেপালে খেলা এবং কোচিং করানোর সুবাদে দুই দেশের খেলোয়াড়দের পার্থক্যটা বোঝেন নেপাল জাতীয় দলের কোচ বাল গোপাল মহারজন, ‘কৌশলে বর্তমান সময়ে আমাদের ফুটবলাররা বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে।’ যদিও তাঁর চোখে নেপালের লিগের চেয়ে বাংলাদেশের লিগ অনেকটাই এগিয়ে।

নেপাল কোচের কথাটা হয়তো ভুল নয়। উঁচু মানের বিদেশি খেলোয়াড়দের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগের মান নেপালের তুলনায় অন্তত ভালো। এএফসি ক্লাব রেটিংয়ে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে ২০, সেখানে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে নেপাল ৩৫তম। কিন্তু পার্থক্যটা ফুটে ওঠে জাতীয় দলে আসার পর। আর সেটি হয়তো তৈরি হয়ে যায় নেপালিদের কাঠামোভিত্তিক ফুটবলীয় শিক্ষার কারণেই।