Thank you for trying Sticky AMP!!

রিয়াল না বার্সা: কে কোথায় এগিয়ে, পূর্বানুমান

মুখোমুখি মেসির বার্সা ও বেনজেমার রিয়াল। ছবি: র‍য়টার্স।

বাংলাদেশ সময় আজ রাত ২টায় রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে স্প্যানিশ লিগ মৌসুমের দ্বিতীয় এল ক্লাসিকোতে মুখোমুখি হবে দুই ক্লাব। গত নয় মৌসুমে আটবারই শিরোপা গেছে এই দুই ক্লাবের কারও না কারও ঘরে, এবারও শিরোপাদৌড়ের ভাগ্য লিখে দিতে পারে আজকের ম্যাচই।

লিগে বাকি আর ১৩ ম্যাচ। তাতে আজকের ম্যাচের আগে ২৫ ম্যাচে ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে বার্সা পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে, ২ পয়েন্ট পিছিয়ে পয়েন্ট তালিকায় দুইয়ে রিয়াল। ম্যাচের আগে দুই দল কোথাও এগিয়ে, কোথায় পিছিয়ে এসব নিয়ে আলোচনা করেছেন বিশ্বখ্যাত দুই স্প্যানিশ ফুটবল বিশেষজ্ঞ গ্রাহাম হান্টার ও সিড লো।

ফর্ম কার কেমন
হান্টার: দু-তিন সপ্তাহ আগেও বলতাম মাদ্রিদ লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে। কিন্তু এখন খুব সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছে বার্সেলোনা। এখনো খুব যে দারুণ ছন্দে আছে বার্সা তা নয়, কিন্তু সম্প্রতি কয়েকটা ভালো ফলের কারণে ওদের মানসিকতা ইতিবাচকই থাকবে। মাদ্রিদের ব্যাপারটা অদ্ভুত। হঠাৎ করেই, কোনো পূর্ব সংকেত ছাড়াই ওরা মৌসুমের মাঝপথের সেই দারুণ অ্যাথলেটিক দলটা আর নেই এখন। ভিনিসিয়ুস, ফারলাঁ মেন্দি, থিবো কোর্তোয়া, রাফায়েল ভারান, ফেদেরিকো ভালভার্দে—এ কজন ছাড়া জিদানের দলের বাকিরা হঠাৎ করেই প্রত্যেকটা চ্যালেঞ্জে, প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় ধীর গতির হয়ে পড়েছে।

একটু এগিয়ে থাকলে সেটি এখন বার্সাই। লিওনেল মেসি গোল বানিয়ে দিয়েই চলেছে, এমনকি যখন নিজের সেরা ছন্দে খেলছে না তখনো। এইবারের বিপক্ষে গত সপ্তাহে গোল করার স্পর্শটাও খুঁজে পেয়েছে ও। মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন দারুণ ছন্দে, আর্থুরও ছন্দে ফিরে এসেছে, আঁতোয়ান গ্রিজমান ক্লান্তিহীন কাজ করে যায়। আর মার্টিন ব্রাথওয়েইটের আগমন বার্সার জন্য টনিক হয়েই কাজ করবে। ওর শারীরিক শক্তি ভালো, গতি আছে, দলের জন্য খেলে, আর বার্সা ওর কাছে স্বপ্নের মতো। বার্সেলোনার অবশ্যই দুর্বলতা আছে। লেফটব্যাকে জুনিয়র ফিরপোকে যোগ্য মনে হয় না।

ক্লাসিকো বড় খেলোয়াড়দের সেরা দিকটা বের করে আনে বলে রিয়াল নিজেদের মাঠে জিততেই পারে, তবে বার্সাই একটু এগিয়ে থেকে মাঠে নামবে।

লো: রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি হোর্হে ভালদানো ম্যাচটাকে দুই খোঁড়ার দৌড়ের সঙ্গে তুলনা করেছে। দুই দলের কেউই এই মুহূর্তে সেরা ছন্দে নেই। এক সপ্তাহ আগে রিয়াল সহজেই লিগ জিতবে মনে হচ্ছিল, কিন্তু এখন অবস্থা পাল্টে গেছে। তবে বার্সেলোনাও সহজেই জিতবে বলে মনে হয় না।

