Thank you for trying Sticky AMP!!

রোনালদোর পেছনে 'অপচয়' ৩ হাজার কোটি টাকা!

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পরশু জুভেন্টাসের হারের পর। ছবি: এএফপি

গত বছর জুলাইয়ের কথা। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে হারানোয় মাদ্রিদে ঠিক শোক নয়, বিরহ দহন চলছিল। অন্যদিকে তুরিনে উৎসব। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে শহরটির সেরা ক্লাব জুভেন্টাস যে উড়িয়ে এনেছিল ওই টুর্নামেন্টের ‘রাজা’ রোনালদোকে। সংবাদমাধ্যমেও আগেভাগে ফলাও করে লেখা হলো, ‘ইতালি জয় করেছেন রোনালদো’। প্রায় নয় মাসের ব্যবধানে কী দেখা যাচ্ছে? রোনালদো কি সত্যি সত্যিই ইতালি জয় করতে পেরেছেন, নাকি জুভেন্টাসের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা অপচয় করছেন?

প্রশ্নটি এখন উঠছে। রোনালদোর হ্যাটট্রিকে শেষ ষোলো থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে জুভেন্টাস। কোয়ার্টার থেকে কাল রাতে জুভেন্টাস ছিটকে পড়লেও দুই লেগেই গোল করেছেন রোনালদো। কিন্তু তারপরও প্রশ্নটি উঠেছে। সেটি জুভেন্টাসের সঙ্গে রোনালদোর চুক্তিপত্রের বিপরীতে সাফল্যের তুলনা করে।

জ্যাক বাকলির সেই টুইট। ছবি: টুইটার

চার বছরের চুক্তিতে গত জুলাইয়ে জুভেন্টাসে যোগ দেন রোনালদো। পাক্কা ১০০ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি দিয়ে তাঁকে কিনেছে ইতালিয়ান ক্লাবটি। বছরে এখানে তাঁর পারিশ্রমিক ৩০ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ শুধু রোনালদোর পারিশ্রমিক বাবদ এই চার বছরেই জুভেন্টাসের খসবে ১২০ মিলিয়ন ইউরো। আর ইতালিতে খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিকের সমান কর দিতে হয় ক্লাবগুলোকে। এই হিসেবে রোনালদোর পারিশ্রমিকের সঙ্গে কর বাবদ খরচ হিসেবে যোগ হচ্ছে আরও ১২০ মিলিয়ন ইউরো। পারিশ্রমিক ও কর মিলিয়ে অঙ্কটা ২৪০ মিলিয়ন ইউরো। সঙ্গে ট্রান্সফার ফির ১০০ মিলিয়ন ইউরো যোগ করলে রোনালদোর পেছনে জুভেন্টাসের মোট খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪০ মিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ৩ হাজার ২৪২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

জুভেন্টাসে এ সময়ে রোনালদোর অর্জন বলতে গত বছর ইতালিয়ান সুপার কোপা জয়। হ্যাঁ, জুভেন্টাস এবারও লিগ জয়ের পথেই রয়েছে। সে তো আগের সাত মৌসুমেও দলটি টানা জিতেছে। লিগ জিততে তো আর রোনালদোকে দলে টানেনি জুভেন্টাস। পাঁচবারের বর্ষসেরা তারকার পেছনে জুভেন্টাস এত টাকা খরচ করছে মোক্ষধাম চ্যাম্পিয়নস লিগের জয়ের জন্য। কিন্তু প্রথমবারেরই জুভেন্টাসের সেই স্বপ্নভঙ্গ হলো। আর রোনালদোও এমন জায়গা থেকে ছিটকে পড়লেন, গত নয় বছরের মধ্যে যেখানে কখনো তাঁকে কেউ আটকাতে পারেনি। ২০১০ সালে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকে ছিটকে পড়েছিলেন রোনালদো। এরপর এই নয় বছরে এবারই প্রথম তাঁকে সেমিফাইনালে দেখা যাবে না। মাঝের এই সময়ে প্রতিবারই অন্তত সেমিফাইনালে খেলেছেন রোনালদো।

অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় ইউটিউবার, উপস্থাপক ও ধারাভাষ্যকার জ্যাক বাকলি তাই টুইটারে প্রশ্নটি তুলেছেন। তাঁর টুইট, ‘রোনালদো টানা ছয়বার সিরি ‘আ’ জয়ী দলে যোগ দিয়ে কোপা ইতালিয়া থেকে ছিটকে পড়েছে। গত নয় বছরের মধ্যে আগেভাগেই ছিটকে পড়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকেও। আর এখন গোল্ডেন বুট জয়ের দৌড়েও হেরে যাচ্ছে ৩৭ বছর বয়সীর কাছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যা শুনছি, “রোনালদো ইতালি জয় করেছে”।’

কার্লো গারগানেজের টুইট। ছবি: টুইটার

বাকলি তাঁর এই টুইটে ৩৭ বছর বয়সী বলতে সম্ভবত ফ্যাবিও কোয়াগলিয়ারেল্লাকে ইঙ্গিত করেছেন। ৩৭ বছরে পা রাখা সাম্পদোরিয়ার এই ফরোয়ার্ড সিরি ‘আ’-তে ২২ গোল করেছেন। আর রোনালদোর গোলসংখ্যা ১৯। শুধু বাকলি নন, প্রশ্ন তুলেছেন ফুটবলবিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গোল ডট কমের ফিচার বিভাগের বৈশ্বিক প্রধান কার্লো গারগানেজও। টুইটে জুভেন্টাসকেও দুষেছেন তিনি, ‘ক্লাবেরও দোষের ভাগ নেওয়া দরকার। রোনালদোর পেছনে তারা ৩৪১ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে, নকআউট পর্বে সে ভালোই করেছে, তবে তা সন্তুষ্ট হওয়ার মতো নয়।’

প্রশ্ন বলুন আর ভ্রুকুটি বলুন, কথাটা তাই উঠছেই। পঁয়ত্রিশে পা রাখা রোনালদোকে নিয়ে এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়ল জুভেন্টাস। বয়সের ভার বিচার করলে পরের মৌসুমে এর চেয়ে ভালো কিছু ঘটা কিংবা রোনালদোর ঘটানোর সম্ভাবনা কমই বলা চলে। তাহলে রোনালদোর পেছনে জুভেন্টাসের তিন হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করা অপচয় ছাড়া আরকি?