Thank you for trying Sticky AMP!!

রিয়ালের সমস্যার নাম 'রোনালদো' নয়

চিন্তার ভাঁজ লোপেতেগির কপালে পড়াই স্বাভাবিক। ছবি: রয়টার্স

রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছেন রোনালদো। কিন্তু কেন যেন রিয়াল মাদ্রিদের পিছু ছাড়ছেন না রোনালদো। মৌসুমের শুরুতে দারুণ খেলা দেখালেও ঘুরে–ফিরে আবারও বাজে ফর্মে ফেরত এসেছে রিয়াল মাদ্রিদ। আবারও ঘাড়ে চেপে বসেছে রোনালদো প্রসঙ্গ। রিয়াল মাদ্রিদের এ অবস্থার কারণ কি তবে রোনালদো? আরও পরিষ্কার করে বললে রোনালদোর রেখে যাওয়া শূন্যতা?

কোচ লোপেতেগির অধীনে নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে রিয়াল। রোনালদোময় ৯ বছর কাটিয়ে নতুন করে শুরু করেছে লস ব্লাঙ্কোরা। ডাগ–আউটের পরিবর্তন তো রোনালদোর দলবদলের আগেই নিশ্চিত হয়েছে। জিনেদিন জিদানের বদলে হুলেন লোপেতেগি আসার কারণে রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলও আপাদমস্তক পাল্টে গিয়েছে। ডিরেক্ট ফুটবলের জগৎ থেকে একেবারে পজেশনাল ফুটবলে প্রবেশ করেছে রিয়াল মাদ্রিদ।

রিয়াল মাদ্রিদের আগের খেলার ধরনের সঙ্গে এখনকার খেলার তুলনা করলে অনেকেই হতাশ হবেন। জিদানের সময়ে খেলায় থাকত দুই উইং কিংবা মাঝমাঠ ব্যবহার করে আক্রমণাত্মক ফুটবল। প্রতিটি মুহূর্তে প্রতি–আক্রমণ করে দলকে গোল এনে দেওয়ার প্রচেষ্টা, সেটা এখন আর দেখা যায় না। সাধারণ চোখে রিয়ালের খেলা এখন অনেকটাই ধীর হয়ে গিয়েছে। রিয়ালের ডিএনএর অংশ সেই প্রতি আক্রমণ–নির্ভর আক্রমণ আর দেখা যাচ্ছে না লোপেতেগির অধীনে। ধীরেসুস্থে আক্রমণ সৃষ্টির চেষ্টা চলে এখন, সে কারণেই হয়তো বা গোল পাওয়ার গতিও ধীর হয়ে গেছে।

অ্যাসেনসিও-সেবায়োসের ওপরেই ভরসা করতে হচ্ছে সকলকে। ছবি: রয়টার্স

রিয়াল মাদ্রিদ তাদের খেলার মাঝে পুরোপুরি পজেশনাল ফুটবলকে টেনে নেয়নি। সেই সঙ্গে প্রতি–আক্রমণের মিশেল দেওয়ার চেষ্টাও করেছেন লোপেতেগি। কিন্তু প্রথম চার ম্যাচের পরই দল তালগোল পাকিয়ে ফেলছে এখানেই। প্রথম ম্যাচেই নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে ৪-২ গোলে হারে উয়েফা সুপার কাপে। কিন্তু এরপর টানা তিন ম্যাচ জয় পেয়েছে লোপেতেগির অধীনে। এরপর অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে ড্র করে তারা। সে ম্যাচেই প্রথম ইসকোকে মাঠের বাইরে রেখে খেলতে নামে রিয়াল।

লোপেতেগির মূল সমস্যাটা শুরু হয় ইসকোর চোট পাওয়া থেকে। ইসকো চোটে পড়ার পর মাত্র একটি ম্যাচে জয় পেয়েছে দল। এসপানিওলের বিপক্ষে ম্যাচে অ্যাসেনসিওর একমাত্র গোলে সে ম্যাচে জয় পায় রিয়াল মাদ্রিদ।

রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিটি ম্যাচ লক্ষ করলে দেখা যায় প্রচুর পাসিং। ম্যাচের শুরু থেকেই ফুটবলীয় ভাষায় পজেশনাল ফুটবল। পজেশনাল ফুটবল হলো বলের ওপর আধিপত্য রেখে খেলা। বল সব সময় পায়ে রাখা হচ্ছে মূল বিষয়। কিন্তু রিয়াল সেটা করতে গিয়ে বল নিয়ে ব্যাকপাস করে ডিফেন্স পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বল যদি নিজেদের খেলোয়াড়দের পায়ে থাকে, তবে বল নিজেদের কাছে রেখে ছোট ছোট পাসে আস্তে আস্তে পেছানো বা সামনে এগিয়ে যাওয়া। আর বল যদি বিপক্ষ দলের কোনো খেলোয়াড়ের পায়ে চলে যায়, তবে বলের জন্য নিচে নেমে যাওয়া না, বরং বলের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। কোচ লোপেতেগির ট্যাকটিকস এমনই। বলের জন্য ক্রমাগত আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা প্রেস করতে থাকবে এবং প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগ নিয়ে বা বল কেড়ে নিয়ে আরেকটা আক্রমণ করবে। এই হচ্ছে কোচ লোপেতেগির অধীনে রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান খেলার বৈশিষ্ট্য।

আক্রমণভাগের কাছ থেকে গোল আসেনি ৪১৯ মিনিট। ছবি: রয়টার্স

কিন্তু রিয়াল বল নিজেদের রক্ষণে নিয়ে যাওয়ার পর আর দ্রুত আক্রমণে যাচ্ছে না। কারণ বল দ্রুত আক্রমণে ফিরে আসছে না। এতে প্রতিপক্ষ নিজেদের রক্ষণ গুছিয়ে নেওয়ার সময় পাচ্ছে। পরে রামোস ও অন্য ডিফেন্ডাররা আক্রমণে সহযোগিতা করতে গিয়ে অনেক ওপরে উঠে যাচ্ছেন। প্রায় ম্যাচেই রিয়ালের রক্ষণের এই শূন্যস্থান ব্যবহার করে প্রতিপক্ষ গোল দিচ্ছে। আর প্রতিপক্ষ দল যখন একটি গোল পেয়ে যায়, তখন তারা রিয়াল মাদ্রিদকে প্রেস করে না, বরং মনোযোগ দেয় রক্ষণে। এমন পরিস্থিতিতেই দরকার হয় এমন এক খেলোয়াড়ের যিনি একাই প্রতিপক্ষের দুই তিনজনকে বাধ্য করেন তাঁর সঙ্গে সেটে থাকতে। দলকে এনে দেন প্রতিপক্ষের ডি–বক্সের অতিগুরুত্বপূর্ণ স্পেস।

এ কারণেই লোপেতেগির কৌশলেই ইসকোর গুরুত্ব এত বেশি। এখন তাঁর পরিবর্তে দলে আসা দানি সেবায়োস দুর্দান্ত খেলছেন। মাঠে গত কয়েক ম্যাচেই রিয়ালের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন এই মিডফিল্ডার। কিন্তু ইসকোর ভূমিকা পালন করা সম্ভব না তাঁর পক্ষে। পাসিং ফুটবলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলেও ড্রিবলিংয়ের মায়াজালে প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করতে পারছেন না সেবায়োস। সে কাজটা করার ক্ষমতা আর একজনেরই আছে, সেই অ্যাসেনসিও ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ায় আরও বিপদে পড়েছেন লোপেতেগি। আর ডিফেন্স ভাঙার মতো কেউ নেই, আক্রমণভাগেও কেউ সুবিধে করতে পারছেন না। না বেনজেমা, না মারিয়ানো। বেলের অবস্থাও তথৈবচ!

রোনালদো থাকার সময়ও রিয়াল মাদ্রিদ হেরেছে, এর চেয়েও বাজে হার। রোনালদোর বিদায় রিয়াল মাদ্রিদের ওপর অনেক বড় প্রভাব ফেলবে যেমন সত্যি, তেমনি এই সমস্যা থেকে রিয়াল মাদ্রিদকে বের হতে হবে রোনালদোকে ছাড়াই। রোনালদো–নির্ভরতা দল থেকে বের করতে গিয়ে লোপেতেগি হয়তো অজান্তেই ইসকো–নির্ভর এক দল বানিয়ে ফেলেছেন। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজে বের করে নিতে হবে তাঁকেই। কারণ, এর আগের মৌসুমেও দুর্দান্ত শুরুর পর ফর্ম হারিয়ে ফেলেছেন ইসকো, এ ছাড়া চোট তো আছেই। শুধু একজন ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডার না থাকলে দল ভালো খেলবে না, এতটা বাজে অবস্থা নিশ্চয় রিয়ালে গ্রহণযোগ্য নয়!