চ্যাম্পিয়নস লিগ দুই ভিন্ন ধরনের ফল নিয়ে এসেছে। নাপোলির মাঠে বার্সার ১-১ ভালো ফল, নিজেদের মাঠে ম্যান সিটির কাছে রিয়ালের ২-১ গোলের হার তা নয়। কিন্তু দুই দলেই যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে, এমন একটা ভাব আছে। লিগের পয়েন্ট তালিকায় দুই পয়েন্ট এগিয়ে থাকায় বার্সার হয়তো রিয়ালের মতো জয়ের তাড়না থাকবে না, তাতে সব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেয়ে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার দিকে মনোযোগ দিতে পারবে ওরা। আর মাদ্রিদের গত বছর এই সময়ে এক সপ্তাহের মধ্যে তিন টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে পড়ার স্মৃতিটা এখনো টাটকা। গার্দিওলা (সিটি কোচ) এসে জিতে চলে গেছে, মাদ্রিদের জন্য এই মুহূর্তে মেসির মুখোমুখি না হতে হলেই ভালো হতো। তবে রিয়াল মাদ্রিদ নিজেদের মাঠে খেলছে, এটাও মাথায় রাখতে হবে।

বার্সেলোনা কীভাবে চোট সমস্যা সামলাবে?
হান্টার: আমার মনে হয় চ্যাম্পিয়নস লিগে নাপোলির মাঠে খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়লেও জেরার্ড পিকে এই ম্যাচটা খেলবে। সেতিয়েনের জন্য সুখবর, স্যামুয়েল উমতিতি ধীরে ধীরে হলেও ছন্দে ফিরছে। বার্সেলোনার চোট সমস্যা সেতিয়েনকে কোন কোন দিকে ভোগাচ্ছে, সেটিকে তিন ভাগে ভাগ করা যাবে। এক, লেফটব্যাকে জুনিয়র ফিরপোকে দেখে মনে হয় ও নিজেকে হারিয়ে খুঁজছে। বার্সা সে ক্ষেত্রে নেলসন সেমেদোকে লেফটব্যাকে খেলিয়ে মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচকে রাইটব্যাকে খেলাতে পারে? আমি তা-ই করতাম।

দুই, সেতিয়েনের বেঞ্চে বিকল্প খুব কম। রোববার রাতের আগে আর একটি বা দুটি বড় চোট হলেই সেতিয়েনের জন্য পর্যাপ্ত বিকল্প পাওয়া আর সহজ হবে না। তিন, বার্সেলোনার সিনিয়র খেলোয়াড়েরা যে বার্তাটা বারবার দিচ্ছেন, সেটি হলো, দল নিয়ে ক্লাবের পরিকল্পনা খুব বাজে। বিশেষ করে জানুয়ারিতে ডিফেন্ডার জাঁ ক্লেয়ার তোদিবো আর রাইটব্যাক মুসা ওয়াগেকে ছেড়ে দেওয়ায় দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়কেই বাড়তি খাটতে হচ্ছে। মৌসুমের একটা পর্যায়ে এই বয়স, বেশি খেলা, ক্লান্তি ভোগাবে। অনেক বেশিই ভোগাবে।

লো: কঠিন হবে সামলানো। বার্সেলোনার ভাগ্য খারাপ। উসমান ডেম্বেলে বা লুইস সুয়ারেজের মতো দীর্ঘমেয়াদি চোটের ক্ষেত্রে তো আর পরিকল্পনা খাটে না। তবে কিছু ঝামেলা ওদের নিজেদেরই তৈরি করা। বার্সেলোনা আর পরিকল্পনা এখন হাতে হাত ধরে এগোয় না। এখন সবকিছু সেতিয়েনের ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলোয়াড়দের খেলানো দরকার, তবে সে হিসেব অন্য কোনো দিন হবে। ক্লাসিকোতে এসব হিসেব চলে না। বার্নাব্যুতে ওদের সবচেয়ে শক্তিশালী দলই খেলবে। এই ম্যাচের পর সাত দিন বিশ্রাম তো আছেই। সেটা বার্সার দরকারও।

মেসির বাইরে ম্যাচে স্পটলাইট কেড়ে নেওয়ার মতো কেউ?
হান্টার: ভিনিসিয়ুস। আশা করি জিদান ওকে শুরু থেকেই খেলাবে। বাচ্চা ছেলেটার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে গোলমুখে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ায় হয়তো সমস্যা আছে, কিন্তু সেটা অভিজ্ঞতায় ঠিক হয়ে যাবে। এখানে প্রতিভার ঘাটতির কিছু নেই। জিদানের কাছ থেকে নিয়মিত আলাদা টিউশন পেয়ে ১৯ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ানের উন্নতিও স্পষ্ট। ওর গতি আর বলের নিয়ন্ত্রণ তো অসাধারণ।

লো: বেনজেমা, যে কিনা ২০২০ সালে মাত্র এক গোল করেছে, হয়তো নজর কাড়তে পারে। ওর বড় একটা পারফরম্যান্স দরকার। সেই প্রতিভাও আছে ওর। ভিনিসিয়ুস ম্যাচে রোমাঞ্চ ছড়ায়। একই সঙ্গে বিনোদন দেয়, হতাশও করে। গ্যারেথ বেলও আছে। মাঝে মাঝে মনে হয় সবাই ওর ব্যাপারে হাল ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু ওর বড় ম্যাচ পছন্দ। গ্রিজমানও থাকতে পারে পাদপ্রদীপের আলোয়।

হ্যাজার্ডকে মিস করবে রিয়াল?
হান্টার: হ্যাজার্ড বিশেষ একজন। প্রতিপক্ষকে চরকিনাচন নাচায়। যদিও মৌসুমের বেশির ভাগই মাঠের বাইরে ছিল সে, কিন্তু ওর না থাকা রিয়ালের জন্য বেশ কয়েকভাবেই ক্ষতির। বেনজেমা এখন আক্রমণে একলা হয়ে পড়ছে। হ্যাজার্ড শুধু বিশেষই নয়, সে আর করিম বেনজেমা ফুটবলটাকে একইভাবে দেখে। দুজনের টেকনিক, দৌড় শুরুর সময় মিলিয়ে মাদ্রিদের বাঁ দিকে একটা জুটির মতো গড়ে উঠেছে। কিন্তু মাদ্রিদ ওকে ছাড়া চলতে পারবে? অবশ্যই। মৌসুমের যে সময়টায় মাদ্রিদ সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল, তখনো কিন্তু মাদ্রিদ এডেনের ফেরার অপেক্ষায় ছিল।

লো: এরই মধ্যে ওকে ছাড়া মাদ্রিদ মানিয়ে নিয়েছেই। লেভান্তে (গত সপ্তাহে লিগে) আসার আগ পর্যন্ত ওকে ছাড়াই ১৫ ম্যাচ অপরাজিত ছিল। ওকে মিস করবে কি না? হয়তো। ও না থাকায় আক্রমণে কিছু অভাব থেকে যায় না? কোনো সংশয় নেই। ও কি দলের কাজে আসতে পারত, ম্যাচের তারকা হতে পারত? অবশ্যই। আর এখানে হার-জিতের ব্যবধানটা এত সূক্ষ্ম যে ওর অবদান হয়তো পার্থক্য গড়ে দিত।

ম্যাচের ফল কী হতে পারে:

হান্টার: আমার মনে হয় মাদ্রিদ ৩-২ গোলে জিতবে। ইয়োভিচ ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারে।

লো: মজা করছেন, তাই না? এই ম্যাচের পূর্বানুমান কখনোই করা ঠিক নয়। তাই নিরাপদ পথেই হাঁটছি। ২-২।